২০২৪ সাল বা ১৪৪৫ হিজরির পবিত্র হজ প্যাকেজের খরচ কমিয়ে ৪ লাখ টাকা নির্ধারণ করতে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) রেজিস্ট্রি ডাকযোগে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর এই নোটিশ পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আশরাফ-উজ জামান।
এ ব্যাপারে আইনজীবী আশরাফ-উজ জামান বলেন, সরকার সাধারণ হজ প্যাকেজ ৫ লাখ ৭৮ হাজার ৮৪০ টাকা নির্ধারণ করেছে। আর বিশেষ প্যাকেজ ৯ লাখ ৩৬ হাজার ৩২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। নোটিশে হজের মোট খরচ ৪ লাখ টাকায় সীমাবদ্ধ রাখতে বলা হয়েছে। হজের মতো একটি ফরজ ইবাদতের অতিরিক্ত মূল্য নির্ধারণ করা বাধা সৃষ্টির নামান্তর।
নোটিশ পাওয়ার পাঁচ দিনের মধ্যে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। অন্যথায় এর প্রতিকার চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হবে জানান আইনজীবী আশরাফ-উজ জামান।
চলতি বছরের ৮ নভেম্বর ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ অনুবিভাগ থেকে হজ প্যাকেজ (হিজরি-১৪৪৫/ খ্রিস্টাব্দ ২০২৪/০) গেজেট আকারে জারি করা করা হয়।
আইনি নোটিশে বলা হয়, ২০২৪ সালের হজ প্যাকেজের (হিজরি-১৪৪৫) হজযাত্রী প্রতি খরচ অত্যন্ত অযৌক্তিক ও মানুষের নাগালের বাইরে। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের গেজেটে মক্কা ও মদিনায় বাড়ি ভাড়া বাংলাদেশি টাকায় ১ লাখ ৬৯ হাজার ৪১০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা অনেক বেশি। এতে বোঝা যায় যে, সরকার হজযাত্রীদের সঙ্গে প্রতারণা করে বাড়ির মালিকদের অনুকূলে বাড়ি ভাড়া নির্ধারণ করেছে।
গেজেটে বাসের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৬ হাজার ৮৩৪ টাকা। যা অত্যন্ত অতিরিক্ত। এটা হজযাত্রীদের সঙ্গে প্রতারণা। আর জমজমের পানির বিক্রয় মূল্য নির্ধারণ করা খুবই আপত্তিকর। এই বরকতময় পানি বিক্রি করে কোনো সরকার আর্থিক সুবিধা নিতে পারে না।
সৌদির মিনা-আরাফাহ-মুজদালিফা ও মিনায় পাঁচ দিন থাকার জন্য সার্ভিস চার্জ বাংলাদেশি টাকায় ৬২ হাজার ২৭১ টাকা নির্ধারণ করা হয়, যা অতিরিক্ত। হজযাত্রীদের ওপর এ ধরনের অর্থ আরোপ প্রমাণ করে যে, বাংলাদেশ বা সৌদি সরকার মহান আল্লাহর মেহমানদের কাছ থেকে অর্থ উপার্জনে খুবই আগ্রহী।
তাছাড়া, এ বছরের হজ প্যাকেজে নতুন করে বাংলাদেশি টাকায় ৯ হাজার টাকা ভিসা ফি, ইলেকট্রনিক্স সার্ভিস, গ্রাউন্ড সার্ভিস ফি ও ক্যাম্প ফি যুক্ত করা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। সৌদি আরব সরকার এই ভিসা ফি আরোপ করতে পারে না। কারণ হজযাত্রীরা সর্বশক্তিমান আল্লাহর প্রতি তাদের পবিত্র দায়িত্ব পালনের জন্য পবিত্র মক্কা ও মদিনায় যাচ্ছেন।
নোটিশে বলা হয়, গেজেটে প্লেন ভাড়া বাংলাদেশি টাকায় ১ লাখ ৯৪ হাজার ৮০০ টাকা বলা হয়েছে, যেখানে ঢাকা-জেদ্দা-ঢাকা রুটে বর্তমান প্লেন ভাড়া বাংলাদেশি টাকায় ৭৬ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা। প্রতি বছর সরকার হজযাত্রীদের বিমান বাংলাদেশ এবং সৌদি এয়ারলাইন্স থেকে বিমানের টিকিট কিনতে বাধ্য করে, যাতে ওই এয়ারলাইন কোম্পানিগুলোকে অবৈধ সুবিধা দেওয়া যায়। এছাড়া, প্রতি হজ গাইডের বিপরীতে বাংলাদেশি টাকায় ১৩ হাজার ৫৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা অপ্রাসঙ্গিক। সরকার হজযাত্রীদের এই টাকা অযৌক্তিকভাবে পরিশোধ করতে বাধ্য করে।
এতে আরও বলা হয়, বাড়ি ভাড়া, পরিবহন খরচ, স্বাস্থ্য বীমা সার্ভিস চার্জ এবং জমজমের পানিতে ন্যূনতম ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা বেআইনি ও অনৈতিক। উভয় সরকারই হজযাত্রীদের ওপর এই ধরনের ভ্যাট আরোপ করতে পারে না। কারণ হজযাত্রীরা ভ্রমণকারী নয়, তারা সর্বশক্তিমান আল্লাহর মেহমান।
নোটিশে বলা হয়, আমরা হজযাত্রীদের সাধারণ এবং বিশেষ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করার কোনো যৌক্তিকতা খুঁজে পাচ্ছি না। এটা স্পষ্ট যে এই হজ প্যাকেজ প্রকৃত তথ্য ও পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়নি এবং হজযাত্রীদের সেবা করার জন্য তৈরি করা হয়নি। বরং এটি মুনাফা অর্জনের নগ্ন স্বার্থে হজযাত্রীদের শোষণের জন্য তৈরি করা হয়েছে। এই প্যাকেজের এসব কর্মকাণ্ড থেকে জানা যায় যে, বাংলাদেশ ও সৌদি সরকার ইসলামী চেতনা ও নৈতিকতা বজায় না রেখে হজযাত্রীদের উসকানি দিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জনের চেষ্টা করছে।
নোটিশ পাওয়ার পাঁচ দিনের মধ্যে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। অন্যথায় এর প্রতিকার চেয়ে বাংলাদেশের ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১০:৩৭:৪৯ ১৫০ বার পঠিত