বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪

বিশৃঙ্খল বিধ্বস্ত সিরিয়ায় সুযোগ নিচ্ছে ইসরাইল

প্রথম পাতা » আন্তর্জাতিক » বিশৃঙ্খল বিধ্বস্ত সিরিয়ায় সুযোগ নিচ্ছে ইসরাইল
বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪



বিশৃঙ্খল বিধ্বস্ত সিরিয়ায় সুযোগ নিচ্ছে ইসরাইল

এমনিতেই যুদ্ধে ক্ষতবিক্ষত সিরিয়া। তার ওপর প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ পালিয়ে রাশিয়া চলে যাওয়ার ফলে বিশৃঙ্খল এক অবস্থায় দেশটি। এমন সময় সিরিয়াকে পুনর্গঠনে যখন প্রতিবেশী সহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এগিয়ে আসা উচিত, ঠিক তখন তা না করে ইসরাইল মুহুর্মুহু বোমা হামলা করছে সেখানে। এখানেই থেমে নেই তারা। আসাদ পালিয়ে যাওয়ার দিনেই তারা গোলান মালভূমির বিরাট অংশ দখল করে নিয়েছে। এ জন্য অজুহাত দিতে হয়। তাই অজুহাত দাঁড় করেছে। বলেছে, সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করতেই তারা এ কাজ করেছে। এখানে স্মরণ করার বিষয় হলোÑ একই রকম কথা বলে গাজায় গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকার। সেখানে নিহতের সংখ্যা ৪৪ হাজার পেরিয়ে গেলেও তার সেই হামাস নিধন শেষ হয়নি! তেমনি সিরিয়া যখন বেসামাল অবস্থায়, তখন তিনি সুযোগ নিচ্ছেন। একদিকে দখল করছেন। অন্যদিকে বোমা হামলায় কাঁপিয়ে তুলছেন দামেস্ককে। অনলাইন বিবিসি বলেছে, সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে যখন জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হয়ে আসছে তখন সোমবার দিবাগত রাতে শত শত বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। এর এক হামলায় দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত কামিশলি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। গতকালও সেখানে মর্টার শেলের অবশিষ্টাংশ পড়ে ছিল। এসব শেল ওই বিমানবন্দরে ট্রাকগুলোকে পুড়িয়ে দিয়েছে। ওদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে মোহাম্মদ আল বশিরকে। আগামী বছরের ১লা মার্চ পর্যন্ত এ নিয়োগ কার্যকর হবে। বৃটেনভিত্তিক সিরিয়ার পর্যবেক্ষক মানবাধিকার সংস্থা এসওএইচআর বলছে, সিরিয়ার শতাধিক স্থানে বিমান হামলা চালিয়েছে তেল আবিব। এতে রাসায়নিক অস্ত্র উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত একটি গবেষণা কেন্দ্র মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আল জাজিরা বলছে, সিরিয়ার ভূখণ্ডে ইসরাইলের হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল সামরিক স্থাপনা। ২৫০টির বেশি সামরিক স্থাপনায় হামলার কথা জানিয়েছে কাতারভিত্তিক ওই গণমাধ্যম। বলা হয়েছে, ইসরাইলের বিমান বাহিনীর ইতিহাসে এটা সিরিয়ায় অন্যতম বড় হামলা। সিরিয়ায় ২৪ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতন ও দেশ ছেড়ে রাশিয়ায় পালিয়ে যাওয়ার পর এই হামলা চালানো হয়েছে। ইসরাইল বলছে, আসাদ সরকারের পতনের পর সেখানে ‘চরমপন্থিদের’ হাত থেকে অস্ত্র সরাতে এই হামলা চালানো হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে ইরানের সহায়তায় গড়ে ওঠা বিভিন্ন রাসায়নিক অস্ত্রাগার লক্ষ্যবস্তু করে তা ধ্বংস করে দিচ্ছে তেল আবিব।

সোমবার সিরিয়ার উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে জরুরি বৈঠক করেছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। সেখান থেকে আগামী দিনে ঐক্যের ভিত্তিতে কাজ করার সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে। রাশিয়ার আহ্বানে জরুরি বৈঠকের আয়োজন করে নিরাপত্তা পরিষদ। জাতিসংঘে নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া সাংবাদিকদের বলেন, আমি মনে করি নিরাপত্তা পরিষদ সিরিয়ার আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও ঐক্য রক্ষার প্রয়োজনে কমবেশি ঐক্যবদ্ধ ছিল। বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং সেখানে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে নিরাপত্তা পরিষদ সব সময়ই ঐক্য বজায় রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তিনি।

এসওএইচআর জানিয়েছে, সিরিয়াতে কয়েকশ’ লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। এর মধ্যে ইরানি বিজ্ঞানীদের সহায়তায় গড়ে ওঠা অস্ত্রাগারগুলোকে বেশি লক্ষ্যবস্তু করেছে তেল আবিব। রাসায়নিক অস্ত্রের সন্দেহজনক মজুত নিরাপদ কিনা তা নিশ্চিত করার জন্য জাতিসংঘের রাসায়নিক পর্যবেক্ষণ সংস্থা সিরিয়ার কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করার সময় এই হামলা চালানো হয়েছে। হামলার আগে অস্থায়ীভাবে গোলান মালভূমির বাফার জোন নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয় ইসরাইল। ১৯৭৪ সালে সিরিয়ার সঙ্গে ইসরাইলের যে সমঝোতা চুক্তি হয়েছিল, তাতে সিরিয়ার সাম্প্রতিক পরিস্থিতির পতন হয়েছে বলে ঘোষণা দেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনীকে (আইডিএফ) গোলান মালভূমিতে নিজেদের অধিকৃত অংশ থেকে বাফার জোন এবং এর আশপাশের এলাকায় প্রবেশের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

নেতানিয়াহু বলেছেন, শত্রু বাহিনীকে নিজেদের সীমান্তে প্রতিষ্ঠিত হতে দেবে না ইসরাইল। ওদিকে ইসরাইলকে হুঁশিয়ার করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান। তিনি বলেছেন, সিরিয়াকে ভেঙে ফেলতে দেয়া হবে না। শনিবার বৃটেনভিত্তিক যুদ্ধ বিষয়ক একটি পর্যবেক্ষক দল জানিয়েছে, কুনেইত্রা প্রদেশ থেকে সরে এসেছে সিরিয়ার সৈন্যরা। এই প্রদেশের একটি অংশ ওই বাফার জোনের অংশ। পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত জোনের মধ্যে অবস্থিত পাঁচটি গ্রামের সিরীয় বাসিন্দাদের বাড়িতে অবস্থান করার কথা জানিয়েছে আইডিএফ। সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের প্রায় ৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে একটি পাথুরে মালভূমি গোলান। অন্যদিকে সিরিয়ার সাধারণ মানুষের অবস্থা খুবই করুণ। সিরিয়ায় নিযুক্ত জাতিসংঘের বিশেষ দূত গেইর পেদারসেন সিরিয়ায় হামলাকে গভীর হতাশার বলে উল্লেখ করেন। দাবি তোলেন সিরিয়া ভূখণ্ডের ভেতরে বোমা হামলা অবিলম্বে বন্ধ হতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ৬:৪২:৪১   ৫৩ বার পঠিত