দ্য প্রিন্টের পর এবার শেখ হাসিনার অবস্থানের খবর প্রকাশ করলো ভারতীয় গণমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস। বৃহস্পতিবার কর্মকর্তারা বলেছেন যে, বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হিন্দন বিমান ঘাঁটি থেকে স্থানান্তরিত করার পর তিনি দিল্লির লুটিয়েন্সে বাংলো জোনের একটি সেফ হাউসে বসবাস করছেন। দ্য প্রিন্টের খবরে এ বিষয়ে যে তথ্য দেওয়া হয়েছে তা নিশ্চিত করেছে হিন্দুস্তান টাইমস।
এতে বলা হয়, প্রায় দুই দশকের কাছাকাছি সময় ধরে ঢাকার কেন্দ্রস্থলে ৩ হাজার ৬০০ বর্গ মিটার বিস্তৃত ম্যানিকিউর বাগান পরিবেষ্টিত একটি বিস্তীর্ণ প্রাসদ সম বাড়িতে বাস করতেন শেখ হাসিনা। ৫ই আগস্ট ছাত্রজনতার বিক্ষোভের পর পালিয়ে ভারতে চলে যেতে বাধ্য হন বাংলাদেশের সাবেক ওই প্রধানমন্ত্রী। সেদিন তাকে একটি সামরিক হেলিকপ্টারে করে ভারতের উত্তর প্রদেশের হিন্দন বিমান ঘাঁটিতে পৌঁছে দেয়া হয়।
এর পর থেকেই ইন্ডিয়া গেট এবং খান মার্কেটের কাছে কেন্দ্রীয় দিল্লির সুরক্ষিত লুটিয়েন্সে বাংলোতে বসবাস করছেন ৭৭ বছর বয়সী হাসিনা। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলেছেন, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার জন্য একাধিক নিরাপত্তা স্তর যোগ করা হয়েছে এবং তা অব্যাহত রয়েছে। কেননা শেখ হাসিনার শাসনামলে সংঘটিত নৃশংসতার অভিযোগে মৃত্যুর হুমকিতে রয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার কর্মকর্তারা বলেছেন যে, হাসিনা হিন্দন থেকে স্থানান্তরিত হওয়ার পর তাকে লুটিয়েন্স বাংলোতে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। যে বিষয়টি প্রথম নিশ্চিত করেছে দ্য প্রিন্ট। গত মাসে হাসিনাকে দিল্লির লোধি গার্ডেনে দেখা যায় বলে খবর প্রকাশ করেছিল ফিনান্সিয়াল টাইমস। দিল্লিতে হাঁটাহাটি এবং আড্ডার জন্য এটি একটি জনপ্রিয় জায়গা।
উপরে উদ্ধৃত কর্মকর্তারা বলেছেন, হাসিনার নতুন বাসভবনটি গোয়েন্দা ব্যুরোর (আইবি) সেফহাউস হিসেবে ব্যবহৃত হতো। তবে হাসিনার জীবনের হুমকির কথা উল্লেখ করে সঠিক অবস্থান প্রকাশ না করতে বলা হয়েছিল। যেহেতু বাংলাদেশে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে।
এ সমস্ত সেফ হাউসের ভিতর এবং বাইরের নিরাপত্তা স্তর দিল্লিতে এমন তিনটি সুবিধার মধ্যে একটি। এসব বাংলোর দায়িত্বে থাকেন কেন্দ্রীয় সংস্থার কর্মকর্তারা। এর চারপাশে দিল্লি পুলিশের কমান্ডো ইউনিটের ‘পর্যবেক্ষক এবং স্পটার’ মোতায়েন করা থাকে। বাংলোতে সন্দেহজনক কার্যকলাপ এবং লোকজনের উপর নজরদারি জোরদার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্মকর্তারা।
অন্য আরেক কর্মকর্তাও হাসিনাকে হিন্দন থেকে দিল্লির ওই সুরক্ষিত বাংলোতে স্থানান্তরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেছেন, হাসিনাকে কড়া নিরাপত্তার মাধ্যমে হিন্দন থেকে দিল্লিতে স্থানান্তর করা হয়। এ জন্য দিল্লি পুলিশের একজন সাব-ইন্সপেক্টরকে (এসআই) কয়েক দিনের জন্য আইবি এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রীর (এমইএ) সঙ্গে নিযুক্ত করা হয়েছিল। এক্ষেত্রে ওই সাব-ইন্সপেক্টরকে খুব স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল যেন তিনি এ বিষয়ে কাউকে কিছু না বলেন। এসআইকে বলা হয়েছিল যে, দিল্লি পুলিশ প্রধান বা তার তত্ত্বাবধায়ক কর্মকর্তাদের কেউ এটি জিজ্ঞাসা করলেও তার কোনো তথ্য যেন প্রকাশ করা না হয়। ওই কর্মকর্তা তার নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়েছেন। হাসিনাকে স্থানান্তরের দুই-তিন দিনের মধ্যেই ওই এসআইকে বিশেষ ওই দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়।
হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদকেও পুলিশি নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছেন ওই কর্মকর্তা। সায়মা ওয়াজেদ দিল্লিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। কঠোর এবং গোপন নিরাপত্তা প্রটোকলের অধীনে গত মাসে হাসিনা এবং তার মেয়ের সঙ্গে বেশ কয়েক বার দেখা হয়েছে।
বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে শাসন করেছেন শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের স্বাধীনতার আইকন শেখ মুজিবুর রহমানের উত্তরাধিকার ধরে রেখেছিলেন তিনি। ২০০৯ সালে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে টানা ১৫ বছরের বেশি সময় বাংলাদেশকে লৌহ মুষ্টি দিয়ে শাসন করেছিলেন হাসিনা।
কিন্তু রাজনৈতিক দমন-পীড়ন এবং অর্থনৈতিক অস্থিরতার ক্রমবর্ধমান অভিযোগে ছাত্রদের নেতৃত্বে ব্যাপক বিক্ষোভের জন্ম দেয়। সেই বিক্ষোভ শেষ পর্যন্ত গণভবনে ছাত্রজনতার মিছিলের মাধ্যমে শেষ হয় এবং হাসিনাকে দেশ থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করে। অতীতেও হাসিনার ঠিকানা ছিল দিল্লি। ১৯৭৫ সালে তার বাবাকে হত্যার পর, হাসিনা এবং তার বোন শেখ রেহানা ভারতে পালিয়ে যান এবং ছয় বছর পান্ডারা রোডের একটি বাড়িতে বসবাস করেন।
বাংলাদেশ সময়: ২২:৩৯:১২ ৭০ বার পঠিত