ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বাসভবনে ড্রোন হামলা করেছে হিজবুল্লাহ। দেশটির সেনাবাহিনী বলেছে, লেবানন থেকে ছোড়া ড্রোন আঘাত করে তেল আবিবের উত্তরে সিসারিয়া এলাকায় অবস্থিত নেতানিয়াহুর বাসভবনে। মুখপাত্র এ কথা জানিয়ে বলেছেন, হামলার সময় নেতানিয়াহু বা তার পরিবারের কেউ ওই বাড়িতে ছিলেন না। ফলে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। তবে বাড়িটির কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে সে বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয়নি।
ওদিকে গাজার জাবালিয়া ও মাঘাজি শরণার্থী শিবিরে ইসরাইলি সেনারা নৃশংস হামলা চালিয়ে হত্যা করেছে কমপক্ষে ৪৪ জনকে। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৮০ জন। আগের মতোই ইসরাইলি সেনারা কোনো বাদবিচার ছাড়াই গাজার উত্তরাঞ্চলে আল আওদা এবং কামাল আদওয়ান হাসপাতালকে টার্গেট করে হামলা করছে। পর পর হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়ে ও পরবর্তীতে ইয়াহিয়া সিনওয়ার নিহত হওয়ার পরও হাল ছেড়ে দিতে নারাজ হামাস। তারা আরও শক্তি সঞ্চয় করে ইসরাইলি সেনাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। জানিয়ে দিয়েছে গাজায় আগ্রাসন বন্ধ না করা পর্যন্ত তাদের হাতে জিম্মিদের মুক্তি দেবে না। পাশাপাশি ইসরাইলি সেনাদের পুরোপুরি প্রত্যাহার করতে হবে। ইসরাইলের হাতে বন্দি সব ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিতে হবে। এরই মধ্যে ইয়াহিয়া সিনওয়ার নিহত হওয়ার পর হামাসের হাল কে ধরবেন তা নিয়ে জল্পনা কল্পনা শুরু হয়েছে। তবে যোদ্ধা এই গোষ্ঠীটি জানিয়ে দিয়েছে, প্রয়োজনে গাজার বাইরে থেকে কাউকে এর প্রধান নিযুক্ত করা হবে।
গত বছর ৭ই অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের রকেট হামলার পর এ পর্যন্ত ইসরাইলি নৃশংসতায় গাজায় নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ৪২,৫০০ ফিলিস্তিনি। আহত হয়েছেন ৯৯,৫৪৬ জন। গাজা এবং সর্বশেষ লেবাননে ইসরাইল নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠেছে। তাদের কাছে কোনো মানবতা কাজ করছে না। শিশু, অন্তঃসত্ত্বা, নারী, বৃদ্ধ, হাসপাতালের রোগী- কাউকে ছাড় দিচ্ছে না তারা। অনলাইন আল জাজিরা বলেছে, জাবালিয়ার পূর্ব দিক থেকে অগ্রসর হচ্ছে ইসরাইলি সেনারা। তারা গাজার উত্তরাঞ্চল নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। এ অবস্থা চলছে তৃতীয় সপ্তাহ। ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতালে ইসরাইলিদের বোমা হামলায় জেনারেটর ধ্বংস হয়েছে। এতে আইসিইউতে ভর্তি থাকা দু’জন রোগী নিহত হয়েছেন। ওই এলাকায় আবাসিক ভবনগুলোতে তীব্র বোমা হামলা চালাচ্ছে ইসরাইলিরা। প্রাণভয়ে শত শত মানুষ সেখান থেকে পালাচ্ছিলেন। ইসরাইলি সেনাদের মুখোমুখি লড়াই করছে লেবাননের হিজবুল্লাহ।
হিজবুল্লাহ বলেছে, তারা ইসরাইলের উত্তরে হাইফাতে অবস্থিত ইসরাইলি সেনাবাহিনীর ঘাঁটিতে রকেট হামলা করেছে। দক্ষিণ লেবাননে হিজবুল্লাহকে লক্ষ্য করে ইসরাইলের হামলার জবাবে এই হামলা চালানো হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। ওদিকে ইসরাইলের কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনি ভেদ করে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর বাসভবনে ড্রোন হামলাকে ইসরাইলের নিরাপত্তায় গুরুতর ব্যর্থতা হিসেবে দেখা হচ্ছে। এই অবস্থার মধ্যে ইরানে হামলা চালানোর প্রস্তুতির কথা আগেই জানিয়েছে ইসরাইল। তবে সেক্ষেত্রে ইসরাইলকে সতর্ক করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। যদি ইসরাইল ইরানে, বিশেষ করে তাদের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা করে তাহলে এই যুদ্ধ তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে রূপ নেয়ার আশঙ্কা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। এর প্রেক্ষিতে মধ্যপ্রাচ্যেরর উত্তেজনা হ্রাস করা ও অন্যান্য ইস্যু নিয়ে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়্যিপ এরদোগানের সঙ্গে আলোচনা হওয়ার কথা জার্মান চ্যান্সেলর শুলজের। জো বাইডেন, ফ্রান্স ও বৃটিশ নেতাদের সঙ্গে বার্লিনে মিটিং করার পর শুক্রবার রাতে ইস্তাম্বুল পৌঁছেন।
এখানে উল্লেখ্য, গাজা যুদ্ধের একজন তুখোড় সমালোচক এরদোগান। তিনি ইসরাইলকে একটি সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হিসেবে অভিহিত করেছেন। তাদেরকে সমর্থন দেয়ায় কড়া সমালোচনা করেছেন পশ্চিমাদের। বার্লিনও ইসরাইলের শক্তিশালী সমর্থক। তারাও ইসরাইলের আত্মরক্ষার অধিকারের পক্ষে কথা বলেছেন। তবে আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে দখলদার কোনো শক্তির আত্মরক্ষার অধিকার থাকে না। ওদিকে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রতিশোধ নিতে ইসরাইল কিভাবে এবং কখন ইরানে হামলা জানাবে- তা যারা জানেন, তারা সবাই জবাবদিহিতায় আসবেন বলে সতর্ক করেছে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বাংলাদেশ সময়: ৮:৩৪:২৫ ৫৬ বার পঠিত