রাজধানীর শাহজাহানপুরে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু ও কলেজছাত্রী সামিয়া আফরান প্রীতিকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় করা মামলায় চার্জশিটভুক্ত আসামি ওয়ার্ড যুবলীগের সাবেক নেতা সামসুল হায়দার উচ্ছলকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
বুধবার (৪ অক্টোবর) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলামের আদালতে তিনি আইনজীবীর মাধ্যমে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এ মামলায় গত ২০ জুলাই তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।
আদালতের শাহজাহানপুর থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক শাহ আলম বিষয়টি জানিয়েছেন।
এর আগে গত ২০ জুন এ মামলায় বিদেশে পলাতক দুই সন্ত্রাসী জিসান ও ফ্রিডম মানিকসহ ৩৩ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট গ্রহণ করেন আদালত। এ মামলায় পলাতক থাকায় আশরাফ তালুকদারসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। ওইদিন এ মামলায় জামিনে থাকা তিন আসামির জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।
গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত অপর আসামিরা হলেন- সন্ত্রাসী জিসান আহম্মেদ মন্টু, ফ্রিডম মানিক ওরফে জাফর, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মারুফ আহমেদ মনসুর, রিফাত হোসেন, সোহেল রানা, ওয়ার্ড যুবলীগের সাবেক নেতা আমিনুল, সামসুল হায়দার উচ্ছল ও ১১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সভাপতি কামরুজ্জামান বাবুল। এর মধ্যে কাউন্সিলর মারুফ আহমেদ মনসুর আত্মসমর্পণ করে জামিন পেয়েছেন।
অপরদিকে কারাগারে যাওয়া আসামিরা হলেন- মশিউর রহমান ইকরাম, ১০ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক আরিফুর রহমান ওরফে ‘ঘাতক’ সোহেল এবং তৌফিক হাসান ওরফে বিডি বাবু।
গত ৫ জুন শাহজানপুর থানার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন শাখায় এ চার্জশিট দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ইয়াসিন শিকদার। প্রতিবেদনে ৩৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ইয়াসিন শিকদার।
তবে এক্সেল সোহেল নামে এক আসামির পূর্নাঙ্গ নাম ঠিকানা না পাওয়ায় তাকে অব্যাহতির আবেদন করা হয়েছে। এক্ষেত্রে বিচারের জন্য ৩৩ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
চার্জশিটভুক্ত উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন— ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আশরাফ তালুকদার, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা মারুফ আহমেদ মনসুর, মতিঝিল থানা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক খায়রুল ইসলাম, মতিঝিল থানা জাতীয় পার্টির নেতা জুবের আলম খান রবিন, হাবীবুল্লাহ বাহার কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক সোহেল শাহরিয়ার, ১০ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি মারুফ রেজা সাগর, ১১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সভাপতি কামরুজ্জামান বাবুল, ১০ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাবেক সদস্য কাইল্যা পলাশ, একই ওয়ার্ড যুবলীগের সাবেক নেতা আমিনুল, ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক ‘ঘাতক’ সোহেল, সুমন শিকদার মুসা, মুসার ভাগনে সৈকত, মুসার ভাতিজা শিকদার আকাশ, ইমরান হোসেন জিতু, মোল্লা শামীম, রাকিব, বিডি বাবু, ওমর ফারুক, ‘কিলার’ নাসির, রিফাত, ইশতিয়াক হোসেন জিতু, মাহবুবুর রহমান টিটু, হাফিজ, মাসুম ও রানা মোল্লা। এঁদের মধ্যে ২৪ জনই গ্রেপ্তার হয়েছেন। এদের মধ্যে মুসা, শুটার আকাশ ও নাসির উদ্দিন মানিক আদালতে স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
গত বছরের ২৪ মার্চ রাত সোয়া ১০টার দিকে শাহজাহানপুরে ইসলামী ব্যাংকের পাশে বাটার শো-রুমের সামনে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপুকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এসময় গাড়ির পাশে রিকশায় থাকা সামিয়া আফরান প্রীতি (১৯) নামে এক কলেজছাত্রীও নিহত হন। এছাড়া টিপুর গাড়িচালক মুন্না গুলিবিদ্ধ হন।
চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের পর ওইদিন রাতেই শাহজাহানপুর থানায় নিহত টিপুর স্ত্রী ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সংরক্ষিত কাউন্সিলর ফারহানা ইসলাম ডলি বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেন। এতে অজ্ঞাতদের আসামি করা হয়।
মামলার এজাহারে টিপুর স্ত্রী অভিযোগ করেন, ২০২২ সালের ২৪ মার্চ রাত সোয়া ১০টার দিকে শাহজাহানপুর থানার ২০২ উত্তর শাহজাহানপুর মানামা ভবনের বাটার দোকানের সামনে পৌঁছামাত্র অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তরা হামলা করে। তারা জাহিদুল ইসলাম টিপুকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি করে।
বাংলাদেশ সময়: ৯:৩১:০০ ১৮৫ বার পঠিত