সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে ‘অপহরণের মাধ্যমে হত্যার ষড়যন্ত্রের’ অভিযোগে করা মামলায় দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান জামিন পেয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আস সামছ জগলুল হোসেনের আদালত তার জামিন মঞ্জুর করেন।
মাহমুদুর রহমানের আইনজীবী তানভীর আহমেদ বলেন, মাহমুদুর রহমানকে মিথ্যা মামলায় দেওয়া সাজার বিরুদ্ধে আজ আমরা আপিল করেছি। আদালত আপিল আবেদন গ্রহণ করেন। এরপর আমরা মাহমুদুর রহমানের জামিন চেয়ে আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন। এ ক্ষেত্রে তার কারামুক্ত হতে আর কোনো আইনগত বাধা থাকলো না।
এর আগে, ২৯ সেপ্টেম্বর একই মামলায় মাহমুদুর রহমানকে কারাগারে পাঠান আদালত। ওই দিন সকাল সাড়ে ১০টার পর ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির হয়ে ওই মামলায় আত্মসমর্পণ করেন তিনি। সেই সঙ্গে আপিল শর্তে জামিন আবেদন করেন তিনি। শুনানি শেষে অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুল হক জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
জানা গেছে, সজীব ওয়াজেদ জয়কে ‘অপহরণ’ এবং ‘হত্যাচেষ্টার’ মামলায় গত বছরের ১৭ আগস্ট ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আসাদুজ্জামান নূরের আদালত মাহমুদুর রহমান ও সাংবাদিক শফিক রেহমানসহ পাঁজজনের পৃথক দুই ধারায় সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত অপর তিন আসামি হলেন-জাসাস নেতা মোহাম্মদ উল্লাহ, রিজভী আহমেদ সিজার ও মিজানুর রহমান ভুঁইয়া।
আসামিদের দণ্ডবিধির ৩৬৫ ধারায় (অপহরণ) পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছেন আদালত। জরিমানার টাকা অনাদায়ে তাদের আরও একমাসের কারাভোগ করতে হবে। এ ছাড়া একই আইনে ১২০-খ ধারায় (অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র) দুই বছরের কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে–আরও এক মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। দুই ধারার সাজা একসঙ্গে চলবে বলে বিচারক রায়ে উল্লেখ করেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরের আগে যে কোনো সময় থেকে এপর্যন্ত বিএনপির সাংস্কৃতিক সংগঠন জাসাসের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ মামুনসহ বিএনপি ও বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটভুক্ত অন্যান্য দলের উচ্চপর্যায়ের নেতারা রাজধানীর পল্টনের জাসাস কার্যালয়ে, আমেরিকার নিউ ইয়র্ক শহরে, যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকার আসামিরা একত্রিত হয়ে ‘যোগসাজশে’ প্রধানমন্ত্রীর ছেলে ও তার প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে আমেরিকায় অপহরণ করে হত্যার ষড়যন্ত্র করেন। ওই ঘটনায় ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ফজলুর রহমান ২০১৫ সালের ৩ আগস্ট বাদী হয়ে পল্টন মডেল থানায় মামলাটি করেন। ২০১৮ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি এই পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। এ মামলায় সজীব ওয়াজেদ জয়সহ ১২ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন।
গত ২৭ সেপ্টেম্বর সকালে তুরস্ক থেকে দেশে ফিরেছেন মাহমুদুর রহমান। এক সময় বিনিয়োগ বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদায় বিএনপি সরকারে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। এসব দায়িত্ব পালন শেষে মাহমুদুর রহমান সাংবাদিকতায় নিজেকে যুক্ত করেন। দৈনিক আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। বিগত সরকারের ফ্যাসিবাদী আচরণের বিরুদ্ধে—আমার দেশ পত্রিকায় লেখনির কারণে মাহমুদুর রহমানকে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে নির্মম নির্যাতন করা হয়। তিনি বিগত সরকারের সব অগণতান্ত্রিক ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে বরাবরই সোচ্চার ও আপোষহীন ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪:৪১:৫৬ ৫৭ বার পঠিত