শনিবার, ৩ আগস্ট ২০২৪

কোটা আন্দোলন ‘নিথর দেহটি দেখে চিৎকার করে উঠি, এ তো আমার কলিজার টুকরা’

প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » কোটা আন্দোলন ‘নিথর দেহটি দেখে চিৎকার করে উঠি, এ তো আমার কলিজার টুকরা’
শনিবার, ৩ আগস্ট ২০২৪



নিহত আমিনুল ইসলাম আমিন (১৬)।

জীবিকার তাগিদে প্রতিদিনের মতো গত ২১ জুলাই ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নিয়ে বের হন চালক ওবায়দুল ইসলাম (৩৯)। ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকার অনাবিল হাসপাতালের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় গুলিবিদ্ধ এক কিশোরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাকে অনুরোধ জানান দুই পথচারী। তিনি রাজি হলেন। গুলিবিদ্ধ সেই কিশোরকে অটোরিকশায় তুলে হাসপাতালে গিয়ে কোলে করে নামাবার সময় মুখ দেখে চমকে ওঠেন ওবায়দুল। সেই কিশোরকে জড়িয়ে ধরে বুকফাটা চিৎকার করে ওবায়দুল বলেন, ‘এ তো আমার কলিজার টুকরা ছেলে’। এ সময় তার আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে হাসপাতালের পুরো এলাকা। ভিড় করেন শত শত মানুষ।

একমাত্র সন্তান আমিনুল ইসলাম আমিনকে (১৬) রিক্সা থেকে কোলে করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, হাসপাতালে নেওয়ার আগেই আমিনের জীবনপ্রদীপ নিভে গেছে।

জানা যায়, পটুয়াখালীর বাউফলের কেশবপুর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ভরিপাশা গ্রামের ওবায়দুল ইসলাম ও তার স্ত্রী সেলিনা বেগম একমাত্র ছেলে আমিনকে নিয়ে ঢাকার কদমতলী এলাকার দক্ষিণ দনিয়ায় একটি টিনশেডের বাসায় ভাড়া থাকতেন। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করার পর ২০২০ সালে করোনাকালীন সময়ে পড়াশোনা থেমে যায় আমিনের। পরে পরিবারের সচ্ছলতা ফেরাতে ঢাকার একটা বৈদ্যুতিক সুইচ তৈরির কারখানায় কাজ নেয়।

সরেজমিনে বাউফলের কেশবপুরে গেলে নিহত আমিনের বাবা ওবায়দুল ইসলাম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘গত ২১ জুলাই বিকেল ৫টার দিকে আমিন ঘুম থেকে উঠে দোকান থেকে চাল এনে দেয়। পরে বাসার সামনে থাকা একটি দোকানের পাশে দাঁড়িয়ে আন্দোলন দেখছিল আমিন। হঠাৎ একটি গুলি এসে তার বুকের বাম দিকে হৃৎপিণ্ড বরাবর লাগে। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আমিন বাসার দিকে ছুটে আসতে চাইলে কিছুটা দৌড়ে এসে রাস্তায় লুটিয়ে পড়ে। তখন স্থানীয় দুই যুবক তাকে অনাবিল হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়ার সময় আমার অটোরিকশাই ঠিক করেন। নিথর দেহটি দেখে চিৎকার করে উঠি, এ তো আমার কলিজার টুকরা।’

নিহতের দাদি লাভলী বেগম বলেন, ‘আমার অনেক শখের নাতি, এই নাতি আমি কোম্মে পামু! আমি নাতির ছবি দেখতে পারি না, দেখলে আমার মাথা ঠিক থাকে না। আমার ছেলের আশাভরসা সব শেষ। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমি বিচার চাই।’ এ সময় তিনি সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণেরও দাবি জানান।

এলাকাবাসীর সহায়তায় ২১ জুলাই রাতেই অ্যাম্বুলেন্সে করে আমিনের লাশ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। পরদিন সকালে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

গুলিবিদ্ধ হয়ে আমিনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাউফল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বশির গাজী। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসন থেকে নিহতদের তালিকা সংগ্রহ করা হচ্ছে। আমরা বাউফল উপজেলার সকল নিহতের তথ্য সেখানে পাঠিয়েছি।

বাংলাদেশ সময়: ২:৩৯:২৯   ৫৩ বার পঠিত