কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের স্বেচ্ছায় পদত্যাগের হিড়িক পড়েছে।
রোববার কোটা আন্দোলন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পরই ঢাবির পাঁচজন ছাত্রলীগ নেতা পদত্যাগ করেন। এরপর সোমবার সন্ধ্যা থেকে শুরু হয় পদত্যাগের হিড়িক। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ঢাবি ছাত্রলীগের বিভিন্ন ইউনিটের অন্তত ২২ জন নেতা-নেত্রী পদত্যাগ করেছেন। এর মাঝে পাঁচ জন রোববার কোটা আন্দোলন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পরই পদত্যাগ করেন।
এছাড়াও হামলার ঘটনায় নির্লিপ্ত থাকা ও সংগঠনের নেতাদের সম্পৃক্ততার কারণে বিভিন্ন সংগঠনের মেসেঞ্জার গ্রুপগুলো থেকে লিভ নেওয়ার খবর পাওয়া যায়।
এছাড়াও পদত্যাগকারী নেতারা তাদের নিজস্ব ফেসবুক প্রোফাইলেও ঘোষণা দেন। পদত্যাগকৃতরা হলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের সহসভাপতি জান্নাতুল মাওয়া, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ছাত্রলীগের সহসভাপতি হাসিবুল হাসান হাসিব, বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হলের অর্থ সম্পাদক জুয়েনা আলম মুন এবং একই হলের আইন সম্পাদক সিরাজাম মনিরা তিশা, এই হলেরই প্রচার সম্পাদক আমরিন জান্নাত তাইরু, একই হলের নাট্য ও সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক মেহেরুন্নিসা মিম।
ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ আহমেদ, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি নুরুল ইসলাম হৃদয়, একই অনুষদের বিষয়ক উপ সম্পাদক জেবা সায়ীমা, সার্জেন্ট জহরুল হক হল ছাত্রলীগের সহ সভাপতি ওয়াসিক, শামসুন নাহার হল ছাত্রলীগের উপপাঠাগার সম্পাদক ইসরাত জাহান সুমনা, বিজয় একাত্তর হল শাখার গ্রন্থনা ও প্রকাশনা উপসম্পাদক শাহ সাকিব সাদমান প্রান্ত, জসীমউদ্দিন হল ছাত্রলীগের মো. রাফিউল ইসলাম রাফি, একই হলের কার্যনির্বাহী সদস্য মেহেদী হাসান।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য দেওয়ার রাতেই পদত্যাগ করেন সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ শাখার গণযোগাযোগ ও উন্নয়ন সম্পাদক মাছুম শাহরিয়ার, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট শাখার মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণাবিষয়ক উপসম্পাদক রাতুল আহামেদ ওরফে শ্রাবণ কলাভবন ছাত্রলীগের এক নম্বর সহসম্পাদক মো. মুহাইমিনুল ইসলাম, আইন অনুষদ শাখার গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক আশিকুর রহমান ওরফে জিম এবং রাসেল হোসেন।
বঙ্গবন্ধু হল ছাত্রলীগের সহসভাপতি হাসিবুল হাসান হাসিব লেখেন, আমি হাসিবুল হাসান হাসিব সহ-সভাপতি বঙ্গবন্ধু হল ছাত্রলীগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ছাত্রলীগের সঙ্গে আমার পূর্বের সব সম্পর্ক ত্যাগ করলাম, আমার ছোটভাই বন্ধুদের অনেককে নির্মমভাবে পেটানো হইছে। ঘৃণা হচ্ছে ছাত্রলীগের একজন কর্মী হিসাবে এতদিন কাজ করায়; বিদায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ!
বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হলের অর্থ সম্পাদক জুয়েনা আলম মুন লেখেন, ছাত্রলীগকে ন্যায়ের কান্ডারি ভেবে ছাত্রলীগ করতাম। কিন্তু এখন এই সংগঠনের সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততা ছিল এটাও মনে করলে আমার রক্তাক্ত বন্ধুবান্ধবী, সিনিয়র, জুনিয়রদের চেহারা মনে পড়বে। তাই স্বেচ্ছায়, সজ্ঞানে পদত্যাগ করছি।
ইসরাত জাহান সুমনা লেখেন, আমি ইসরাত জাহান সুমনা উপপাঠাগার সম্পাদক বাংলাদেশ শামসুন নাহার হল শাখা ছাত্রলীগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পদ থেকে সজ্ঞানে অব্যাহতি নিচ্ছি। এই পদ এবং সংগঠনে আমার কোনো পরিচয় নেই, বরং ঘৃণিত এবং লজ্জিত হবো নিজেরই কাছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হামলার সঙ্গে জড়িতদের সামাজিক বয়কট ও তাদের সঙ্গে সব ধরনের সম্পর্ক বিচ্ছিন্নের ঘোষণা দিয়েছেন তাদের সহপাঠীরা।
জবি ছাত্রলীগের ৬ নেতার পদত্যাগ: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শাখা ছাত্রলীগের ৬ নেতা। পদত্যাগ করা ছাত্রলীগ নেতারা হলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ শাখার সহ-সভাপতি মাহমুদুল হাসান সামি ও রসায়ন বিভাগ শাখার সহ-সভাপতি তাওসিফ কবির, মনোবিজ্ঞান বিভাগ শাখার সহ-সভাপতি রনি সরকার ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মো. আশিকুর রহমান, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ শাখার সহ-সভাপতি মাহমুদুল হাসান নোমান এবং শিঞ্জন বসাক।
বাংলাদেশ সময়: ০:৪৩:২৩ ১৮২ বার পঠিত