বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪

মেডিকেল শিক্ষার্থী গ্রেপ্তার নারীদের ফাঁদে ফেলে অনলাইনে-সরাসরি বাধ্য করা হতো যৌনকর্মে, মেডিকেল শিক্ষার্থীসহ গ্রেপ্তার ৮

প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » মেডিকেল শিক্ষার্থী গ্রেপ্তার নারীদের ফাঁদে ফেলে অনলাইনে-সরাসরি বাধ্য করা হতো যৌনকর্মে, মেডিকেল শিক্ষার্থীসহ গ্রেপ্তার ৮
বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪



প্রতীকী ছবি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও টেলিগ্রামে লোভনীয় বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। কখনও চাকরি দেওয়ার কথা বলে, কখনও মডেল বানানোর আশ্বাসে ফাঁদে ফেলা হয় সহজসরল মানুষকে। আবার মাঝে মধ্যে মেধা-অন্বেষণের নামেও অল্প বয়সী তরুণীদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়। তাদের কাছ থেকে কৌশলে হাতিয়ে নেওয়া হয় আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও ফুটেজ। সেগুলো প্রচার করার বা ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ভুক্তভোগীকে নামানো হয় যৌনকর্মে। কোনোরকম আপত্তি জানালে আদায় করা হয় মোটা অংকের টাকা। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। ধরা পড়েছে এ চক্রের হোতাসহ আট সদস্য। গত ২৫ জুন দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে আজ বুধবার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ- সিআইডি।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন- চক্রের হোতা মেহেদী হাসান (২৫), তার প্রধান সহযোগী শেখ জাহিদ বিন সুজন (২৬), জাহিদ হাসান কাঁকন (২৮), তানভীর আহমেদ দীপ্ত (২৬), সৈয়দ হাসিবুর রহমান (২৭), শাদাত আল মুইজ (২৯), সুস্মিতা আক্তার পপি (২৭) ও নায়না ইসলাম। তাদের যশোর, সাতক্ষীরা, চাঁদপুর ও ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেপ্তার করেন সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারের চৌকষ সদস্যরা।

সিআইডি জানায়, একটি মামলা তদন্ত করতে গিয়ে ভয়ংকর এ চক্রের সন্ধান পাওয়া যায়। মেডিকেল শিক্ষার্থী মেহেদী ও তার খালাতো ভাই সুজন মিলে চক্রটি গড়ে তুলেছিলেন। চিকিৎসা বিদ্যার আড়ালে অল্প বয়সী তরুণীদের ফাঁদে ফেলে যৌন নির্যাতনের পাশাপাশি আপত্তিকর ভিডিও তৈরি করতেন তারা। এসব ভিডিও এবং ছবি টেলিগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ ও ম্যাসেঞ্জারে বিভিন্ন জনের কাছে বিক্রি করে এবং ভুক্তভোগীদের নানাভাবে যৌনকর্মে নামিয়ে গত সাত বছরে তারা শতাধিক কোটি টাকা হাতিয়েছে।

যেভাবে কাজ করত চক্রটি
ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লোভনীয় বিজ্ঞাপন দেখে যারা যোগাযোগ করতেন তাদের নিয়ে টেলিগ্রামে গ্রুপ খুলতেন। এরপর তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলে বিদেশি গ্রাহকদের কাছে পাঠানোর কথা বলে মেয়েদের অন্তর্বাস পরিহিত ছবি হাতিয়ে নিতেন। সেসব ছবি ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে তাদের বাধ্য করা হতো নগ্ন হয়ে ভিডিও কলের ক্যাম সার্ভিসে যুক্ত হতে। এসব সার্ভিস গ্রহণ করত দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা চক্রটির হাজার হাজার সাবস্ক্রাইবার, যারা একটি নির্দিষ্ট অর্থ দিয়ে ওই গ্রুপগুলোতে যুক্ত থাকতো। চক্রটি ভিডিও কলের সবকিছু গোপনে ধারণ করে রাখতো। এরপর মেয়েদের বাধ্য করা হতো চক্রটির গ্রাহকদের সঙ্গে রিয়েল সার্ভিস বা ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক যৌন সম্পর্ক স্থাপনে। সেসবও একই কায়দায় গোপনে ধারণ করে রাখা হতো। এভাবে চক্রটির হাতে আধুনিক যৌন দাসীতে পরিণত হয়েছিলেন শত শত তরুণী।

সিআইডির প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা যায়, দেশ-বিদেশে চক্রটির রয়েছে শক্তিশালী নেটওয়ার্ক। বিভিন্ন নামে তাদের শতাধিক চ্যানেলে গ্রাহক সংখ্যা কয়েক লাখ। বিভিন্ন বয়সী নারীদের ভিডিও কল ও যৌনকর্মে বাধ্য করে এবং গোপনে ধারণকৃত সেসব ভিডিও বিক্রি করে চক্রটি বিপুল টাকা কামিয়েছে। অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থে এ চক্রের সদস্যরা যশোর, সাতক্ষীরা, খুলনা এবং ঢাকায় অনেক জমিও কিনেছে। নির্মাণ করেছে আলিশান বাড়ি। তাদের আত্মীয়-স্বজনের ব্যাংক একাউন্টেও বিপুল অর্থ জমিয়ে রাখার তথ্য মিলেছে। অর্থ লেনদেনের জন্য তারা ব্যবহার করত এমএফএস বা মোবাইল ফাইনান্সিয়াল সার্ভিস। এ ছাড়া ক্রিপ্টো কারেন্সিতেও তাদের হাজার হাজার ডলার লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাত থেকে নিজেদের আড়াল করার সব কলা-কৌশলও এই চক্রের জানা। শত শত মোবাইল সিম ব্যবহার করলেও তাদের কোনোটিই প্রকৃত ন্যাশনাল আইডি দিয়ে নিবন্ধন করা নয়। এক্ষেত্রে তারা নিম্ন আয়ের মানুষের অজ্ঞতার সুযোগ নিতেন। সামান্য অর্থ দিয়ে তোলা হতো সিম কার্ড। কন্টেন্ট আদান-প্রদান ও সাবস্ক্রিপশনের জন্য ছিল টেলিগ্রাম প্রিমিয়াম একাউন্ট এবং বিভিন্ন পেইড ক্লাউড সার্ভিস। অল্প বয়সী ভয়ানক চতুর এই দুই মেডিকেল শিক্ষার্থীর জিম্মায় কয়েক হাজার নারী রয়েছেন। আছে টিকটক, ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম সেলিব্রেটিও। অভিযুক্তদের মোবাইল ফোন এবং ল্যাপটপে গোপনে ধারণ করা প্রায় ১০ লাখ বিবস্ত্র ছবি ও ২০ হাজার ভিডিও পাওয়া গেছে।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের কাছ থেকে ১২টি মোবাইল ফোন, ২০টি সিম কার্ড, একটি ল্যাপটপ, বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম কার্ড ও চেক বই জব্দ করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ঢাকা মহানগর পুলিশের পল্টন থানায় পর্নোগ্রাফি আইন, পেনাল কোড ও সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়েছে। আসামিদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ২৩:৫৬:১৬   ৮৫ বার পঠিত