বুধবার, ৫ জুন ২০২৪

মিশর কেন আন্তর্জাতিক আদালতে ইসরাইলের বিরুদ্ধে?

প্রথম পাতা » আন্তর্জাতিক » মিশর কেন আন্তর্জাতিক আদালতে ইসরাইলের বিরুদ্ধে?
বুধবার, ৫ জুন ২০২৪



মিশর কেন আন্তর্জাতিক আদালতে ইসরাইলের বিরুদ্ধে?

গাজায় গণহত্যা চালানোর অভিযোগ এনে ইসরাইলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) মামলা করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। এ মামলায় যোগ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে মিশর।

আল জাজিরা সূত্রে জানা যায়, মিশরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত ১২ মে বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, ইসরাইলি বাহিনী গাজা উপত্যকায় বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের হত্যা, বেসামরিক অবকাঠামো ধ্বংস করছে, আইসিজের অন্তর্বর্তী আদেশ অমান্য করছে। এ কারণে কায়রো আইসিজেতে ইসরাইলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মিশরের এই ঘোষণা ১৯৭৯ সালে ইসরাইলের সঙ্গে স্বাক্ষরিত ক্যাম্প ডেভিড শান্তি চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার আভাস।

১৯৭৯ সালে মিশরের সঙ্গে হওয়া ক্যাম্প ডেভিড শান্তি চুক্তির মাধ্যমে ইসরাইল প্রথম কোনো আরব দেশের সঙ্গে কূটনীতিক সম্পর্ক গড়ে তোলার সুযোগ পায়। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্য তথা উত্তর আফ্রিকার মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসংখ্যার যে দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলেছে, তার যোগসূত্র বলা হয়ে থাকে মিশরকে।

গত শুক্রবার রাফায় অভিযান বন্ধ করতে ইসরাইলকে নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক বিচার আদালত। কিন্তু সেই নির্দেশ উপেক্ষা করে কয়েক মিনিটের মধ্যেই রাফায় হামলা চালায় ইসরাইলি বাহিনী। আইসিজের নির্দেশ মানবে না বলেও ঘোষণা দিয়েছেন ইসরাইলের কয়েকজন মন্ত্রী।

এর আগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) কৌঁসুলি করিম খান গাজায় সম্ভাব্য গণহত্যার জন্য ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেছেন, যার কঠোর সমালোচনা করছেন ইসরাইলের নীতিনির্ধারকরা।

মিশরের এমন পদক্ষেপের কারণ কী?

মিশর নিজেদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই এমন কঠোর হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে কাজ করা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আটলান্টিক কাউন্সিলের জ্যেষ্ঠ ফেলো সাহিরা আমিন মনে করেন, ইসরাইল রাফায় বড় ধরনের হামলা চালালে অভ্যন্তরীণ ও বহির্বিশ্বের চাপে ফিলিস্তিনিদের আশ্রয় দিতে রাফা ক্রসিং খুলে দিতে মিশর বাধ্য হবে। তখন সীমান্ত পেরিয়ে লাখো ফিলিস্তিনি মিশরের সিনাই উপত্যাকায় আশ্রয় নিতে পারে। যদি এমন হয় তাহলে সেই ফিলিস্তিনিদের আর কখনোই গাজায় ফিরতে দেবে না ইসরাইল। যদি এমন পরিস্থিতি হয় তাহলে সেটা মিশরের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।

এছাড়া ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে সিনাই উপত্যকায় হামাসের সদস্যরা আশ্রয় নিবে। তখন সিনাই তথা মিশরের রাফা অংশ থেকে হামাস ইসরাইলে হামলা চালাতে পারে। ইসরাইলও পাল্টা হামলা চালালে একটা পর্যায়ে মিশর-ইসরাইল যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হবে।

মিশরের আরেকটি উদ্বেগের জায়গা হলো, ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি অনুযায়ী ইসরাইল-মিশর সীমান্তে কিছু এলাকা ‘সি’ ও ‘ডি’ হিসেবে চিহ্নিত করা আছে। চুক্তি অনুযায়ী এই এলাকাগুলোয় কোনো সামরিক উপস্থিতি ঘটাবে না দুই দেশ। আবার কিছু এলাকায় নির্দিষ্ট সংখ্যা বা পরিমাণের বেশি সামরিক উপস্থিতি নিষিদ্ধ। এসব এলাকায় সাময়িক বা স্থায়ী কোনো পরিবর্তন করতে চাইলে তা দুই দেশের পারস্পরিক সমন্বয়ে করতে হবে। ইসরাইল রাফা পূর্ণমাত্রায় অভিযান চালালে চুক্তির এই বিষয়গুলো লঙ্ঘিত হবে বলে আশঙ্কা কায়রোর। তখন চুক্তি টিকে থাকা নিয়েই প্রশ্ন উঠবে।

এদিকে মিশর ইসরাইলের বিপক্ষে অবস্থান নিলেও নিজের অবস্থান থেকে সরছে না তেল আবিবের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। গাজায় হামাস নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত তিনি অভিযান চালানোর কথা জানিয়েছেন। সঙ্গে রাফায়ও অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ৮:১২:৩২   ১৩০ বার পঠিত   #  #  #