মঙ্গলবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

রওশন আরা হত্যা মামলার বিচার চেয়ে মানববন্ধন

প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » রওশন আরা হত্যা মামলার বিচার চেয়ে মানববন্ধন
মঙ্গলবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৪



 ---

ভোলায় রওশন আরার হত্যা ঘটনার রহস্য উদঘাটন ও প্রকৃত খুনিদের শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন ও পথসভা করেছে মেয়ে-ছেলেসহ এলাকাবাসী।

মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টায় ভোলা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডারস ফোরাম (এইচ.আর.ডি.এফ) এর আয়োজনে এই মানববন্ধন ও পথসভা অনুষ্ঠিত হয়।
ঘণ্টাব্যাপী এই মানববন্ধন ও পথসভায় ভোলার লালমোহনে রওশন আরা হত্যার রহস্য উদঘাটন ও দৌলতখানে কলেজ শিক্ষার্থী রাব্বি হত্যার বিচারসহ সকল হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়।

নিখোঁজের পর যেভাবে হত্যা হয় রওশন আরা:

ভোলার লালমোহন উপজেলার কালমা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডে ফজলে করিম মেম্বার বাড়ির শাহজাহান মিয়ার স্ত্রী গতবছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ৮টার দিকে নিখোঁজ হন। নিখোঁজের ৬ দিন পর ২৮ ফেব্রুয়ারি বাড়ির সেফটি ট্যাংকের মধ্যে থেকে পুলিশ তার মরদেহ উদ্ধার করে। এরপর ওইদিন রাতেই খুন হওয়া বৃদ্ধার ছেলে শিহাব উদ্দিন লালমোহন থানায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের নামে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। তবে ঘটনার পর থেকে এখন পর্যন্ত পুলিশ এই ঘটনার কোনো ক্লু উদঘাটন করতে পারেননি।

মানববন্ধনে দাঁড়িয়ে খুনীদের বিচার চেয়ে মেয়ে-ছেলেসহ এলাকাবাসীর দাবি:
জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধনে দাঁড়িয়ে মায়ের খুনিদের শনাক্ত করে বিচারের দাবি চেয়ে ছেলে শিহাব উদ্দিন বলেন, আমার বৃদ্ধা মাকে কে বা কারা নির্মমভাবে হত্যা করেছে তা গত একবছরেও পুলিশ উদঘাটন করতে পারেনি। তাহলে কি আমার মায়ের খুনিরা পার পেয়ে যাবে? আমি কি আমার মায়ের খুনিদের দেখতে পাব না?

কান্না জড়িত কণ্ঠে তিনি আক্ষেপ করে আরও বলেন, আমি যদি আমার মায়ের খুনিদের দেখতে না পাই, সঠিক বিচার না পাই, তাহলে আমি মনে করব, এই দেশে কোনো বিচার নাই।

রওশন আরার মেয়ে রুনু বেগম বলেন, আমার মা একজন ভালো মানুষ ছিলেন। কে বা কারা কি কারণে আমার মাকে নির্মমভাবে হত্যা করে সেফটি ট্যাংকের মধ্যে ফেলে রেখেছে, তা আজও আমরা জানতে পারছি না। আমার মায়ের সঙ্গে কারো কোনো বিবাদ নেই, তাহলে আমার মাকে হত্যা করল কারা?

হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার ফোরামের ভোলা জেলা সভাপতি মোবাশ্বের উল্লাহ চৌধুরী বলেন, রওশন আরা হত্যার ঘটনা একবছর অতিবাহিত হলেও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এখনো এই হত্যার কোনো রহস্য উদঘাটন করতে পারছে না। এর কারণ কি? আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করতে না পারে, তাহলে তা পারবে কে?

এসময় তিনি আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে দাবি জানিয়ে বলেন, রওশন আরা হত্যার রহস্য উদঘাটন ও কলেজ শিক্ষার্থী রাব্বি হত্যার ঘটনায় জড়িত খুনিসহ দেশের সকল হত্যাকাণ্ডের বিচার ও এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

মানববন্ধন ও পথসভায় নিহতের ছেলে শিহাব উদ্দিন, মেয়ে রুনু বেগম, রিনা বেগম, সাজেদা বেগম, সালমা বেগম, বাবা শাহজাহান, রওশন আরার ভাই জসিম উদ্দিন, আবুল কালাম আজাদ, বোন মাসুদা বেগম, আয়শা, ফাতেমা, হাছিনা ও জীবননেছাসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

মানববন্ধন ও পথসভা শেষে নিহতের পরিবার জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে এই ঘটনার রহস্য উদঘাটনের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি প্রদান করেন।

মামলা তদন্তে যা পেল পুলিশ:

রওশন আরার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) কাজল ল নিউজ টুয়েন্টিফোরকে বলেন, রওশন আরা হত্যা ঘটনার পর নিহতের ছেলে শিহাব উদ্দিন বাদী হয়ে লালমোহন থানায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়ের হওয়ার দেড়মাস পর তিনি তদন্তের দায়িত্ব পান। তদন্তকালে এক নারীসহ পাঁচ ব্যক্তিকে সন্দেহজনকভাবে পুলিশ গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়। তাদের মধ্যে লালমোহন উপজেলা যুবদল সভাপতি কবির হাওলাদারও ছিলেন। বর্তমানে তারা সবাই উচ্চ আদালত থেকে জামিনে আছেন। আসামিরা কেউই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়নি। তাদের দাবি ছিল, রওশন আরা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তারা কেউই জড়িত নয়।

রহস্য উদঘাটনে ৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন:

তদন্ত কর্মকর্তা আরও জানান, রওশন আরা হত্যার ঘটনাটি খুবই আলোচিত একটি ঘটনা। জেলা পুলিশ সুপার মাহিদুজ্জামানের নির্দেশে গেল কয়েকদিন আগে এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনের জন্য ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির প্রধান করা হয় ডিবির ইন্সপেক্টর মেজবাহ উদ্দিনকে। পুলিশ আশা করছে, খুব দ্রুতই এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হবে।

ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে যা পেল পুলিশ:

তদন্ত কর্মকর্তা কাজল জানান, রওশন আরা হত্যার ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, অজ্ঞাতপরিচয় আসামিরা তার মাথায় ভারী কোনো জিনিস দিয়ে আঘাত করেছে। তার মাথা প্রায় ৪ ইঞ্চি পর্যন্ত ফেটে গেছে। মাথার খুলি ভেঙে ভিতরে ডুকে গেছে। এছাড়াও লাশের গলায় মারাত্মক আঘাত রয়েছে। দুর্বৃত্তরা তার মাথায় আঘাত করার পাশাপাশি তাকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যার আলামতও পাওয়া গেছে। তাকে হত্যার পর সেফটি ট্যাংকে লাশ ফেলে দেওয়ায় আসামিদের আঙ্গুলের ছাপ স্পষ্ট করে আসছে না।

পুলিশ সুপারের বক্তব্য:

ভোলা পুলিশ সুপার মো. মাহিদুজ্জামান জানান, কিছু কিছু হত্যার রহস্য উদঘাটনে বিলম্ব হয়। যার নানান কারণ থাকে। রওশন আরাসহ ভোলায় হত্যা হওয়া সকল ঘটনার রহস্য উদঘাটন করে মূল আসামিদেরকে গ্রেফতারের জন্য পুলিশ নিরলসভাবে কাজ করছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭:৪৪:২০   ২১১ বার পঠিত