আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে রাজবাড়ীর দুইটি সংসদীয় আসন থেকে ১৬ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। এর মধ্যে ৯ জন দলীয় প্রার্থী ও ৫ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের শেষ দিনে সোমবার (৪ ডিসেম্বর) স্বতন্ত্র ৫ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করেছেন জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক আবু কায়সার খান।
মনোনয়ন বাতিল হওয়া স্বতন্ত্র প্রার্থীরা হলেন- রাজবাড়ী-১ আসনের স্বপন কুমার সরকার, সদ্য পদত্যাগ করা সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইমদাদুল হক বিশ্বাস, মো. আ. মান্নান মুসল্লী, আশিশ আকবর সুবির ও রাজবাড়ী-২ আসনের কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নূরে আলম সিদ্দিকী হক। এক শতাংশ ভোটারের তথ্যের গরমিল থাকায় তাদের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, রাজবাড়ী-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আশিশ আকবর সুবিরের ১০ জন ভোটারের তথ্য যাচাই-বাছাইয়ে সাতজন ভোটারের সমর্থনের তথ্য সঠিক পাওয়া যায়নি। এর মধ্যে দুইজন ভোটারকে মৃত পাওয়া গেছে। বাকি অবশিষ্ট ৫ জন ভোটার জানান, তারা রাজবাড়ী-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইমদাদুল হক বিশ্বাসের ১০ জন ভোটারের তথ্য যাচাই-বাছাইয়ে দুইজন ভোটারের সমর্থনের তথ্য সঠিক পাওয়া যায়নি। তারা জানান, তারা ইমদাদুল হক বিশ্বাসের পক্ষে তালিকায় স্বাক্ষর করেননি। তাই ১% ভোটারের তথ্য সঠিক না পাওয়ায় তার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।
অপরদিকে রাজবাড়ী-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নূরে আলম সিদ্দিকী হকের ১০ জন ভোটারের মধ্যে ৪ জনের তথ্যের গরমিল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে তিনজন প্রবাসীর স্বাক্ষর জাল ও একজন পুলিশ সদস্যের স্বাক্ষর জাল প্রমাণিত হয়েছে।প্রার্থীর পক্ষে তালিকায় স্বাক্ষর বা টিপসই করেননি।\
এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আ. মান্নান মুসল্লী ও স্বপন কুমার সরকারের ১ শতাংশ ভোটারের তথ্যের গরমিল থাকায় তাদের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।
এ বিষয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নূরে আলম সিদ্দিকী হক তার ফেসবুকে একটি পোস্টে লিখেন, ‘আমার প্রাণপ্রিয় রাজবাড়ী-২ আসনের সম্মানিত ভোটারবৃন্দ আসসালামু আলাইকুম। আপনারা অনেকেই জানতে চেয়েছেন কী কারণে মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। প্রতিটি আসনে মোট ভোটারের ১% এর সম্মতিসূচক অর্থাৎ আমাদের আসনে প্রায় ৫৩০০ জনের মতো ভোটারকে প্রার্থীর পক্ষে সম্মতি দিতে হয়। আমি দুইবার কালুখালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলাম। কীভাবে আমাকে হারানো হয়েছে সেটা আপনারাই ভালো জানেন। রাজবাড়ী-২ আসনে আমার ৫৩০০ হাজার ভোটার বা সমর্থক নাই, এটাও কি আমাদের জনগণ বিশ্বাস করে?
রাজবাড়ীর জনপ্রিয় উপজেলা চেয়ারম্যান ইমদাদুল হক বিশ্বাসসহ রাজবাড়ী জেলার সকল স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়ন একযোগে বাতিল করা হয়েছে। আমরা যেহেতু মানুষ, সুতরাং ভুলত্রুটি হলেও হতে পারে। কিন্তু রাজবাড়ী জেলার দুইটি আসনের সকল স্বতন্ত্র প্রার্থীর একযোগে মনোনয়ন বাতিল, জনমনে নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, আমার মনোনয়নপত্র সম্পূর্ণ অবৈধভাবে বাতিল করা হয়েছে। আমি নির্বাচন কমিশনে আপিল করবো। ষড়যন্ত্র করে আমার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।
অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সদ্য পদত্যাগ করা সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইমদাদুল হক বিশ্বাস ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি চারবারের উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। আমার ভুল হওয়ার কথা নয়। স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করতে গিলে কী কী করতে হয় সেটা আমার জানা আছে। আমার মনোনয়নপত্র অবৈধভাবে বাতিল করা হয়েছে। আমি কমিশনে আপিল করবো।
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়ন ফরম যাচাই-বাছাই ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর। মনোনয়ন আপিল ও নিষ্পত্তি ৬ থেকে ১৫ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৭ ডিসেম্বর। প্রতীক বরাদ্দ হবে ১৮ ডিসেম্বর এবং নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত চলবে। ভোটগ্রহণ আগামী বছরের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে নির্বাচনের জন্য ৬৬ জন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ৫৯২ জন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার নিয়োগ চূড়ান্ত করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩:১৫:৩৬ ১০৬ বার পঠিত