রাজধানী ঢাকার শাহআলী থানার এএস আই হুমায়ুন কবীর হত্যা মামলায় নিম্ন আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি ও যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত এক আসামিকে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট। খালাস প্রাপ্ত আসামিরা হলেন— হুমায়ুন কবীরের স্ত্রী মোছা. রহিমা সুলতানা রুমি, মো. রাফা এ মিষ্টি ও মোছা. রিয়া।
বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান ও বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলামের হাইকোর্টর দ্বৈত বেঞ্চ এ রায় দেন।
আদালতে আসামিদের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান, অ্যাডভোকেট রাফসান আলভী ও ব্যারিস্টার খালেদ মাহমুদুর রহমান আদনান। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুজিত চ্যাটার্জি বাপ্পী।
আইনজীবী রাফসান আলভী ল নিউজ ২৪ কে বলেন, রায়ে আদালত পর্যবেক্ষণে বলেছেন, আসামি রহিমা সুলতানা রুমির ১৬৪ ধারার দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণযোগ্য নয়। ট্রু ও ভলান্টারি নয়। শুধুমাত্র দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির ওপর ভিত্তি করে শাস্তি নিশ্চিত করা যায় না। অন্যান্য সাক্ষী দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি সমর্থন না করলে এর কোনো ভিত্তি নেই। চাক্ষুষ সাক্ষী সম্পর্কে আদালত বলেছেন, কাজের মেয়ে তসলিমা জেরায় স্বীকার করে যে, আদালত ‘পুলিশের মতো করে আমার জবানবন্দি লিখে আজকে ফুঁপির সঙ্গে এসেছি। এছাড়া কোনো পুলিশ সাক্ষী এবং বাড়ির ভাড়াটিয়া তসলিমার উপস্থিতি নিয়ে কোনো সমর্থনযোগ্য সাক্ষী দেয়নি। সরকারপক্ষ মামলার মোটিভ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়। এক্সট্রা ম্যাটারিয়াল অ্যাফেয়ার্সের জন্য ‘হাজবেন্ড কিলিং’ হয় আমাদের সমাজে কিন্তু এই মামলায় মৃত পুলিশের সঙ্গে কথিত ‘নুপুর’র সঙ্গে সম্পর্কের কোনো সাক্ষী কোর্টে উপস্থাপন করা হয়নি। হত্যার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হয়নি। এ কারণে সব আসামিকে খালাস দিয়েছেন।
এর আগে ২০১৭ সালের ৩০ এপ্রিল ঢাকার শাহআলী থানার এএসআই হুমায়ুন কবীর হত্যা মামলায় স্ত্রী মোছা. রহিমা সুলতানা রুমিসহ দুইজনকে মৃত্যুদণ্ড ও অপর একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত। ঢাকার চার নম্বর দ্রুত ট্রাইব্যুনালের বিচারক আব্দুর রহমান সরদার এ রায় দেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অপর আসামি মো. রাফা এ মিষ্টি ও যাবজ্জীবন পাওয়া আসামি হলেন মোছা. রিয়া। পরে নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন আসামিরা।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৩ সালের ১৪ ডিসেম্বর মাঝরাতে নিহত এএসআই হুমায়ুন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের সিনিয়র নার্স রহিমা সুলতানা রুমিকে বিয়ে করেন। তাদের ঘরে একটি ছেলে সন্তানও আছে। মিরপুরের পূর্ব মনিপুরের ১০৫০/৩ বাসায় তারা বাস করতেন। তাদের মধ্যে পারিবারিক কলহের জের ধরে আসামিরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হুমায়ুন কবীরকে ইনশেকন পুশ ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। এ ঘটনায় নিহতের ভাই মো. বজলুর রশীদ বাদী হয়ে ঘটনার পরদিন মিরপুর মডেল থানায় মামলা করেন। পরবর্তীতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও মিরপুর মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মইনুল ইসলাম তিনজনকে অভিযুক্ত করে ২০১৪ সালে ২০ জুলাই আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। আদালত ২০১৫ সালের ১৪ জুন আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। রাষ্ট্রপক্ষের ১৪ জন সাক্ষীর মধ্যে ৯ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১১:৩৮:৪৩ ১৩২ বার পঠিত