নানা আলোচনা ও জল্পনা কাটিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেটে শেষ হয়েছে তামিম ইকবাল অধ্যায়। ২০২৩ সালে আচমকা অবসর নেয়ার পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে মাঠে ফিরেছিলেন তামিম ইকবাল খান। পরে দুইটি ওয়ানডে ম্যাচ খেললেও আর লাল-সবুজের জার্সিতে মাঠে নামা হয়নি এই বাঁহাতি ওপেনারের। আগামী মাসে অনুষ্ঠেয় আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে তামিম খেলতে পারেন এমন আলোচনা ছিল। জাতীয় দলের নির্বাচকরা তাকে ফেরাতে চেষ্টাও চালিয়েছিলেন।
অবশেষে শুক্রবার ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে তিনি নিজেই নিশ্চিত করেন, জাতীয় দলের হয়ে আর মাঠে নামছেন না বাংলাদেশ ক্রিকেটের সর্বকালের সেরা ওপেনার। এই ঘোষণার মধ্যদিয়ে ইতি ঘটলো তামিমের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের। তামিমের পর পঞ্চপাণ্ডবের আরেক পাণ্ডব সাকিব আল হাসানেরও ‘বিদায়ঘণ্টা’ বাজতে চলেছে।
গত সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে ভারত সফর এই অলরাউন্ডার জানিয়েছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র-ওয়েস্ট ইন্ডিজে হওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেই তিনি ২০ ওভারের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের শেষ ম্যাচ খেলে ফেলেছেন। আর অক্টোবরে মিরপুরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে শেষ টেস্ট খেলার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এরপর সাকিবের ফেরা নিয়ে কত ঘটনাই ঘটেছে তা সবারই জানা। ঘরের মাঠে বিদায়ী টেস্ট খেলার ইচ্ছে তার পূরণ হয়নি। ফলে বলা যায়, সাদা পোশাকেও শেষ হয়ে গেছে সাকিবের ক্যারিয়ার। নিরাপত্তা ইস্যুতে দেশে আসতে পারছেন না নাম্বার সেভেন্টি-ফাইভ। তাই চলমান বিপিএলও মিস করেছেন টাইগার ক্রিকেটের এই পোস্টারবয়।
একসাথে জুটি বেঁধে দলের অনেক বিপর্যয় সামলেছেন সাকিব-তামিম
জাতীয় দলের হয়ে দুই ফরম্যাটে সাকিবের ক্যারিয়ারের একপ্রকার ইতি ঘটলেও বাকি ছিল কেবল ৫০-ওভারের ক্রিকেট। আগামী মাসে পাকিস্তান ও দুবাইতে বসতে যাওয়া আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি দিয়েই সাদা বলের ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর ইচ্ছে ছিল সাকিবের। কেননা, দেশের মাটিতে তার খেলায় ‘নিরাপত্তা’ ইস্যু থাকলেও বিদেশের মাটিতে আসর হওয়ায় কোনো সমস্যা ছিল না। জল্পনা ছিল, চ্যাম্পিয়ন ট্রফিতে খেলবেন সাকিব। তবে আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, জাতীয় দলের হয়ে আর মাঠে নামা হচ্ছে না একসময়কার ‘বাংলাদেশের জান, বাংলাদেশের প্রাণ’ খেতাব পাওয়া এই তারকার।
তার ক্যারিয়ার শেষ ধরে নেয়ার কারণ, আইসিসির এক ঘোষণা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিষিদ্ধ হয়েছে সাকিব আল হাসানের বোলিং। মূলত বোলিং অ্যাকশনের কারণেই নিষিদ্ধ হয়েছেন বাঁহাতি স্পিনার। গত সেপ্টেম্বরে ইংলিশ কাউন্টিতে একটি ম্যাচ খেলেছিলেন সাকিব। সেই ম্যাচে তার বোলিং অ্যাকশন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন ম্যাচের আম্পায়ার। এরপর ইংল্যান্ডের লাফবোরো ইউনিভার্সিটিতে বোলিং অ্যাকশনের পরীক্ষা দেন, তবে সেই পরীক্ষায় পাশ করতে পারেননি। এর ফলে, তার বোলিং নিষিদ্ধ করে ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড। ফলে নিষিদ্ধ হয় সাকিবের বোলিং।
এরপর চেন্নাইয়ে দ্বিতীয়বার বোলিং পরীক্ষা দেন বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক। তবে এবারও তিনি পাশ করতে পারেননি। চেন্নাইয়ে পরীক্ষায় দেখা গেছে, বল করার সময় সাকিবের কনুই ২৫ ডিগ্রি বা তার বেশি ভেঙেছে। যদিও আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী, একজন বোলার সর্বোচ্চ ১৫ ডিগ্রি পর্যন্ত তার কনুই বাঁকাতে পারবেন। এর জেরেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাকিবের বোলিং নিষিদ্ধ করেছে আইসিসি।
বোলিংয়ের অনুমতি পেতে হলে সাকিবকে পরীক্ষায় পাশ করতে হবে। সেই পরীক্ষা চাইলে তিনি আরও দিতে পারবেন। তবে একবার নিষেধাজ্ঞামুক্ত হয়ে বোলিংয়ে ফেরার পর যদি আবার প্রশ্নবিদ্ধ হন, তাহলে পরবর্তী এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ থাকবেন। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির জন্য আইসিসিকে আগামীকালের মধ্যে দল পাঠাতে হবে সংশ্লিষ্ট বোর্ডগুলোকে। যদিও ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সেই দলে পরিবর্তন আনা যাবে। যেহেতু চ্যাম্পিয়নস ট্রফির জন্য দল দেয়ার সময় বেশি হাতে নেই, তাই বলাই যায়, পরীক্ষা দিয়ে সাকিবের পাশ করার জন্য অপেক্ষা করার সময় নেই বিসিবির হাতেও।
ফলে সাকিবকে দলে নিতে হলে শুধু ব্যাটার হিসেবেই চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দলে নিতে হবে এই বাঁহাতি তারকাকে। তবে এখানেই রয়েছে বড় ‘সমস্যা’। কেননা, দীর্ঘদিন থেকে হাসছে না সাকিবের ব্যাট। শেষ দুই বছরে ব্যাট হাতে দলের জন্য উল্লেখ করার মতো তেমন অবদান নেই বললেই চলে। তিন ফরম্যাটেই ব্যাট হাতে ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থ হয়ে ফিরেছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। তবে বল হাতে দলের জন্য ভালোই অবদান রাখছিলেন তিনি।
ব্যাটিংয়ে ফর্ম হারানো সাকিবের ‘মূল’ অস্ত্রই এখন নিষিদ্ধ। তাই ব্যাট হাতে ফর্মহীন সাকিবকে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দলে না দেয়ার সম্ভাবনাই অধিক। এরই মধ্যে গণমাধ্যমে খবর বেড়িয়েছে সাকিবকে বাদ দিয়েই দল সাজাচ্ছে বিসিবি। তাই বলা যায়, বাংলাদেশ ক্রিকেটে শেষ হয়েছে সাকিব আল হাসান অধ্যায়।
সাকিবের ক্যারিয়ার যদি শেষই হয়, নামের পাশে জ্বলজ্বল করবে ব্যাট হাতে তার ১৪ হাজার ৭৩০ রান ও ৭১২টি উইকেট। ১৮ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে নানা রকম আলোচনার জন্ম দিয়ে যাওয়া সাকিব থামবেন জল্পনা–কল্পনা দিয়েই।
বাংলাদেশ সময়: ১:১৮:৫৩ ১২ বার পঠিত