আদালত অপসারণের দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ-সড়ক অবরোধ * তবে শুনানির জন্য আদালত কোথায় বসবে, তা নির্ধারণ করা হয়নি।
আদালতের এজলাস কক্ষে আগুন, শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ এবং সড়ক অবরোধের কারণে পুরান ঢাকার বকশীবাজারে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে অস্থায়ী আদালতে বৃহস্পতিবার বিডিআর বিদ্রোহ মামলার জামিন শুনানির কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব হয়নি। এ মামলার পরবর্তী জামিন শুনানি ১৯ জানুয়ারি নির্ধারণ করা হয়েছে।
ঢাকার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-২-এর বিচারক ইব্রাহিম মিয়ার আদালতে এ মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিডিআর বিদ্রোহ মামলা পরিচালনাকারী রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মো. বোরহান উদ্দীন। তবে শুনানির জন্য আদালত ঠিক কোথায় বসবে, তা এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। আলোচিত বিডিআর বিদ্রোহ মামলার জামিন শুনানির তারিখ ছিল বৃহস্পতিবার। রাজধানীর বকশীবাজারে আলিয়া মাদ্রাসার মাঠে অস্থায়ী আদালতে শুনানি হওয়ার কথা ছিল। তবে এ আদালতে বিচারকাজ পরিচালনা না করতে বুধবার রাত থেকে রাস্তায় নামেন মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা। এ মাঠ থেকে অস্থায়ী আদালত তুলে নিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন তারা। এর মধ্যেই বুধবার রাতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় আদালতের এজলাস কক্ষে। দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে পুড়ে যায় আদালতের সব নথিপত্র, আসবাবপত্র, এসি, চেয়ার, টেবিলসহ সবকিছু। কাচগুলোও ভেঙেচুড়ে একাকার হয়েছে। তবে এজলাস কক্ষে কীভাবে আগুন লেগেছে বা কারা লাগিয়ে দিয়েছেন, তা নিয়ে সকাল থেকেই তৈরি হয় ধোঁয়াশা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কিংবা মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা কেউ আগুনের সঠিক তথ্য জানাতে পারেনি। পুলিশ বলছে, তাদের কাছে আগুনের কোনো তথ্যই নেই। শিক্ষার্থীদের দাবি, বুধবার মধ্যরাতে কয়েকজন লোক এসে মাঠের ফটকে লাগানো তালা ভাঙা বা কাটার চেষ্টা করেন। পরে ওই লোকগুলোকে ধাওয়া দেয় ছাত্ররা। এ সময় তারা পালিয়ে যায়। শিক্ষার্থীরা বলছেন, সরকারের অনেক জায়গা রয়েছে। সরকার চাইলে নতুন করে ভবন তৈরি করতে পারে। কিন্তু সেই উদ্যোগ না নিয়ে একটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠে অস্থায়ী আদালত চালু রাখা ঠিক নয়। আমরা সরকারের এ সিদ্ধান্ত মানতে পারি না। অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত কোনোভাবেই এখানে বিচারকাজ করতে দেওয়া হবে না।
সরেজমিন দেখা যায়, আলিয়া মাদ্রাসার মাঠের সব প্রবেশপথ বাঁশ দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিচারক ও আইনজীবীরা যেন কোনোভাবেই ভেতরে প্রবেশ করতে না পারেন, সেজন্য সড়কে অবস্থান নিয়েছেন তারা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কঠোর অবস্থানে ছিলেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। এর মধ্যেই আদালতে প্রবেশে বাধা দেওয়া হয় বিচারক ইব্রাহিম মিয়াকে। তার গাড়ি আটকে রেখে বিক্ষোভ দেখান শিক্ষার্থীরা।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতায় এদিন দুপুর পৌনে ১২টার দিকে আদালত চত্বরে আসেন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-২-এর বিচারক ইব্রাহিম মিয়া। প্রসিকিউশন টিম, আইনজীবী ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে পুড়ে যাওয়া এজলাস কক্ষ পরিদর্শন করেন তিনি। পরে রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে ১২টা ১০ মিনিটে চলে যান। পরে জানানো হয়, সেখানে বিডিআর বিদ্রোহ মামলার বিচারকাজ আর ‘হচ্ছে না’। এমন তথ্য জানার পর সড়ক ছেড়ে দেন সরকারি আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা। এ সময় তাদের বিজয় মিছিল করতে দেখা গেছে। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মো. বোরহান উদ্দিন বলেন, আজকের প্রেক্ষাপটে আদালত পরিচালনা করার মতো পরিবেশ নেই। বিচারক এটা অবহিত হয়েছেন। মামলার পরবর্তী তারিখ কবে হবে, আমাদের ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে বিচারক ঠিক করবেন। তারিখটা আজই (বৃহস্পতিবার) জানিয়ে দেওয়া হবে। দ্রুততম সময়ের মধ্যেই তারিখ নির্ধারণ করা হবে। জামিন শুনানির বিষয় নিষ্পত্তি হোক-এটা নিয়ে আমরা সবাই আন্তরিক ছিলাম। তা তো হলো না।
১৫ বছর আগে ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন সীমান্তরক্ষী বাহিনী বাংলাদেশ রাইফেলসের (বিডিআর) সদর দপ্তর ঢাকার পিলখানায় বিদ্রোহ হয়। এতে বিডিআর-এর তৎকালীন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদসহ ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা নিহত হন। সব মিলিয়ে ৭৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পিলখানায় বিডিআরের বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালনরত সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যরাও সেদিন নৃশংসতার শিকার হন। এ হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় হওয়া মামলার বিচারকার্য পরিচালনার জন্য বকশীবাজার এলাকার সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা ও ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারসংলগ্ন মাঠে নির্মিত ভবনটিকে অস্থায়ী আদালত বানিয়ে বিচার পরিচালিত হয়ে আসছে। ওই মামলার বিচারকাজ আবারও বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়ার কথা ছিল। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও এজলাস কক্ষে আগুনের ঘটনায় সেখানে বিচারকাজ করা সম্ভব হয়নি। এ আদালতে বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ারও বিচার হয়েছিল।
বাংলাদেশ সময়: ১:০২:০৭ ৪ বার পঠিত