অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ দেশের আইন অঙ্গনের একজন উজ্জ্বল নক্ষত্র ও অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত ছিলেন। কিংবদন্তিতুল্য আইনজীবী এ এফ হাসান আরিফের মৃত্যুর সংবাদে পৃথক প্রতিক্রিয়ায় সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবীরা এ কথা বলেন।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল বলেন, এএফ হাসান আরিফ আইনজীবী হিসেবে অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত ছিলেন। তিনি একজন ভালো মানুষ ও বিশিষ্ট আইনজীবী ছিলেন। আইনজীবী হিসেবে ছিলেন জুনিয়র বান্ধব, সকলের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতেন তিনি।
হাসান আরিফকে একজন নিরহংকারী মানুষ হিসেবে উল্লেখ করে ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল বলেন, দেশের সর্বোচ্চ আদালত তার মতো একজন অভিজ্ঞ আইনজীবীর অভাব দীর্ঘ দিন অনুভব করবে। বহু মামলায় একজন অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে তিনি আদালতকে আইনের ব্যাখ্যা ও মতামত দিয়ে সহায়তা করেছেন। তার মৃত্যুতে দেশ ও আইনজীবী সমাজ একজন অভিভাবককে হারালো।
বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের এনরোলমেন্ট কমিটির সদস্য ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, এ এফ হাসান আরিফ একজন সজ্জন ও সৎ মানুষ ছিলেন। তার গ্রহণযোগ্যতার অনন্য দৃষ্টান্ত হলো তিনি দুইটি দল নিরপেক্ষ সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য মানুষ ছিলেন। তিনি সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ও সাবেক এটর্নি জেনারেল।
তার মৃত্যু দেশ ও আইন অঙ্গনের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি উল্লেখ করে রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, এ এফ হাসান আরিফ একজন আইনজীবী হিসেবে সাফল্যের চূড়ান্ত শিখরে পৌঁছেছেন। আইনজীবী সমাজের সদস্য হিসেবে রাষ্ট্রের বিভিন্ন দায়িত্বে তার নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য ভূমিকা এক অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। ভবিষ্যতেও তাকে নিয়ে আইনজীবীরা গৌরব বোধ করবে।
ব্যারিস্টার কাজল বলেন, একজন অভিজ্ঞ মেধাবী আইনজীবী ও বিনয়ী মানুষ হিসেবে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য এএফ হাসান আরিফ অনুসরণীয় ও অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবেন।
সুপ্রিম কোর্টের এডভোকেট ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া বলেন, ‘এক বাক্যেই বলা যায়, এ এফ হাসান আরিফের মৃত্যুতে আইন অঙ্গনে যে শূন্যতার সৃষ্টি হলো তা কোনভাবেই পূরণ হবার নয়’।
তিনি বলেন, আইনজীবী হিসেবে এএফ হাসান আরিফ ছিলেন দিকপাল। আইন পেশায় ও আদালতের প্রতি তার নমনীয়তা, শিষ্টাচার অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। তার মৃত্যুতে আইন অঙ্গনে এক নক্ষত্রের বিদায় হলো। একজন গ্রহণযোগ্য মানুষ হিসাবে হাসান আরিফ বার বার রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে নিয়োজিত হওয়া আইনজীবীদের জন্য ছিলো অনেক গর্বের।
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ শুক্রবার ইন্তেকাল করেছেন। উপদেষ্টা হাসান আরিফের ছেলে মুয়াজ আরিফ বলেন, বিকেল ৩টার দিকে বাবা বাসায় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে মেঝেতে পড়ে গেলে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে তার মৃত্যুর কথা জানান চিকিৎসকরা।
শুক্রবার বাদ এশা রাজধানীর ধানমন্ডির সাত নম্বর বায়তুল আমান মসজিদে এ এফ হাসান আরিফের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া আজ শনিবার বেলা ১১টায় হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে মরহুমের আরেকটি জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
গত ৮ আগস্ট গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারে প্রথমে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্ব পেয়েছিলেন হাসান আরিফ। পরে তাকে ভূমি এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়।
তিনি ২০০১ সালের অক্টোবর থেকে ২০০৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত এটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ থেকে ২০০৯ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আইন উপদেষ্টা ছিলেন। এ এফ হাসান আরিফ তার কর্মজীবন শুরু করেন ১৯৬৭ সালে ভারতের পশ্চিম বাংলার কলকাতা হাইকোর্ট থেকে। এরপর ১৯৭০ সালে তিনি ঢাকায় চলে আসেন এবং হাইকোর্টে আইনজীবী হিসেবে কাজ শুরু করেন।
এর আগে এ এফ হাসান আরিফ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আইন উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ, সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, বাংলাদেশ ব্যাংক, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, গ্রামীণফোন বাংলাদেশ।
তিনি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের পরামশর্ক, নির্মাণ সালিস, বাণিজ্যিক সালিস, অর্থ, ব্যাংকিং এবং সিকিউরিটিজ বিষয়, করপোরেট, বাণিজ্যিক ও ট্যাক্সেশন বিষয়, সাংবিধানিক আইন বিষয়, আরবিট্রেশন এবং বিকল্প বিরোধ সমাধানের অন্যান্য পদ্ধতি নিয়ে কাজ করছেন। তিনি বর্তমানে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির কমপ্লেক্সের উপদেষ্টা ছিলেন।
এ এফ হাসান আরিফ ১৯৪১ সালে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। এরপর স্নাতক এবং এলএলবি ডিগ্রি সম্পন্ন করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
বাংলাদেশ সময়: ৮:৩০:১৬ ১৪ বার পঠিত