শেখ হাসিনার নির্দেশেই জুলাই-আগস্টের গণহত্যার সময় ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়েছিল বলে স্বীকার করেছেন সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার সেফহোমে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি এমন জবানবন্দি দিয়েছেন বলে বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন চিফ প্রসিকিউটর মুহাম্মদ তাজুল ইসলাম। এদিকে জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যারা অংশগ্রহণ করেছে তাদের টার্গেট করে হত্যা করা হচ্ছে বলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দিয়েছেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেসনালসের (বিইউপি) এক শিক্ষার্থী।
আবেদনে তিনি টার্গেট কিলিংয়ের বিচার ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা চেয়েছেন। এছাড়া পিলখানায় তৎকালীন বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) সদর দপ্তরে ২০০৯ সালে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিচারের চেয়ে এদিন ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দিয়েছেন নিহতদের স্বজনরা। অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সেনাপ্রধান মইন ইউ আহমেদ, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক সিদ্দিকিসহ ৫৮ জনকে আসামি করা হয়েছে।
আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণকারীদের টার্গেট কিলিং করা হচ্ছে * পিলখানা হত্যায় হাসিনাসহ ৫৮ জনের বিরুদ্ধে শহিদ পরিবারের অভিযোগ
এ সময় শহিদ পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। তারা গণমাধ্যমকে বলেন, পিলখানায় ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা নৃশংসভাবে খুন হওয়ার ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত ছিল। এই হত্যাকাণ্ডকে বিডিআর বিদ্রোহ বলবেন না, বিদ্রোহ এরকম হয় না। সবকিছুই পূর্বপরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে। দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব নষ্ট করার জন্যই এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছে।
এদিন ট্রাইব্যুনাল জুলাই-আগস্টের গণহত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় সাবেক পুলিশ প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, এনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসানসহ আট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুই মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালে দাখিল করতে বলা হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ নির্দেশ দেন। অন্যদিকে জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ ৭০ জনের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের হয়েছে।
গণহত্যা আড়াল করতে শেখ হাসিনার নির্দেশেই ইন্টারনেট বন্ধ হয়: চিফ প্রসিকিউটর মুহাম্মদ তাজুল ইসলাম জানান, জুলাই-আগস্টের গণহত্যার সময় শেখ হাসিনার নির্দেশেই ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়েছিল। এ কথা স্বীকার করেছেন সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার সেফহোমে জিজ্ঞাসাবাদে পলক এ তথ্য দিয়েছেন। এদিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আট কর্মকর্তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির, অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল ও শুনানি নিয়ে আদালত আদেশ দেন।
তাজুল ইসলাম বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে পলক স্বীকার করেছেন, ইন্টারনেট বন্ধ করে গণহত্যা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। আর ইন্টারনেট বন্ধের এ নির্দেশ দিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি আরও বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের সময় কোনো দুর্ঘটনার কারণে বা কোনো ভবনে আগুন লাগার কারণে ইন্টারনেট বন্ধ ছিল না। সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক নিজেই স্বীকারোক্তি দিয়েছেন যে, শেখ হাসিনার নির্দেশে ওয়াটসআপ গ্রুপ খুলে দেশের ও আন্তর্জাতিক ইন্টারনেটের সব গেটওয়ে বন্ধ রাখা হয়। ইন্টারনেট বন্ধ রাখার উদ্দেশ্য ছিল গণহত্যার বিষয় যেন কেউ জানতে না পারে।
টার্গেট কিলিং করা হচ্ছে: আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দেওয়া অভিযোগে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেসনালসের (বিইউপি) শিক্ষার্থী সানজিদ হাসান তানভীর বলেন, জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যারা অংশগ্রহণ করেছে তাদের টার্গেট কিলিং করা হচ্ছে। কিলিংয়ে জড়িতদের বিচার এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানাই।
তানভীর আরও বলেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন। তারা গণহত্যা চালানোর পরও প্রতিনিয়ত ফেসবুক পেজে সাইবার স্পেস ব্যবহার করে প্রকাশ্যে হুমকি ধমকি দিয়ে আসছে। যারা আন্দোলনে ছিল তাদের হত্যা করা হবে বলে প্রচ্ছন্ন হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তারা গেরিলা যুদ্ধের নামে আমাদের প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছে। নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের সন্ত্রাসীদের এমন হুমকি কেন? এমন প্রশ্ন আমরা জাতির সামনে রাখতে চাই।
তিনি বলেন, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী গাজীপুরের সাকিবকে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করে। পরবর্তী সময়ে সে জান বাঁচাতে পালিয়ে যায়। এ ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম প্রতিনিয়ত ঘটছে, আমরা দেখে আসছি। আমাদের প্রশ্ন রাষ্ট্র আমাদের নিরাপত্তা দিচ্ছে কিনা? কারণ ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা ক্যাডাররা আমাদের তৃণমূলের আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা করেছে।
সানজিদ হাসান বলেন, এসব সন্ত্রাসী এখনো ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের মধ্যে বিন্দুমাত্র অনুশোচনা নেই। টার্গেট করে কিলিং করার পর তারা বলছে আলহামদুলিল্লাহ। আমরা এসব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই। সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করা হোক সেটা চাই। আমরা এজন্য আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি। গণহত্যা চলার সময় আমরা যারা মাঠে আন্দোলন করেছি তারা মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার সাক্ষী। সাক্ষীদের সুরক্ষা দেওয়ার জন্য বাংলাদেশে আইন আছে, আমরা সেজন্য আদালতে এসেছি।
নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ও সমন্বয়ক কাওসার হাবিব বলেন, আমাদের সহকর্মীদের বিভিন্নভাবে হামলা করা হচ্ছে। সহকর্মীরা টার্গেট কিলিংয়ের শিকার হচ্ছে।
বিডিআর বিদ্রোহ নয়, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড : আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের কাছে পিলখানা গণহত্যায় শহিদ সেনা অফিসারদের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ জমা দেন। এরপর তাদের মধ্যে কয়েকজন গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তৎকালীন বিডিআর-এর ডিজি মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের ছেলে রাকিন আহমেদ, কর্নেল মুজিবুর হকের স্ত্রী ফেরদৌসী, কর্নেল কুদরত এলাহীর ছেলে সাকিব রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) হাসিনুর রহমান বীর প্রতীকসহ ১৫-২০ জনের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
পিলখানায় ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা নৃশংসভাবে খুন হওয়ার ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত ছিল বলে মন্তব্য করেছেন শহিদ কর্নেল মুজিবুল হকের স্ত্রী মেহরিম ফেরদৌসি। তিনি বলেন, এই হত্যাকাণ্ডকে বিডিআর বিদ্রোহ বলবেন না। বিদ্রোহ এরকম হয় না। সবকিছুই পূর্বপরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে।
মেহরিম ফেরদৌসি আরও বলেন, ওই দিন প্ল্যান করে মেরে লাশ পোড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এমনকি পরিবারের সদস্যদের ঘর থেকে ধরে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে। বাচ্চাদের বুট দিয়ে লাথি দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমাদের সঙ্গে সেদিন কী করা হয়েছে, তা আপনারা জানেন না। এটাকে (পিলখানা হত্যাকাণ্ড) পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলবেন। তদন্ত করলেই সত্যতা বের হয়ে আসবে এবং এটি জনসম্মুখে করতে হবে। আমরা আজও জানি না কিংবা আমাদের সন্তানরাও জানে না কী কারণে তাদের হত্যা করা হয়েছে। তাদের হত্যা করার জন্য কোনো একটি কারণ তো থাকতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ওই সময় অনেক সাংবাদিক শহিদদের দুর্নীতির অপবাদ দিয়েছেন। যা আমাদের জন্য লজ্জার। অথচ তারা সৎ কর্মকর্তা ছিলেন। যদি দুর্নীতি করে থাকেন তাহলে সেগুলোর নথিপত্র তো থাকবে। এখন আপনারা এগুলো বের করেন। দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব নষ্ট করার জন্যই এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে অ্যাডভোকেট উদয় তাসমীর বলেন, ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা হত্যার সঙ্গে আমরা মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং গণহত্যার সামঞ্জস্যতা পেয়েছি। এর সঙ্গে তৎকালীন অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তার দোসররা জড়িত ছিলেন। শেখ হাসিনা স্বাধীনতার সার্বভৌমত্বকে সংকটের মুখে ফেলার জন্য এবং তার স্বৈরশাসনকে দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য বৃহৎ এবং শক্তিশালী বাহিনীকে ধ্বংস করতে এই মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেছে। আজ আমরা শহিদ পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চিফ প্রসিকিউটরের কাছে একটি অভিযোগ দাখিল করেছি।
তিনি বলেন, আমরা যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করেছি এর মধ্যে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী, তার নিরাপত্তা উপদেষ্টা, আইনমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানরা রয়েছেন। আমাদের অভিযোগ খুবই সুস্পষ্ট। দুটি বাহিনীকে ধ্বংস করে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সার্বভৌমত্বকে সংকটের মুখে ফেলে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট মতাদর্শকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য দেশপ্রেমিক এবং দক্ষ অফিসারদের খুন করা হয়েছে। তাদের লাশে আগুন দেওয়া হয়েছে এবং বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে তাদের লাশকে ক্ষতবিক্ষত করা হয়েছে। তাদের পরিবারকে আটক করে জিম্মি করা হয়েছে এবং লুটপাট করা হয়েছে। এসব কিছুই মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসাবে গণ্য হয়। তাই কমিশন গঠনের মাধ্যমে এসব ঘটনার বিচারের দাবি জানানো হয়েছে।
রাকিন আহমেদ ভূঁইয়া বলেন, পিলখানায় ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা হত্যা করা হয়েছিল শুধুমাত্র বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কিংবা বাংলাদেশ রাইফেলসকে ধ্বংস করার জন্য নয়। দেশের সার্বভৌমত্ব ধ্বংস করার জন্য এই ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। সেদিন পিলখানার ভেতরে সেনা কর্মকর্তাদের যেভাবে মারা হয়েছে তা বলতে গেলে বুক কেঁপে ওঠে। এই হত্যাকাণ্ডে কী ধরনের নির্মমতা আর বর্বরতা ছিল তা কল্পনাও করা যায় না।
তিনি বলেন, সেনা কর্মকর্তাদের মাত্র একটি অপরাধ ছিল। আর সেটি হলো তারা বাংলাদেশকে ভালোবাসত। তারা বাইরের ষড়যন্ত্র থেকে দেশকে রক্ষা করত। আর আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে সেই তারাই বাইরের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন। গত ১৫ বছর আমাদের কী পরিমাণ নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে তা আপনাদের ধারণার মধ্যেই পড়ে না। রাকিন আহমেদ বলেন, আমরা চাই বিচারটা হোক। আমার বিশ্বাস আমাদের এবার বিজয় আসবেই। আর কোনো ষড়যন্ত্রকারী আমাদের থামিয়ে রাখতে পারবে না।
পিলখানা গণহত্যায় শহিদ সেনা অফিসারদের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা বলেন, শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় স্বার্থবিরোধী রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছে। সে লক্ষ্যে পরিকল্পিতভাবে সর্বপ্রথম বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার দুই শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান- বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর) ধ্বংসের নীলনকশা প্রণয়ন করে।
শহিদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আসা লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) হাসিনুর রহমান বীর প্রতীক গণমাধ্যমকে বলেন, পিলখানায় তৎকালীন বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) সদর দপ্তরে ২০০৯ সালে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সেনাপ্রধান মইন ইউ আহমেদ, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক সিদ্দিকিসহ ৫৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
মাথা নিচু করে প্রিজনভ্যানে ওঠেন মামুন: জুলাই-আগস্টের গণহত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় সাবেক পুলিশ প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, এনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসানসহ আট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুই মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালে দাখিল করতে বলা হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ নির্দেশ দেন।
গত ২০ নভেম্বর সাবেক পুলিশ প্রধান ও ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) সাবেক মহাপরিচালকসহ আট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এক মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে তাদের ট্রাইব্যুনালের মামলায় কারাগারে রাখতে নির্দেশ দেন আদালত। সেদিন এ মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য বৃহস্পতিবার দিন ধার্য করা হয়।
এদিন শুনানি শেষে ফের কারাগারে পাঠানো হয় সাবেক পুলিশ প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, এনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসানকে। এর মধ্যে আদালতের হাজত থেকে প্রিজনভ্যানে ওঠার সময় এনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালক জিয়াউল আহসান হাসতে থাকেন। তবে কোনো কথা বলেননি। আর মাথা নিচু করে দ্রুত পায়ে হেঁটে প্রিজনভ্যানে ওঠেন পুলিশের সাবেক প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। দুপুর ১টা ১৫ মিনিটের দিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে প্রিজনভ্যানে করে তাদের কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
আদালতে হাজির করা থেকে শুরু করে শুনানি চলাকালেও বেশ ফুরফুরে মেজাজে ছিলেন জিয়াউল আহসান। শুনানি চলাকালে তাকে আশপাশের অন্যদের সঙ্গে কথা বলতেও দেখা গেছে। আর পুরো সময়জুড়ে গম্ভীরমুখে ছিলেন চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। দুপুরে হাজত থেকে বেরিয়ে প্রিজনভ্যানে ওঠার সময় তিনি মাথা নিচু করে দ্রুত হেঁটে চলে যান।
আট কর্মকর্তা হলেন সাবেক পুলিশ প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, এনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসান, ঢাকা জেলার সাবেক পুলিশ সুপার মো. আব্দুল্লাহ আল কাফি, মিরপুর ডিএমপির সাবেক ডিসি মো. জসিম উদ্দিন মোল্লা, ঢাকার সাবেক অতিরিক্ত সুপার (সাভার সার্কেল) মো. শাহিদুর ইসলাম, যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান, গুলশান থানার সাবেক ওসি মাজহারুল হক এবং ঢাকা উত্তর ডিবির সাবেক পরিদর্শক মো. আরাফাত হোসেন। আদালতে প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর বিএম সুলতান মাহমুদ ও গাজী এমএইচ তামিম।
শেখ হাসিনাসহ ৭০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ: এদিন জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ ৭০ জনের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন কার্যালয়ে এ অভিযোগ দেন যাত্রবাড়ীর বাসিন্দা মো. আকাশ নামের এক যুবক। আবেদনে পুলিশ কর্র্তৃক গুলি করে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনেছেন ওই যুবক।
বাংলাদেশ সময়: ৭:৪০:৩৭ ১৪ বার পঠিত