ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়ে পরিবারের শঙ্কা
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গিয়ে প্রাণ হারান আল শাহরীয়ার হোসেন রোকন (২৩)। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পরিবারের পাশাপাশি স্থানীয় এক যুবদল নেতা বাদী হয়ে আরেকটি মামলা করেন। মাত্র ৪৫ মিনিটের ব্যবধানে একই ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় দুটি মামলা রেকর্ড হয়।
এদিকে একই ঘটনায় দুটি মামলা হওয়ায় ন্যায়বিচার প্রাপ্তি নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন নিহত রোকনের বাবা মনির হোসেন। তিনি জানান, মামলার বাদী যুবদল নেতা হিল্লোলকে তিনি চেনেন না। এমনকি মামলা করার সময় তার কিংবা পরিবারের কারও সঙ্গে বাদী কোনো যোগাযোগও করেননি।
জানা গেছে, মোহাম্মদপুরের কাটাসুর এলাকায় পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বাস করতেন রোকন। বাবা অসুস্থ থাকায় ফেরি করে খাতা-কলমসহ নানা সামগ্রী বিক্রি করে ছয় সদস্যের পরিবারের অন্ন জোগাড় করতেন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালীন ১৯ জুলাই কাটাসুর ঢালের পাশে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ কর্মীদের গুলিতে প্রাণ হারান তিনি। সে ঘটনার পর আদালতে রোকনের বাবা মনির হোসেন বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেন। পরে থানায় মামলা এজাহারভুক্ত হওয়ার পর জানতে পারেন রোকন হত্যার ঘটনায় রবিউল খান হিল্লোল নামে এক যুবদল নেতা বাদী হয়ে এই ঘটনায় আরেকটি হত্যা মামলা করেছেন।
তবে মামলার নথিপত্রে দেখা যায়, ৩ সেপ্টেম্বর মাত্র ৪৫ মিনেটের ব্যবধানে মামলা দুটি এজাহারভুক্ত করেন মোহাম্মদপুর থানার ওসি আলী ইফতেখার হাসান। রোকনের বাবার মামলাটি ৩ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটে থানায় এজাহারভুক্ত করা হয়। এর ঠিক ৪৫ মিনিট পর দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে একই ঘটনায় যুবদল নেতার মামলাটি গ্রহণ করে এজাহারভুক্ত করা হয়। নিজের ছেলে হত্যার ঘটনায় বাবার পাশাপাশি অন্যজন বাদী হয়ে একই ঘটনায় দুটি মামলা করায় বিচার পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন নিহতের বাবা।
রোকনের বাবা মনির হোসেন যুগান্তরকে বলেন, আমার ছেলে ১৯ জুলাই আন্দোলনে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। রোকন আমার চার সন্তানের মধ্যে বড়। আমি দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ হয়ে ঘরে পড়ে আছি। এই ছেলেই আমার সংসারের হাল ধরে ছিল। তাকে হারিয়ে আমাদের পরিবারের আরও খারাপ অবস্থা। থানায় মামলা করতে গিয়ে দেখি আমার ছেলে হত্যার ঘটনায় অন্য আরেকজন বাদী হয়ে মামলা করেছেন। অথচ মামলার বাদীকে আমরা চিনি না। সে মামলা করার আগে আমাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগও করেনি। আমার ছেলে মারা যাওয়ার পর আমরা গলির ভেতর জানাজা দিয়েছিলাম। ওইদিন আকাশে হেলিকপ্টার ঘুরে ঘুরে গুলিবর্ষণ করছিল। জানাজার পর রায়ের বাজার কবরস্থানে লাশ দাফন করেছি। আমার ছেলেকে আওয়ামী লীগ ও পুলিশের লোকজন গুলি করে বুকটা শেষ করে দিয়েছে। সে মারা যাওয়ার পর আওয়ামী লীগের লোক তো দূরে থাক এখন পর্যন্ত বিএনপির কেউও খোঁজ নেয়নি। যে আমার ছেলের হত্যার ঘটনায় বাদী হয়ে আরেকটি মামলা করেছে, শুনেছি সে বিএনপির নেতা। সেদিন থানায় গিয়ে দেখি, ওই বাদী পুলিশের সঙ্গে বসে আছে। পুলিশ তাকে কত খাতির-যত্ন করছে। অথচ আমার ছেলে হত্যার ঘটনায় জড়িত কাউকে গ্রেফতার করেছে কিনা এমন খবর নিতে গিয়েও আমরা কোনো গুরুত্ব পাই না। থানায় গেলে কেউ ভালোভাবে কথা বলে না।
মোহাম্মদপুর থানার রেকর্ড অনুযায়ী রোকনের বাবা মনির হোসেনের মামলা নম্বর-৬। এ মামলায় শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান কামালসহ ৩৮ জনের নাম উলেখ করে অজ্ঞাত আরও ২০০ থেকে ৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
অন্যদিকে, স্থানীয় যুবদল নেতা হিল্লোলের মামলা নম্বর-৭। এ মামলায় তিনি শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান কামাল, জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাদেক খান, সাবেক কাউন্সিলর রাজিব, আসিফ, আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের স্থানীয় ওয়ার্ড ও থানা পর্যায়ের নেতাসহ ৬৮ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেছেন।
এই ঘটনায় অপর মামলার বাদী ১০০নং ওয়ার্ড যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রবিউল ইসলাম হিল্লোলের কাছে জানতে ফোন করা হয়। মোবাইল ফোনে তিনি প্রতিবেদকের পরিচয় জানতে পেরে বিষয়টি নিয়ে কথা বলা নিষেধ বলে সংযোগ বিছিন্ন করে দেন। এরপর কয়েক দফা তাকে কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
জানতে চাইলে মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী ইফতেখার হাসান বলেন, প্রথমদিকে আমাদের মামলা নিতে হিমশিম খেতে হয়েছে। এরপর আমরা মামলাগুলোর জন্য আলাদা নথি তৈরি করেছি। ওই সময় হয়তো বিষয়টি আমাদের নজরে পড়েনি। এ ঘটনায় যে কোনো একটি মামলার ফাইনাল রিপোর্ট আমরা জমা দেব। তবে, আইন অনুযায়ী দুই মামলায় তেমন কোনো সমস্যা নেই।
বাংলাদেশ সময়: ৩:২৪:২২ ২৭ বার পঠিত