বিক্ষোভ, ভাঙচুর, সড়ক অবরোধ, অবস্থান কর্মসূচি। রোববার রাজধানীতে এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে। পুরান ঢাকায় হাসপাতালে কলেজ শিক্ষার্থীর মৃত্যুর জেরে ওই এলাকায় তুলকালাম কাণ্ড ঘটে। হাসপাতালসহ ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়েছে তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। পরীক্ষা চলাকালে সোহরাওয়ার্দী সরকারি কলেজে হামলা হলে পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। কলেজটিতে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়। কলেজগুলোর শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষে পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষে অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছেন। হামলা-সংঘর্ষের সময় ওই এলাকায় এক অরাজক পরিস্থিতি তৈরি হয়।
ওদিকে ব্যাটারিচালিত রিকশাচালক ও মালিকদের বিক্ষোভ হয়েছে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে। বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় অনেক এলাকায়। এতে দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা। উচ্চ আদালত থেকে অটোরিকশা বন্ধের নির্দেশনা বাস্তবায়ন না করার দাবিতে অটোরিকশা চালকরা কয়েকদিন থেকেই এই আন্দোলন করছেন। গতকাল বিকালে সরকারের আশ্বাস পেয়ে অবশ্য চালকরা আন্দোলন স্থগিত রাখার ঘোষণা দেন।
ওদিকে কাওরান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ের সামনে দিনভর বিক্ষোভ করেছেন একদল লোক। তারা পত্রিকাটির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তোলে এই কর্মসূচি পালন করেন। পত্রিকা কার্যালয়ের সামনে গরু জবাই করে ‘জিয়াফত’ এর আয়োজন করা হয়। দুপুর থেকে চলা এই অবস্থান ও বিক্ষোভ সন্ধ্যা পর্যন্ত গড়ায়। আন্দোলনকারীদের সরে যেতে বারবার অনুরোধ করেও সাড়া না পেয়ে সন্ধ্যার পর কঠোর অবস্থানে যায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তারা আন্দোলনকারীদের সরাতে টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এ সময় আন্দোলনকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। একপর্যায়ে আন্দোলনকারীরা অলিগলিতে সরে গেলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
অটোরিকশাচালকদের সড়ক অবরোধ, দুর্ভোগ
রাজধানীর সড়কে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল তিন দিনের মধ্যে বন্ধের নির্দেশনার প্রতিবাদে গতকালও বিভিন্ন এলাকায় অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন চালকরা। সকাল থেকে ধানমণ্ডি, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, গাবতলী, যাত্রাবাড়ী, জাতীয় প্রেস ক্লাব এলাকায় জড়ো হতে থাকেন তারা। একপর্যায়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন অটোরিকশাচালকরা। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হয় সাধারণ মানুষকে। এরমধ্যে যাত্রাবাড়ী এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে।
গতকাল সকাল ১০টায় যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা মোড়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন ব্যাটারিচালিত রিকশা চালকরা। ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-মাওয়া হাইওয়ে সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ অবস্থান নেয়। এ সময় পুলিশ ও স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে কয়েকজন আহত হয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সড়ক স্বাভাবিক করতে আন্দোলনরত রিকশাচালকদের ধাওয়া করে স্থানীয় বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। শুরু হয় পাল্টাপাল্টি ধাওয়া। এ সময় কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুর করে চালকরা। পরে কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থী খবর পেয়ে রিকশাচালকদের ধাওয়া দেয়। রিকশাচালকরা সড়ক ছেড়ে পালিয়ে যায়। সোহেল নামে রিকশাচালক বলেন, কয়েক মাস আগে সমিতি থেকে কিস্তি নিয়ে রিকশাটি কিনছি। এখন যদি চলতে না দেয়, তাহলে আমরা পরিবার নিয়ে কীভাবে চলবো। আমাদের কিস্তির টাকা দিতেও কষ্ট হয়ে যাবে। এ বিষয়ে ওয়ারী জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ ছালেহ উদ্দিন বলেন, অটোরিকশাচালকরা সকাল ১০টার দিকে যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তার মোড়ে সড়ক বন্ধ করে বিক্ষোভ করে। খবর পেয়ে আমি রিকশাচালকদের সড়ক থেকে সরে যেতে বললেও তারা রাজি হয়নি। একপর্যায়ে তাদের সঙ্গে থাকা কিছু দুষ্কৃতকারী বিভিন্ন যানবাহন ভাঙচুর করে। হামলায় কয়েকজন যাত্রীসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। পুলিশ বাধা দিলে তারা পুলিশকে দেখে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে কয়েকজন পুলিশ সদস্যও আহত হয়।
এদিকে ১২ দফা দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক শ্রমিক ইউনিয়নের ব্যানারে গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়। সকালে প্রেস ক্লাবে এসে জড়ো হন অটোরিকশার চালকরা। সকাল থেকে মিছিল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার দোয়েল চত্বর, হাইকোর্ট মাজার মোড় ও কদম ফোয়ারা হয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আসেন তারা। অটোরিকশা বন্ধে হাইকোর্টের আদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন তারা। এতে হাইকোর্ট থেকে কদম ফোয়ারা এবং প্রেস ক্লাব থেকে পল্টন পর্যন্ত যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। আন্দোলনকারীদের দাবি, দ্রুত ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে হবে। একইসঙ্গে রুট পারমিট দিতে হবে। অটোরিকশা চালকদের গণঅবস্থান কর্মসূচি থেকে জানানো হয়, আজ বেলা ১১টায় ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলীর সঙ্গে বৈঠকে বসবে রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক শ্রমিক ইউনিয়ন।
মোহাম্মদপুরেও একই দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাচালকরা। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে তাদের এই অবরোধের ফলে মোহাম্মদপুর, ধানমণ্ডি, মিরপুর ও গাবতলী সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন এই রুটে চলাচল করা মানুষজন। মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী ইফতেখার হাসান বলেন, হঠাৎ সকাল সাড়ে ১০টা দিকে মোহাম্মদপুরের বেড়িবাঁধ চার রাস্তার মোড় ও ঢাকা উদ্যান এলাকায় অটোরিকশাচালকরা সড়ক অবরোধ করেন। এতে সড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অটোরিকশাচালকরা অবস্থান নেয়ায় যানজটে দুর্ভোগ পোহাতে হয় সাধারণ মানুষকে। বাসের দূরের যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয় যানজটে। অনেকে আবার পায়ে হেঁটে ছোটেন গন্তব্যে। যাত্রীরা উষ্মা প্রকাশ করে জানিয়েছেন, প্রতিদিনই সড়ক অবরোধের ফলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে তাদের। সড়ক অবরোধ না করে আন্দোলন চালানোর পরামর্শও দেন তারা। আব্দুল্লাহ নামের এক বাসযাত্রী বলেন, এখন কোনো আন্দোলন হলেই সড়ক অবরোধ করে দেয়া হচ্ছে। আমাদের হেঁটে অফিস করতে হয়। আমাদের ভোগান্তির কথা কেউ চিন্তা করে না।
এদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা সম্পর্কে উচ্চ আদালত থেকে একটি ভালো নির্দেশনা আসবে বলে আশা করছি। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা কাজ করবো। গতকাল সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির সভা শেষে এসব কথা বলেন তিনি। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এই সমস্যার সন্তোষজনক সমাধান হবে। এর আগে আন্দোলনকারীদের শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচির আহ্বান জানাচ্ছি।
মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর এলাকার সড়কে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চলাচল তিন দিনের মধ্যে বন্ধ বা বিধিনিষেধ আরোপ করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। ঢাকার জেলা প্রশাসক, দুই সিটি করপোরেশনের প্রশাসক, ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারসহ বিবাদীদের রুলসহ এই নির্দেশ দেয়া হয়। এর প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকরা। এর পর বৃহস্পতিবার রাজধানীর মহাখালীতে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করা হয়। এ ছাড়া মিরপুর, মালিবাগ, মোহাম্মদপুর, গাবতলী, আগারগাঁও, নাখালপাড়া, রামপুরা, খিলগাঁওসহ বিভিন্ন এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকরা। পরদিন শুক্রবার ঢাকার জুরাইনে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করেন চালকরা। এ সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের, ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার ঘটনাও ঘটে।
পুরান ঢাকায় তুলকালাম, দুই কলেজে ব্যাপক ভাঙচুর
হাসপাতালে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে তুলকালাম ঘটনা ঘটেছে রাজধানীর পুরান ঢাকা এলাকায়। বেশ কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থী মিলে ন্যাশনাল হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কাজী নজরুল ইসলাম কলেজে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছেন। এই সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের প্রথম বর্ষের ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষা বাতিল করতে বাধ্য হয় প্রশাসন। পরীক্ষা চলার সময়েই এই হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছেন।
ঘটনার সূত্রপাত ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে অবস্থিত ড. মাহাবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের (ডিএমআরসি) এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ কলেজটির শিক্ষার্থী অভিজিতের মৃত্যু ভুল চিকিৎসার কারণে হয়েছে। এমন দাবিতে আন্দোলন করা শিক্ষার্থীদের ওপর শনিবার শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল সরকারি কলেজের কিছু শিক্ষার্থী হামলা চালায়। এরই প্রেক্ষিতে আশপাশের কয়েকটি কলেজের উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা এক হয়ে কলেজ দু’টিতে ভাঙচুর চালায় ও অগ্নিসংযোগের চেষ্টা করেন।
বুধবার থেকে ডিএমআরসি কলেজের শিক্ষার্থীরা ‘ভুল চিকিৎসায় শিক্ষার্থী মৃত্যুর’ অভিযোগে হাসপাতালটির সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি করছিলেন। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কলেজের বিরুদ্ধে যেহেতু আমাদের আন্দোলন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এই দুই কলেজের ছাত্রদল নেতাদের শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছেন।
শনিবার কবি নজরুল কলেজ ও সোহরাওয়ার্দী কলেজ ছাত্রদলের কিছু নেতাকর্মীর নেতৃত্বে আন্দোলনরতদের ওপর হামলা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। গতকালও দুপুর ১২টা থেকে ডিএমআরসি কলেজের নেতৃত্বে প্রায় ৫ হাজার শিক্ষার্থী হাসপাতালটি ঘেরাও করে। এতে ছিলেন ডিএমআরসি, নটর ডেম কলেজ, সিটি কলেজ, ঢাকা কলেজ, নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজ, নারায়ণগঞ্জ সরকারি কলেজ, খিলগাঁও সরকারি কলেজসহ অন্তত ৩০টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। তারা হাসপাতালটির নামফলক ভেঙে ফেলেন। এবং হাসপাতালে ভাঙচুর চালান। শনিবারের হামলার প্রতিবাদে কবি নজরুল কলেজ ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গেও আন্দোলনকারীরা সংঘর্ষে জড়ায়।
ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার এক পর্যায়ে পিছু হটতে বাধ্য হয় দুই কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ সময় এই দুই কলেজে ভাঙচুর চালান আন্দোলনকারী কলেজ শিক্ষার্থীরা। বিশেষ করে সোহরাওয়ার্দী কলেজে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়। কলেজটিতে চলমান অনার্স প্রথম বর্ষের ইয়ার ফাইনাল (ইতিহাস) পরীক্ষা এক পর্যায়ে স্থগিত করা হয়। কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীরা এই কলেজে পরীক্ষা দিচ্ছিলেন। ১২টা ৩০ মিনিটে শুরু হওয়া পরীক্ষা দুই ঘণ্টা চলার পর নিরাপত্তার স্বার্থে স্থগিত করা হয়।
এদিকে কলেজে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সোহ্রাওয়ার্দী কলেজে ঢুকে পড়ায় পরীক্ষার্থী ও শিক্ষার্থীরা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। এ সময় কলেজের উপাধ্যক্ষের রুমসহ অধিকাংশ কক্ষে ভাঙচুর চালানো হয়। কলেজ প্রাঙ্গণে থাকা একটি প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস ও এম্বুলেন্স এবং দু’টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। শিক্ষার্থীদের কলেজের ট্রফি, চেয়ারসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র নিয়ে যেতেও দেখা যায়। পরে শিক্ষক ও স্টাফদের অনুরোধে শিক্ষার্থীরা কলেজ প্রাঙ্গণ ছেড়ে যান। এরপর কলেজে থাকা পরীক্ষার্থীরা ধীরে ধীরে বের হন।
সোহ্রাওয়ার্দী কলেজের অধ্যক্ষ কাকলি মুখোপাধ্যায় বলেন, আমরা বাকরুদ্ধ। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তারা আমাদের ওপর হামলা করে। আমাদের সব কক্ষে ভাঙচুর করেছে। কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা আমরা দেখে বলতে পারবো। তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমি পুলিশকে কল দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা আমাদের জানায় তাদের উপযুক্ত ফোর্স না থাকায় পদক্ষেপ নিতে পারছে না।
প্রথম আলোর সামনে বিক্ষোভ, টিয়ারশেল-সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ
রাজধানীর কাওরান বাজারে দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকার কার্যালয়ের সামনে অবস্থান ও বিক্ষোভ করেছেন একদল লোক। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত ৬ ঘণ্টা অবস্থান নিয়ে কর্মসূচি পালন করেছেন ‘বাংলাদেশের জনতা’ ব্যানারে কিছু মানুষ। দিনভর অবস্থানের পর জনবহুল এলাকা হিসেবে সন্ধ্যা ৭টায় আন্দোলনকারীদের রাস্তা ছেড়ে দেয়ার অনুরোধ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। অনুরোধের পরও বিক্ষোভ চালিয়ে যাওয়ায় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার পর টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কাওরান বাজারের প্রথম আলো কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে ৪০ থেকে ৫০ জনের একটি দল। ‘প্রথম আলোর সামনে জিয়াফত’ এই শিরোনাম দিয়ে আন্দোলনকারীরা বেলা ২টার দিকে পত্রিকা কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় গরু জবাই করা হয়। পরে রাস্তার অপর পাশে মাংস কেটে রান্নার আয়োজন করা হয়। একদিকে রান্না চলে আর অন্যদিকে প্রথম আলোর সামনে রাস্তায় বসে মাইকে স্লোগান দিতে থাকেন আন্দোলনকারীরা। রাস্তার উপরই নামাজ আদায় করেন তারা। তাদের ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নিয়েছিলেন।
বিকাল ৫টা ৪০ মিনিটের দিকে এলাকাটির দায়িত্বে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদেরকে রাস্তা ছেড়ে চলে যাওয়ার অনুরোধ করেন। তবে তা আমলে নেননি আন্দোলনকারীরা।
সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার পর পুলিশ ও সেনা সদস্যরা আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন। তখন আন্দোলনকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ সময় টিয়ারশেলের আঘাতে একটি ছিন্নমূল শিশু আহত হয়।
এসব বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের তেজগাঁও জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) মোহাম্মদ জিয়াউল হক বলেন, পুলিশ সর্বোচ্চ ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। কাওরান বাজারের মতো জনবহুল এলাকার একটি রাস্তা সারাদিন অবরোধ করে আন্দোলন চালিয়ে গেলেও পুলিশ তাদের কিছুই বলেনি। উল্টো তাদেরকে অনুরোধ করা হয়েছে রাস্তা ছেড়ে দিতে। কিন্তু তারা অনুরোধ না শোনায় আমরা তাদের সরিয়ে দিয়েছি।
বাংলাদেশ সময়: ১৪:৪৬:০৪ ৫২ বার পঠিত