শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পুরোপুরি ভেঙে পড়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। অন্তর্বর্তী সরকার প্রথম ১০০ দিনে যেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছে, তার মধ্যে অন্যতম জনমন থেকে আতঙ্ক দূর করা।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পুলিশের ঢিলেঢালাভাবের সুযোগ নিয়ে নানা ধরনের অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। খুন, ডাকাতি, চুরি, ধর্ষণ, গণপিটুনি, ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে। খোদ রাজধানীতে সংঘবদ্ধ অপরাধীরা ভয়ের পরিবেশ তৈরি করে।
মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, মিরপুর, উত্তরা, পুরান ঢাকাসহ বেশ কিছু এলাকায় অপরাধপ্রবণতা বাড়তে থাকে। টার্গেট করে অনেক বাসা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে দুর্ধর্ষ ডাকাতি হয়েছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও অপরাধীদের বাগে আনতে মোহাম্মদপুর থানা ঘেরাও করে স্থানীয়রা। দেশের বিভিন্ন এলাকার পরিবেশও প্রায় অভিন্ন। অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের ঘটনায় দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় বিতর্কিত ভূমিকার জন্য পুলিশ কিছুটা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। অনেক থানা ও ফাঁড়িতে আগুন, নয়তো ভাঙচুর করা হয়। ভেঙে পড়ে থানার স্বাভাবিক কার্যক্রম। লুট করা হয় পুলিশর অস্ত্রাগার। শত শত অস্ত্র হয় বেহাত। লন্ডভন্ড সেই পরিস্থিতির ওপর ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় পুলিশ। কেউ কেউ এই সুযোগ নিয়ে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটিয়েছে।
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বেশ কিছু অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে। যৌথ বাহিনী পরিচয় দিয়ে মোহাম্মদপুরের একটি বাসা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ঢুকে ৭৫ লাখ টাকা ও ৭০ ভরি স্বর্ণ লুট করা হয়েছিল। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়। রাজধানীতে গত দুই মাসে হত্যার শিকার হয় ৬৮ জন। এর মধ্যে মোহাম্মদপুরে ১১ জন খুন হয়েছে। মোহাম্মদপুরে কয়েক দুর্বৃত্ত এক তরুণীকে ঘিরে ধরে টানাহেঁচড়া করছে, ওড়না টেনে রাস্তায় ফেলে দিচ্ছে আর তিনি দৌড়ে বাঁচার চেষ্টা করছেন, সুপারশপে চাপাতি হাতে কয়েকজন ঢুকে সবাইকে বেরিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়ার মতো দৃশ্যও দেখা গেছে।
এ ছাড়া ঢাকার বাইরেও বিভিন্ন জায়গায় হামলা, লুটপাট, ডাকাতি ও ধর্ষণের মতো ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার একটি ইউনিয়নের চর এলাকায় মা ও মেয়েকে ঘর থেকে তুলে নিয়ে দলবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়। নীলফামারীর সৈয়দপুরে ক্ষুদ্রঋণের ২৫ হাজার টাকা নিয়ে ব্যাংক থেকে বের হতেই ছিনতাইয়ের শিকার হয়ে পরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন এক ব্যক্তি। ফরিদপুরের ব্রাহ্মণকান্দা এলাকায় ছিনতাইয়ের অভিযোগে কনস্টেবলসহ দু’জনকে পিটুনি দিয়েছে স্থানীয় লোকজন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা ছিনতাই করতে রিফাত মিয়া নামে এক চালককে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।
অপরাধ বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. তৌহিদুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মানুষ যেভাবে দেখতে চায়, সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। একটি বিশেষ পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যাচ্ছে। সতর্কতামূলক ধীরগতির নীতি নেওয়া হচ্ছে, যাতে সিদ্ধান্তের পর কোনো সমালোচনা না হয়।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের বাস্তবতায় শৃঙ্খলা ফেরাতে দ্রুত কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হয়। ভুলত্রুটি থাকলে দ্রুত সংশোধন করলে জনগণ উপকৃত হয়। কেউ কেউ ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক আক্রোশ মেটাতে গিয়ে নানা জায়গায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাচ্ছে।
নৈতিক ও মনোবল সংকট কাটিয়ে পুলিশ বাহিনীকে পরিপূর্ণ কার্যকর করতে সময় লাগবে বলে মনে করেন ড. তৌহিদুল।
বাংলাদেশ সময়: ২২:২২:০৬ ৩৭ বার পঠিত