২০০৮ সালে বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ছিলেন নূর মোহাম্মদ। আইজিপি থাকা অবস্থায় ক্ষমতার দাপটে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীর মানিকখালী গ্রামের সৌদি প্রবাসী মরহুম নুরুল আমিনের ১৩০ একর জমি দখল করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। শনিবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের মওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ হলে সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীর বড় ছেলে বদরুল আমিন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন তার স্ত্রী হাসনা আমিন, ছোট ছেলে আইনজীবী সিরাজুল আমিন ও তার ছোট ভাই রুহুল আমিন।
লিখিত বক্তব্যে বদরুল আমিন বলেন, আমার বাবা মৃত নুরুল আমিনের মালিকানাধীন প্রায় ১৩০ একর জমি সাবেক আইজিপি ও আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদ ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় পুলিশ বাহিনীসহ তার ভাগিনা মুন ও শাওনসহ চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলামের নেতৃত্বে ২০/২৫ জন সন্ত্রাসী দিয়ে ২০০৮ সালে জোরপূর্বক দখল করে নেয়। পরবর্তীতে কোনো পদক্ষেপ নিলেই মামলা–হামলাসহ প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে থামিয়ে দিতেন। ওই ঘটনায় ঢাকার মোহাম্মদপুর লালমাটিয়া এলাকায় ভাড়া বাসা থেকে ভুক্তভোগী নুরুল আমিনকে একাধিকবার পুলিশ তুলে নিয়ে গিয়ে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন। জীবন রক্ষার্থে বাবা ভারতে চলে যেতে বাধ্য হন। দেশে ফিরলেই তার ওপর অত্যাচার বেড়ে যেতো। পরে ২০১০ সালে তিনি আমেরিকায় চলে যান। ২০১১ সালে যখন নূর মোহাম্মদ আইজিপি পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন, তখন বাবা দেশে ফিরে আসেন। একপর্যায়ে জমির শোকে ২০১৮ সালের মার্চে পৃথিবী থেকে বিদায় নেন ভুক্তভোগী কৃষক নুরুল আমিন।
সংবাদ সম্মেলনে বদরুল দাবি করেন, ২০১২ সালে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদের সন্ত্রাসী বাহিনীর কাছ থেকে মৎস্য প্রকল্প ও জমি দখল মুক্ত করার আবেদন করা হয়। কিন্তু এতেও প্রতিকার মেলেনি। বর্তমানে দখলকৃত জমি তার (নূর মোহাম্মদ) নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হলে এই প্রকল্পের জমি নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্ত শুরু করে। দুদকের তদন্তে বিষয়টি প্রমাণ হয়। এছাড়া ২০১০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন সংবাদপত্রে দুদকে সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদের দুর্নীতির তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ্যে এসেছে।
তিনি বলেন, ২০১৬ সালে দেওয়ানি কার্যবিধি ১৫১ ধারার বিধানে চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দাবি করেন ভুক্তভোগী কৃষক নুরুল আমিন। তখন সহকারী জজ আদালত অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। নিষেধাজ্ঞা তোয়াক্কা না করে জমি থেকে ১০০ কোটি টাকার বালি ও গাছ বিক্রি করে দেন। এখন পর্যন্ত ইটের ভাটা ও অবৈধভাবে লিজ দিয়ে টাকা লুটপাট করছেন। ওই সময় ভুক্তভোগীকে আইজিপির ভাগ্নে মুন, তার সহযোগী আজিজ ও আবুল বাশার হত্যা চেষ্টা করেন। ঘটনায় কটিয়াদি থানায় একটি হত্যা চেষ্টা মামলা করে পরিবার। তা থেকে আইজিপি প্রভাব খাটিয়ে সবাইকে মুক্ত করেন। এরপর প্রতিশোধ হিসেবে পুলিশ দিয়ে আমার ফুফাতো ভাইকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে বদরুল আমিন আরও বলেন, জমির শোক ও অত্যাচারে জর্জরিত হয়ে ২০১৮ সালে আমার বাবা নুরুল আমিন মারা যান। এরপর নূর মোহাম্মদ পরিবারের ওপর চাপ সৃষ্টি করেন। পরে ২০১৮ সালের একতরফা ভোটে নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। এতে পুরো পরিবার জীবনশঙ্কায় গ্রামের বাড়িতে যাওয়া বন্ধ করে দেই। জমি দখলের বিষয়ে বিভিন্ন সময় সালিশ বসলেও সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তা অংশগ্রহণ করতেন না। এমনকি তার বাসা থেকে জমিতে যাওয়া আসার জন্য জোরপূর্বক রাস্তা নির্মাণ করেন। বিভিন্ন সময় আমরা জমিতে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশসহ তার ভাগ্নে মুন, বর্তমান ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমানের পালিত সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে হামলা চালায়।
ভুক্তভোগীর ছোট ছেলে আইনজীবী সিরাজুল আমিন বলেন, আমার বাবা দীর্ঘদিন সৌদি প্রবাসী ছিলেন। তার জীবনের সব সঞ্চয় দিয়ে এই সম্পাদ করা। বাবা সম্পাদ ফিরে পেতে বর্তমান সরকারের দৃষ্টি আর্কষণ বা সহযোগিতা কামনা করছি। এছাড়া এই সপ্তাহে প্রধান উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাসহ আইজিপি বরাবর লিখিত আবেদন করবো। শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পরও আমরা গ্রামের বাড়িতে যেতে পারিনি। নূর মোহাম্মদ হত্যা মামলার আসামি হয়েও প্রভাব খাটিয়ে জমি দখল করে রাখছে।
বাংলাদেশ সময়: ২৩:৩০:১৬ ৫০ বার পঠিত