কক্সবাজারের কলাতলীর পর্যটন জোনের হোটেল ইউনি রিসোর্টে বাংলাদেশ ইউনিয়ন সদস্য সংস্থার (বাইসস) আলোচনা সভা চলাকালে পুলিশি অভিযানে আটক ১৮ সদস্যের মাঝে ১৫ জনকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। শনিবার (৯ নভেম্বর) বিকেলে আদালতের মাধ্যমে তাদের কারাগারে পাঠানো হয় বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) মো. জসিম উদ্দিন চৌধুরী।
শুক্রবার (৮ নভেম্বর) সন্ধ্যা হতে গভীর রাত পর্যন্ত হোটেলের ৫ম তলার হল রুমে অভিযান চালিয়ে জেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) এসব সদস্যদের আটক করা হয়। এ সময় বাইসস কক্সবাজার জেলা শাখা ‘রাষ্ট্র সংস্কার, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও স্থানীয় উন্নয়নে তৃণমূল জনপ্রতিনিধিদের করণী’ শীর্ষক মতবিনিময় সভা করছিল। সমন্বয়ক নামধারীরা ঘটনাস্থলে সংবাদ সংগ্রহ করতে যাওয়া গণমাধ্যমকর্মীদের হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
কারাগারে পাঠানো মেম্বাররা হলেন, কক্সবাজারের রামুর কাউয়ারখোপ ৩নং ওয়ার্ড মেম্বার মো. আজিম মিয়া (৩৫), ৭নং ওয়ার্ড মেম্বার মো. কায়েস (৪২), ৬নং ওয়ার্ড মেম্বার মোহাম্মদ আলী (৫৫), জোয়ারিয়ানালার ৯নং ওয়ার্ড মেম্বার কামাল হোসেন (৩৭), চকরিয়ার সাহারবিল ইউপির ৭নং ওয়ার্ড মেম্বার জসিম উদ্দিন (৪৮), ৪নং ওয়ার্ড মেম্বার জুনায়েদুল হক (৪০), পশ্চিম বড় ভেওলা ইউপির ২নং ওয়ার্ড মেম্বার ইরফানুর রহমান (৪০), বদরখালীর ৭নং ওয়ার্ড মেম্বার কফিল উদ্দিন মো. জাহাঙ্গীর (৪৬), বমুবিলছড়ি ইউপির ৪নং ওয়ার্ড মেম্বার মো. বেলাল উদ্দিন (৪০), ২নং ওয়ার্ড মেম্বার শফিকুর রহমান (৪২), কোনাখালী ইউপির ১নং ওয়ার্ড মেম্বার আবুল কালাম (৫৫), কাকারা ইউপির ২নং ওয়ার্ড মেম্বার নজরুল ইসলাম (৩৫), শাহারবিল ইউপির ৬নং ওয়ার্ড মেম্বার রুবেল জলদাস (৩৩), টেকনাফ সদর ইউপির ৩নং ওয়ার্ড মেম্বার শাহ আলম (৩৯) ও কক্সবাজার সদরের চৌফলদন্ডী ইউপির ৬নং ওয়ার্ড মেম্বার মোহাম্মদ মিয়া জঙ্গি (৫৪)। বাকি তিনজনের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ না পেয়ে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, শুক্রবার বিকেলে ইউনি রিসোর্টের সম্মেলন কক্ষে মতবিনিময় সভার আয়োজন করে বাইসস কক্সবাজার জেলা শাখা। সেখানে আনুমানিক ৭০ জনপ্রতিনিধি অংশ নেন। এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সমন্বয়ক পরিচয়ে বিপুল সংখ্যক তরুণ হলরুমটি ঘেরাও করে। পরে পুলিশের সঙ্গে সমন্বয়ক পরিচয়ধারীরা হলে ঢুকে তল্লাশি ও যাচাই-বাছাই করে। সেখানে ১৮ জনকে রেখে বাকিদের ছেড়ে দেয় তারা। পরে তাদের থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
আটক হয়ে থানায় যাওয়ার সময় টেকনাফ সদর ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য শাহ আলম গণমাধ্যমকে বলেন, শুক্রবার ইউপি সদস্যের সংগঠন বাইসস জেলা শাখার আলোচনা সভা ছিল। প্রায় ৭০ জনের মতো উপস্থিত ছিলাম। সেখানে দেশের ক্রান্তিকালে কীভাবে কাজ করা যায়- সেটি নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। হঠাৎ অতর্কিতভাবে পুলিশ ও সমন্বয়ক পরিচয়ে কিছু যুবক ঢুকে আমাদের অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে মোবাইলসহ শরীর তল্লাশির পর আটক করে। যদি গোপন বৈঠক হতো তাহলে সড়কের পাশে হোটেলে এতবড় অনুষ্ঠান করতাম? আমাদের হয়রানি করা হচ্ছে।
সভায় পুলিশ-সমন্বয়ক যৌথ তল্লাশি হতে বের হওয়া মহেশখালীর ইউপি সদস্য সেলিম জানান, বাইসসের আলোচনা সভায় সব রাজনৈতিক দলের লোক ছিল। কিন্তু অকারণে আমাদের সদস্যদের আটক করা নিন্দনীয়।
জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) জসিম উদ্দন চৌধুরী বলেন, আটক ১৮ জনের মাঝে ১৫ জনকে কারাগারে পাঠোনো হয়েছে। ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনে হামলার সঙ্গে সম্পৃক্ততা পেলে সে মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হবে।
চ্যানেল টুয়েন্টিফোরের জেলা প্রতিনিধি আজিম নিহাদ বলেন, হোটেলে পুলিশী অভিযান চলছে এমন খবরে একদল সাংবাদিক নিউজ সংগ্রহ করতে যায়। ছবি তুলতে গেলে সাংবাদিকদের উপর হামলা চালায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামধারী একদল তরুণ। দালাল বলে গালিগালাজ করে এক যুবক নিজেকে সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে মুখে মাস্ক লাগিয়ে ক্যামেরায় লাথি দেয়। এ সময় পুলিশ নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে।
বাংলাদেশ সময়: ২৩:০৪:৩৫ ২০ বার পঠিত