মিথ্যা মামলা করায় ডিবির ৯ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ আদালতের ।

প্রথম পাতা » জেলা জজ কোর্ট » মিথ্যা মামলা করায় ডিবির ৯ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ আদালতের ।
শুক্রবার, ৬ অক্টোবর ২০২৩



 

---

রাজধানীর ফকিরাপুলে অভিযান চালিয়ে ২৫ লাখ টাকার জাল নোট উদ্ধার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি দল। এ ঘটনায় করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয় দুই ব্যক্তিকে।

তবে তদন্তে জানা গেছে, ঘটনাটি ছিল সাজানো। জাল টাকা উদ্ধার হয়নি। মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসানো হয়েছিল ওই দুজনকে। মিথ্যা মামলা করায় ডিবির ৯ সদস্যের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন আদালত। খালাস দেওয়া হয় দুই আসামিকে।

সাজানো ওই অভিযানের তারিখ ছিল—২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর। মামলার এজাহারে বলা হয়, ওই দিন বিকেলে ফকিরাপুলের মাছবাজারের পাশে গলিতে অভিযানে যায় ডিবি। এ সময় আটক করা হয় পল্টন এলাকার হোটেল বন্ধু আবাসিকের ব্যবস্থাপক হাসান মজুমদার ও কর্মচারী সোহেল রানাকে।

পরদিন মামলা করে ডিবি। এজাহারে অভিযোগে বলা হয়, অভিযানে হাসান ও সোহেলের কাছ থেকে ২৫ লাখ টাকার জাল নোট উদ্ধার করা হয়েছে।

তবে ওই দিন ডিবির অভিযানে জাল নোট উদ্ধারের কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি করেন আসামিরা। তাঁদের ভাষ্য, ঘটনা ফকিরাপুলের মাছবাজারের পাশের গলিতে নয়, বরং পল্টনের হোটেল বন্ধু আবাসিকের অভ্যর্থনাকক্ষে। ওই দিন সাদাপোশাকে কয়েকজন হোটেলের অভ্যর্থনাকক্ষে আসেন।

তাঁরা বলেন, এ হোটেলে অসামাজিক কার্যকলাপ চলছে। এরপর তিন লাখ টাকা ঘুষ দাবি করা হয়। ঘুষ দিতে অস্বীকার করায় হাসান ও সোহেলকে হাতকড়া পরিয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। হোটেলের সিসি ক্যামেরায় এ ঘটনা ধরে পড়ে।

মামলা মিথ্যা, সাক্ষী ভুয়া

মামলাটি তদন্ত করে ২০১৭ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর হাসান ও সোহেলের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় ডিবি পুলিশ। আদালত ২০১৭ সালের ২৯ অক্টোবর হাসান ও সোহেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। অভিযোগ প্রমাণের জন্য রাষ্ট্রপক্ষ থেকে ১২ সাক্ষীকে আদালতে হাজির করা হয়।

তবে অভিযোগ প্রমাণে ব্যর্থ হয় ডিবি পুলিশ। মিথ্যা মামলা করার অভিযোগে ডিবির তৎকালীন পরিদর্শক তপন কুমার ঢালীসহ ৯ সদস্যের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন আদালত। গত ২৪ জানুয়ারি ঢাকা মহানগরের ১৫ নম্বর বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক তেহসিন ইফতেখার ওই রায় দেন। সম্প্রতি বিষয়টি জানিয়েছেন আসামিপক্ষের আইনজীবী আবদুস সালাম খান।

আদালত যাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন, তাঁরা হলেন ডিবির পরিদর্শক তপন কুমার ঢালী, উপপরিদর্শক দেওয়ান উজ্জ্বল হোসেন, সহকারী উপপরিদর্শক জিয়াউর রহমান, সোহেল মাহমুদ, আবুল বাশার, মোমিনুল হক, নাজমুল হক প্রধান, কনস্টেবল নয়ন কুমার ও গোলাম সারোয়ার। সবাই ডিবির তৎকালীন সদস্য।

তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য হয়েও জনগণের জানমাল রক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পরিবর্তে হাসান মজুমদার ও সোহেল রানার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। আদালতে মিথ্যা অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়েছে। মিথ্যা সাক্ষী উপস্থাপন করা হয়েছে।

আইনজীবী আবদুস সালাম খান জানান, পুলিশ সদস্য তপন কুমার ঢালীসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে দ্রুত বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশের আইজিপির কাছে একটি চিঠি পাঠানো হয়। এ চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত করে পুলিশ আসল ঘটনা জানতে পেরেছে।

দোষী ব্যক্তিদের কঠোর শাস্তি দাবি

জাল নোট উদ্ধারের ঘটনায় গ্রেপ্তার হলেও নিজেদের বরাবর নির্দোষ দাবি করেছেন হাসান ও সোহেল। মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগ এনে সংশ্লিষ্ট ডিবি পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশ মহাপরিদর্শকসহ (আইজিপি) সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেন হাসান।

আইনজীবী আবদুস সালাম খান জানান, ডিএমপির প্রাথমিক তদন্তে হাসান ও সোহেলের কাছ থেকে জাল নোট উদ্ধারের ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়নি। পুলিশের অভ্যন্তরীণ তদন্তে বলা হয়েছে, পুলিশ পরিদর্শক তপন কুমার মিথ্যা মামলা করেছিলেন। আর তাঁর সঙ্গীরা আদালতে মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে পুলিশ পরিদর্শক তপন কুমার ঢালী ও উপপরিদর্শক দেওয়ান উজ্জ্বল হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোনে ফোন করা হলেও তাঁরা ধরেননি।

ভুক্তভোগী হাসান মজুমদার বলেন, ‘ডিবির অভিযানে ২৫ লাখ টাকার জাল নোট উদ্ধারের ঘটনা পুরোটাই ভুয়া। এরপরও আমাকে আর সোহেলকে হাতকড়া পরিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। কয়েক মাস কারাগারে থাকতে হয়েছে। বিনা দোষে যে কষ্ট ভোগ করতে হয়েছে, তা বলে বোঝাতে পারব না।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিনা দোষে অবর্ণনীয় কষ্ট ভোগ করলেও অবশেষে আদালতে ন্যায়বিচার পেয়েছি। এখন চাওয়া একটাই, যাঁদের জন্য আমরা ভুক্তভোগী, তাঁদের শাস্তি যেন দ্রুত কার্যকর করা হয়।’

অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে পুলিশ সদরদপ্তরের অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন) মো. কামরুল আহসান বলেন, জাল টাকার সাজানো মামলার ঘটনায় পুলিশের নয়জনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের বিষয়ে আদালতের আদেশনামার বিষয়ে কোনো তথ্য তাঁর জানা নেই। তবে বিষয়টি খোঁজ নিয়ে আদালতের আদেশ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মুখপাত্র উপকমিশনার ফারুক হোসেন বলেন, ডিবির নয় সদস্যের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না, তা তাঁর জানা নেই। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে তিনি বলতে পারবেন।

বাংলাদেশ সময়: ২৩:০৪:০৯   ২১৯ বার পঠিত  




জেলা জজ কোর্ট’র আরও খবর


এস আলম ও পরিবারের এফএসআইবির ১২৫ অ্যাকাউন্ট জব্দের নির্দেশ
বান্দরবান আদালত চত্বরে ১০৩ টি নিস্পত্তিকৃত মামলার আলামত আইনি প্রক্রিয়া শেষে ধ্বংস।
জামিন মেলেনি বেনজীরের ক্যাশিয়ার জসিমের
রাজবাড়ীতে স্ত্রী হত্যার দায়ে স্বামী লতিফের মৃত্যুদন্ড
বিনা সুদে লাখ টাকা ঋণ অহিংস গণঅভ্যুত্থানের আহ্বায়ক মাহবুবুলসহ ১৮ জন কারাগারে
ফের ৩ দিনের রিমান্ডে সাবেক আইজিপি মামুন
১১৩ বার পেছাল সাগর-রুনি হত্যা মামলার প্রতিবেদন
জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে হাজী সেলিমপুত্র বললেন ‘শেখ হাসিনা আবার আসবেন’
পুলিশ হেফাজতে বডিবিল্ডার ফারুকের মৃত্যু বংশাল থানার সাবেক ওসিসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে পুনঃতদন্তের নির্দেশ
ওবায়দুল কাদেরের পিএস মতিন ৩ দিনের রিমান্ডে

Law News24.com News Archive

আর্কাইভ