সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামালসহ ১১ জনের নাম উল্লেখ করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনে অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে।
আজ বুধবার আন্তর্জাতিক এ অভিযোগ দাখিল করেন গুমের শিকার সাবেক সেনা কর্মকর্তা হাসিনুর রহমান বীর প্রতীক।
পরে তিনি সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন। হাসিনুর রহমান বলেন, তাকে গুমের ঘটনার বিচার চেয়ে ১১ জনের নাম উল্লেখ করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দাখিল করেছি। তাকে দুই দফায় গুম করা হয়। সেখানে অমানুষিক ও বর্বরোচিত নির্যাতনের শিকার হন তিনি।
তিনি বলেন, আয়নাঘরে তাকে এ নির্মম নির্যাতন করা হয়। গুমের ঘটনায় ন্যায়বিচার, ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন চেয়েছি।
হাসিনুর রহমান বীর প্রতীক একজন সাবেক বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন কর্মকর্তা। সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত হওয়ার সময় তিনি লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে ছিলেন। তিনি জোরপূর্বক গুমের শিকার ছিলেন।
২০১৮ সালের ৮ আগস্ট থেকে এক বছর ছয় মাস ১৪ দিন আয়নাঘরে গুম ছিলেন তিনি।
এর আগে চাকরিতে থাকা অবস্থায়ও তাকে দীর্ঘদিন ঘুম করে রাখা হয়েছিল বলে জানান এ খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তা। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার তত্ত্বাবধানে একটি চক্র চরম অন্যায়ভাবে বেআইনি ও অমানবিক কার্যক্রম পরিচালনা করেছিল। যা তদন্তে বের হয়ে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
বাংলাদেশের গর্বিত সেনাবাহিনীর একটি উচ্ছিষ্ট লোভী অংশ এ অন্যায় কাজে জড়িত ছিলেন বলে জানান তিনি।
সাবেক সেনা কর্মকর্তা বলেন, সেনাবাহিনীতে চাকরি করা অবস্থায় ২০০৮ সালে তাকে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার সাথে কাজ করতে বলা হয়। তিনি তাতে অনিহা প্রকাশ করলে তাতে ক্ষুব্ধ হয়ে তার উপর নানা নির্যাতন শুরু হয়। ২০১২ সালে তাকে সেনাবাহিনী থেকেও বরখাস্ত করা হয়।
তিনি বলেন, পিলখানায় বিডিআর হত্যার ঘটনায় একজন সেনা কর্মকর্তা হিসেবে উচ্চবাচ্য ও প্রতিবাদ করাও তার ওপর পরিচালিত নির্যাতনের অন্যতম কারণ। চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ফজলে করিম চৌধুরীর একটি অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়াও তার ওপর নির্যাতনের কারণ ছিল।
তিনি বলেন, চাকরি করা অবস্থায় একজন সেনা কর্মকর্তাকে ঘুম করে রাখার ঘটনা বিরল। গুম নিয়ে মিডিয়ায় কথা বলায় তার বিরুদ্ধে ১০টির বেশি মামলা হয়। তিনি কারাগারে ছিলেন। খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার পরেও জেলখানায় তাকে ডিভিশন দেয়া হয়নি।
খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তা বলেন, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নে কর্মরত থাকা অবস্থায় জঙ্গিদের আটকে তার সাফল্যের কথা সকলে জানেন। জেলে আটক অবস্থায় তাকে জঙ্গি দিয়ে হত্যার অপচেষ্টা চালানো হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি।
তিনি বলেন, নিষিদ্ধ ঘোষিত জেএমবি প্রধান শায়খ আব্দুর রহমানের ছেলে কারাবন্দী নাবিল তাকে হত্যা করা হবে বলে জানিয়েছিলেন। মহান আল্লাহর অশেষ কৃপায় তিনি প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে সংঘটিত অভ্যুত্থানে পদত্যাগ করে গত ৫ আগস্ট দেশ থেকে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এরপর নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শপথ গ্রহণ করে।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে শহিদ আবু সাঈদসহ সকল শহিদ ও আহদের প্রতি স্যালুট জানিয়ে হাসিনুর রহমান বলেন, ‘তাদের আত্মত্যাগের কারণেই আজ ন্যায় বিচার পাওয়ার আশা ও স্বাধীন মুক্ত পরিবেশে কথা বলার সুযোগ পেয়েছি’।
বাংলাদেশ সময়: ২২:৩৭:৩২ ৫৯ বার পঠিত