সরজমিন ডিএনসিসি হাসপাতাল দিনে ২০০-২৫০ ডেঙ্গু রোগী আসছে

প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » সরজমিন ডিএনসিসি হাসপাতাল দিনে ২০০-২৫০ ডেঙ্গু রোগী আসছে
রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪



দিনে ২০০-২৫০ ডেঙ্গু রোগী আসছে

সেপ্টেম্বর মাসের শুরু থেকেই ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ বেড়েই চলেছে। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নতুন নতুন ডেঙ্গু রোগী আসছে ভিড় করছে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে। ডেঙ্গু রোগীদের এই চাপ সামাল দিতে মহাখালীতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ভবনে আলাদা করে খোলা হয়েছে ডেঙ্গু ডেডিকেটেড হাসপাতাল। প্রতিদিন সেখানে গড়ে ২০০ থেকে ২৫০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী আসছেন চিকিৎসা নিতে। এত সব রোগীকে চিকিৎসা দিতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

সরজমিন ডিএনসিসি হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, উত্তর সিটি করপোরেশনের জন্য তৈরি করা বিশাল পাকা মার্কেটের একটি অংশে বাইরের ডাক্তার-নার্সের সহায়তায় তৈরি করা হয়েছে ডিএনসিসি ডেঙ্গু ডেডিকেটেড হাসপাতাল। মূলত করোনাকালে মানুষের সেবা দেয়ার জন্য মার্কেটের দোকানের ভেতর চিকিৎসা সরঞ্জাম দিয়ে বিশেষভাবে তৈরি করা বেডেই বর্তমানে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে ডেঙ্গু রোগীদেরকে। সকাল-দুপুর-রাত্রি একের পর এক রোগী আসছে হাসপাতালটিতে।

বহুতল ভবন হলেও হাসপাতালটির তিনতলা, চারতলা ও ছয়তলায় রোগীদেরকে সেবা দেয়া হচ্ছে। মার্কেটের জন্য তৈরি দোকানের সাটার উঠিয়ে তার মধ্যে বেড পেতে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। শত শত ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন সেখানে। ছয়তলার আইসিইউতে ভর্তি হওয়াদের সংখ্যাও কম নয়। তাদের মধ্যে একজন মাদারীপুরের ইলিয়াস হোসেন। গত বুধবার মুমূর্র্ষু অবস্থায় তাকে মাদারীপুর থেকে নিয়ে এসে ঢাকার ডিএনসিসি হাসপাতালে ভর্তি করান তার মেয়ের জামাতা মো. ওসমান। রাজধানীর মগবাজারের বাসিন্দা মো. ওসমান বলেন, আমার শ্বশুরের কয়েকদিন আগে থেকেই জ্বর। কিছু খেতে পারেন না। প্রথমে স্থানীয় ফার্মেসি থেকে প্যারাসিটামল কিনে খান। তাতেও জ্বর যায় না। এরপর অবস্থা খারাপ দেখে তাকে টেকেরহাট হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখান থেকে পরীক্ষা করে ডাক্তাররা জানান, আমার শ্বশুরের ডেঙ্গু হয়েছে। ১৪ হাজারে নেমে এসেছে প্লাটিলেট। মুখ দিয়ে, মলদার দিয়ে রক্ত পড়ছে। তখন তারা দ্রুত ঢাকায় নিয়ে আসতে বলেন। এরপরই বুধবার রাতে তাকে নিয়ে এখানে ভর্তি করেছি। এখানে আসার পর থেকেই তাকে আইসিইউতে ভর্তি রয়েছেন। এদিকে ৬ বছরের মেয়ে মালিহা ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে তাকে রূপগঞ্জ থেকে নিয়ে এসে ঢাকার মুগদা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন বাবা মো. মনিরুজ্জামান। মেয়ের চিকিৎসা চলাকালেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন মা রাবেয়া খাতুন। মেয়ে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরলেও স্ত্রীকে নিয়ে হাসপাতালে হাসপাতালে দৌড়াচ্ছেন স্বামী মনিরুজ্জামান। বর্তমানে রাবেয়া ডিএনসিসি হাসপাতালের চারতলায় ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। রাবেয়ার স্বামী মনির বলেন, মেয়েটা খুব অসুস্থ ছিল। সে সুস্থ হলেও স্ত্রীকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। হাসপাতালের তিনতলায় চিকিৎসা নিচ্ছেন রাজধানীর কচুক্ষেত এলাকার ব্যবসায়ী রেদোয়ান হোসেন। তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা তার পিতা মোজাম্মেল হোসেন বলেন, আমার ছেলের প্রথমে জ্বর আসে। যতই ওষুধ খাই তারপরও একশ’ দুই-তিনের নিচে জ্বর কমে না। এরপর খিঁচুনি শুরু হয়। বমি। শরীর ব্যথা। মিরপুর থেকে টেস্ট করালে ডেঙ্গু পজেটিভ আসে। তারপর থেকে এখানেই ভর্তি। তিনি বলেন, গত ৫/৭ দিন আমার ছেলেকে নিয়ে এই হাসপাতালে রয়েছি। আমার ছেলের রক্তের পয়েন্ট (প্লাটিলেট) ২৫ হাজারে নেমে এসেছিল। এখন বাড়ছে। মাথা তুলে বসছে। আশাকরি ভালো হয়ে যাবে।

রেদোয়ানের পাশের বেডেই ডেঙ্গুর চিকিৎসা নিচ্ছেন ১৬ বছরের ম্রিয়া আর ৯ বছরের মিনহাজ। এই দুই ভাই-বোন রাজধানীর ধানমণ্ডি থেকে এসে ভর্তি হয়েছে ডিএনসিসি হাসপাতালে। তাদের দেখভালের দায়িত্বে থাকা তাদের মামা ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, আমার বোনের ছেলে-মেয়ে এই দুইজন। ওদের নিয়ে আমরা গত এক সপ্তাহ ধরে আছি হাসপাতালটিতে। ছোট ভাগ্নেটা আগের চেয়ে ভালো হলেও ভাগিনিটার প্লাটিলেট বাড়ছে না। ওদের বাবা-মাও এসব নিয়ে খুব ভেঙে পড়েছে। ডাক্তাররা চেষ্টা করে যাচ্ছে বাকিটা আল্লাহর হাতে। ইলিয়াস হোসেন, রাবেয়া খাতুন, রেদোয়ান হোসেন, মিনহাজের মতো হাসপাতালটিতে আরও শত শত রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

হাসপাতালটিতে আসা রোগীদের নাম লিপিবদ্ধের দায়িত্বে থাকা মাহমুদ হাসান বলেন, আমাদের এখানে প্রতিদিনই বিপুল পরিমাণ মানুষ ডেঙ্গুর লক্ষণ নিয়ে আসছেন। কোনোদিন ৩শ’ আবার কোনোদিন ২৫০ রোগী আসছে। সে হিসাবে বলা যায়, প্রতিদিন আমাদের এই হাসপাতালে ২০০ থেকে ২৫০ রোগী চিকিৎসা নিতে আসছেন। যাদের বেশির ভাগই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত।

হাসপাতালটির ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার ডা. তানজিয়া তামান্না বলেন, সাধারণত মানুষের জ্বর হলে প্যারাসিটামল খেলে দুই একদিনের মধ্যে চলে যায়। কিন্তু ডেঙ্গু হলে জ্বরের সঙ্গে পাতলা পায়খানা, বমি, দুর্বলতাভাব, দাঁতের গোড়া দিয়ে, মলদ্বার দিয়ে রক্ত বের হয়। কারও গায়ে ফোস্কা পড়ে। এসব লক্ষণ যদি কারও মধ্যে দেখা দেয় তাকে দেরি না করে নিকটবর্তী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে হবে। একইসঙ্গে রক্ত পরীক্ষা করাতে হবে। অনেক সময় ডেঙ্গু পজেটিভ না আসলেও রোগী দুর্বল হতে থাকে। তাই এমন কিছু দেখলে অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে বলেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৩:৪০:৫৫   ৪১ বার পঠিত  




প্রধান সংবাদ’র আরও খবর


হামাসের শীর্ষ প্রধান সিনওয়ার নিহত: ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী
২০২৫ সালের মধ্যে নির্বাচন হতে পারে: আইন উপদেষ্টা
আরও ৪টি কমিশন গঠন করেছে সরকার
পুলিশের আরও ৪ কর্মকর্তাকে গ্রেফতারের অনুমতি
‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল বিচার বিভাগীয় প্রতারণা ছাড়া কিছুই নয়’
শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তারে সময় বেঁধে দিল ট্রাইব্যুনাল
স্ত্রীসহ সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
ইসরাইলি হামলায় নিহত ৪০ ফিলিস্তিনি
ফেসবুকে চাকরির বিজ্ঞাপন দিয়ে ফাঁদে ফেলত তারা
সাগর-রুনি হত্যার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল ১৮ নভেম্বর

Law News24.com News Archive

আর্কাইভ