চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালানোর ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ ৭৩৫ জনের নাম উল্লেখ করে আরও একটি মামলা হয়েছে।
মামলায় ১০০০ থেকে ১২০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকার সাভারে গুলি করে শ্রমিক হত্যার ঘটনায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ছেলেসহ ৩৪১ জনের নামে মামলা হয়েছে। ব্যুরো ও প্রতিনিধির পাঠানো খবর।
চট্টগ্রাম: সোমবার রাতে নগরীর কোতোয়ালি থানায় এ মামলা করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ইসলামী স্টাডিজ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী তাফহীমুল ইসলাম। আন্দোলনের সময় তাফহীমুলের ডান হাতের কব্জিতে গুলি লাগে, যা হাতের এক পাশে ঢুকে অন্য পাশ দিয়ে বের হয়ে যায়।
মামলায় উল্লেখ অন্য অভিযুক্তরা হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক সংসদ-সদস্য এমএ লতিফ, মহিউদ্দিন বাচ্চু, নোমান আল মাহমুদ, মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, আবু রেজা মো. নেজামুদ্দিন নদভী, নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন, দক্ষিণ জেলার সাধারণ সম্পাদক মুজিবর রহমান, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত ১৪ জুলাই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে থাকা সক্রিয় শিক্ষার্থীদের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ‘রাজাকার’ সম্বোধন করলে আন্দোলনরত ছাত্ররা এর বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের ডাক দেন। এর আগে গত ১০ জুলাই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দমন করতে ছাত্রলীগকে নির্দেশনা দেন।
এরপর গত ১৬ জুলাই সারা দেশে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে। এরপর গত ৪ আগস্ট নগরীর নিউমার্কেট এলাকায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর আগ্নেয়াস্ত্র, ককটেল, কিরিচ, হকিস্টিক, রামদা নিয়ে হামলা করেন।
এছাড়া অভিযুক্তরা ছাত্র-জনতাকে উদ্দেশ্য করে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করে। গুলিবর্ষণের একপর্যায়ে মামলার বাদী তাফহীমুলের ডান হাতের কব্জিতে গুলি লাগে, যা হাতের এক পাশে ঢুকে অন্য পাশ দিয়ে বের হয়ে যায়। পরে তাকে তার সহপাঠীরা উদ্ধার করে চট্টগ্রাম ন্যাশনাল হাসপাতালে চিকিৎসা করান। পরে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফজলুল কাদের চৌধুরী জানান, শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৭৩৫ জনের নাম উলেখ একটি মামলা হয়েছে। মামলায় ১০০০-১২০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
ঢাকা উত্তর: সাভারের আশুলিয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলি করে আশরাফুল ইসলাম নামে এক পোশাক শ্রমিককে হত্যার ঘটনায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ছেলে সাফি মুদ্দাসির খান জ্যোতিসহ ৩৪১ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে আশুলিয়া থানায় এ মামলা করেন নিহতের ভাই নাসির উদ্দিন টিপু। তার বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগর থানার ভুতাইল গ্রামে। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক। আসামিদের বিরুদ্ধে পরস্পরের যোগসাজশে অস্ত্র নিয়ে দাঙ্গা-হাঙ্গামা, মারধর ও গুলি করে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।
নিহত আশরাফুল ইসলাম ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (ডিইপিজেড) শার্শা ডেনিমস নামের তৈরি পোশাক কারখানায় মেকানিক্যাল হেলপার পদে কাজ করতেন। স্ত্রী আঁখি আক্তার এবং দুই ছেলে অলিউল্লাহ (৫) ও শামীম উল্লাহকে (৩) নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন আশুলিয়ার পাবনারটেক গ্রামে।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের মধ্য দিয়ে পতন ঘটে স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের। ওইদিন বিকালে আশুলিয়ার বাইপাইল মোড়ে ছাত্র-জনতার সংঘর্ষের চিত্র তুলে ধরে ফেসবুকে লাইভ করছিলেন আশরাফুল ইসলাম। এ সময় বুকে এবং দেহের বিভিন্ন স্থানে গুলিবিদ্ধ হন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১১:০৬:২৯ ৪২ বার পঠিত