কারও বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দেওয়া হলে তিনি আসামি হয়ে যাচ্ছেন না। অভিযোগগুলো যাচাই-বাছাই করে ট্রাইব্যুনালে আবেদন আকারে উপস্থাপনের পর মামলা হবে।
মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এমন তথ্য জানিয়েছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
এ সময় প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামিম, বিএম সুলতান মাহমুদ ও আবদুল্লাহ আল নোমান উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর গুলি, হত্যার নির্দেশদাতা ও পরিকল্পনাকারী হিসাবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১১০ জনের নামে গণহত্যার আরও তিনটি অভিযোগ দায়ের হয়েছে ট্রাইব্যুনালে। মঙ্গলবার নিহত তিন শিক্ষার্থীর পরিবারের পক্ষ থেকে এ অভিযোগ দায়ের হয় বলে প্রসিকিউশন সূত্র জানিয়েছে। এ নিয়ে জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ২৫টি এবং শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে নির্বিচারে হত্যা ও লাশ গুম করে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনে আরেকটি আবেদন করা হয়েছে।
তাজুল ইসলাম বলেন, ট্রাইব্যুনাল এই মুহূর্তে ফাংশনিংয়ে নেই। আমরা সরকারের কাছে আহ্বান করেছি। খুব দ্রুততম সময়ের মধ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন হওয়া প্রয়োজন। ট্রাইব্যুনালের বিচারক নিয়োগ না হলে যারা আসামি তাদের গ্রেফতার আদেশ যদি চাই, তাদের গ্রেফতারের জন্য আমাদের কোর্টের আদেশ ছাড়া কঠিন।
সরকারের কাছে আমরা অনুরোধ করছি দ্রুততম সময়ের মধ্যে ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন হোক। ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন হলে কাজগুলো খুব দ্রুততর গতিতে এগোবে। আমাদের প্রস্তুতিগুলো এগোবে। সে চেষ্টা অব্যাহত আছে বলে মন্তব্য করেন চিফ প্রসিকিউটর।
আরেক প্রশ্নের জবাবে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, এখানে নিরপেক্ষ বিচারক লাগবে। আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য বিচারক লাগবে। হাইকোর্ট ডিভিশনে বিচারক আছেন, যারা বিগত সরকারের আমলে নিয়োজিত হয়েছেন। স্বাভাবকিভাবে তাদের যদি ট্রাইব্যুনালে আনা হয় তাহলে নানা দিক থেকে প্রশ্ন উঠতে পারে। আমরা চাই এমন সব বিচারক নিয়ে আসা হোক, যাদের ব্যাপারে কোনো প্রশ্ন নেই। সে কারণে সরকার নানা দিক বিবেচনা করছে। এজন্য সময় লাগছে।
কোন বিচারগুলো আগে হবে এমন প্রশ্নের জবাবে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, আমরা চাচ্ছি যেগুলো সবচাইতে বেশি সেনসেটিভ, সেগুলো আগে করতে। ঢাকা শহরে সবচেয়ে বড় বড় হত্যাকাণ্ড যেগুলো হয়েছে, যেমন উত্তরা, যাত্রাবাড়ী, বাড্ডা, মিরপুর ও আশুলিয়াতে হয়েছে, যেগুলো নির্মম হত্যাকাণ্ড এবং জাজ্বল্যমান সেগুলো আলাদা আলাদা করে তদন্ত করে দ্রুত এগুলো বিচারের জন্য আগে নিয়ে আসার চেষ্টা করা হবে। ঢাকার বাইরে রংপুরের আবু সাঈদ। সেটাও প্রায়োরিটি বেসিসে চেষ্টা করা হবে। তবে কোনটা সিরিয়ালি আগে হবে বলা যাচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, তদন্ত সংস্থার কাছে বা প্রসিকিউশনের কাছে যেগুলো আসছে, সেগুলো সরাসরি মামলা না। সেগুলো অভিযোগ আকারে আসছে। এগুলো যাচাই-বাছাই করে আমরা যখন ট্রাইব্যুনালের কাছে পিটিশন আকারে উপস্থাপন করব, তখন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আইনের অধীনে মামলা হবে। সে মামলা হওয়ার আগ পর্যন্ত অভিযোগে কারও নাম এলে তিনি আসামি হয়ে যাচ্ছেন না। ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট বা থানার ব্যাপার আলাদা। আমরা যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করব। এখানে ভুল-ভ্রান্তি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ৩ হত্যার অভিযোগ : ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় আরও তিনটি অভিযোগ করা হয়েছে। মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনে পৃথক তিনটি অভিযোগ দায়ের করা হয়। প্রসিকিউশন সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
সাব্বির হত্যা : ১৯ জুলাই উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টরে গুলিতে নিহত সাব্বির ইসলাম সাকিবের পিতা শহিদুল ইসলাম মল্লিকের দেওয়া অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ৬০ জনকে আসামি করা হয়।
মারজান : ১৮ জুলাই উত্তরা এলাকায় বিএনএস সেন্টারের সামনে চোখে গুলিবিদ্ধ মোহাম্মদ মমিনুল ইসলাম মারজান নিজেই অভিযোগ করেন ট্রাইব্যুনালে। তার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ২৭ জনকে আসামি করা হয়।
আয়াতুল্লাহ হত্যা : এছাড়া ৫ আগস্ট গাজীপুরের কালিয়াকৈর মৌচাক এলাকায় শফিপুর আনসার ভিডিপি একাডেমির সামনে মোহাম্মদ আয়াতুল্লাহ গুলিতে নিহত হন। ওই ঘটনায় তার পিতা সিরাজুল ইসলাম শেখ হাসিনাসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন।
বাংলাদেশ সময়: ৯:৫৪:৩০ ৪৯ বার পঠিত