আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেছেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যে অস্ত্রগুলো ব্যবহার করা হয়েছে, সেগুলো মারণাস্ত্র ছিল। এই অস্ত্র কার কার কাছে আছে, কার কার কাছে নেই, এগুলো আমরা তদন্ত করে বের করব। আপাতদৃষ্টিতে প্রত্যেকটা ভিকটিমের বক্তব্য থেকে পরিষ্কার হয়েছি যে, পুলিশের কাছে চাইনিজ রাইফেল ছিল। রোববার দুপুরে সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে তিনি একথা বলেন। এ সময় প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামিম, বিএম সুলতান মাহমুদ এবং আব্দুল্লাহ আল নোমান উপস্থিত ছিলেন।
মোবাইল ফোনে একটি বুলেট দেখিয়ে তাজুল ইসলাম বলেন, তাজা আলামত সংগ্রহের লক্ষ্যে তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশন টিম হাসপাতালগুলো পরিদর্শন করছে। যুদ্ধক্ষেত্রে সামরিক বাহিনী যে বুলেট ব্যবহার করে, সেরকম একটি গুলি আজকে সিএমএইচে অপারেশন করে বের করা হয়েছে। প্রসিকিউশন এগুলো আলামত হিসাবে সংগ্রহ করছে। আহতরা বলেছেন, পুলিশের কাছে চাইনিজ রাইফেল ছিল, এটা নিয়ে তৎকালীন সরকারকে জবাব দিতে হবে। পুলিশকে চাইনিজ রাইফেল কে দিয়েছিল, সেগুলো নিয়েও প্রশ্ন আছে।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনটি একটি বিশেষায়িত আইন। এই আইনে মানবতাবিরোধী সব বিচার করা সম্ভব। তবে আইনটি যুগোপযোগী করার জন্য এর কিছু ধারা পরিবর্তনের জন্য আলোচনা চলছে। চিফ প্রসিকিউটর বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় আরও তদন্তকারী কর্মকর্তা দরকার। তাছাড়া প্রসিকিউশনে আরও আইনজীবী নিয়োগ দিতে হবে। গত সপ্তাহে আমাদের সঙ্গে আইন উপদেষ্টার আলোচনা হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠনের দাবি জানিয়েছি। কারণ, ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন না হলে আদালতের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় অনেক আদেশ আমরা নিতে পারছি না। আদালতের আদেশ ছাড়া অনেক কাজ বন্ধ হয়ে আছে। তিনি (আইন উপদেষ্টা) আশ্বস্ত করেছেন। সম্ভবত এক সপ্তাহের মধ্যে পুনর্গঠন হবে। সেটা হলে বিচারের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু হবে।
সিএমএইচ হাসপাতালে চিফ প্রসিকিউটর : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহতদের দেখতে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) যান মোহাম্মদ তাজুল ইসলামের নেতৃত্বে প্রসিকিউশন টিম। রোববার দুপুরে হাসপাতালে গিয়ে আহতদের খোঁজখবর নেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম, বিএম সুলতান মাহমুদ এবং আব্দুল্লাহ আল নোমান। প্রসিকিউশন সূত্র জানায়, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহত হয়ে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ১৮ জুলাই থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৩২ জন ভর্তি হয়েছেন।
৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সারা দেশে গণহত্যা চালানোর অভিযোগে ভারতে অবস্থান করা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অন্তত ১৫টি পৃথক অভিযোগ দায়ের হয়। বর্তমানে সেগুলো তদন্ত পর্যায়ে রয়েছে। ৫ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর নিয়োগের কথা জানিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সলিসিটর অনুবিভাগ। এতে চিফ প্রসিকিউটর হিসাবে নিয়োগ পেয়েছেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। এছাড়া সুপ্রিমকোর্টের আরও চারজন আইনজীবীকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর নিয়োগ পাওয়া বাকি চার আইনজীবী হলেন, মো. মিজানুল ইসলাম, গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামিম, বিএম সুলতান মাহমুদ ও আবদুল্লাহ আল নোমান। একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার।
এ ট্রাইব্যুনালে ইতোমধ্যে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অনেকের বিচার ও সর্বোচ্চ শাস্তি কার্যকর হয়েছে। তার মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতার ফাঁসি ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত আরও কয়েকজনের বিচার ট্রাইব্যুনালে চলছিল।
বাংলাদেশ সময়: ৭:৩৯:০৮ ৬৫ বার পঠিত