বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় গুলি ও হামলা চালিয়ে হত্যাচেষ্টা ও আহত করার ঘটনা এবং এর আগে বিভিন্ন সময়ে ঘটে যাওয়া সহিংসতা, ভাঙচুর ও চাঁদাবাজির ঘটনায় কুমিল্লা, গাজীপুরের কাপাসিয়া, রাজশাহীর তানোর, কুমিল্লার তিতাস এবং বগুড়ার ধুনটে আরও আটটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, সাবেক মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী সিমিন হোসেন রিমিসহ কয়েকজন সাবেক সংসদ-সদস্য এবং আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীসহ প্রায় দেড় হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে।
কুমিল্লা: কুমিল্লায় সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ও নাঙ্গলকোট থানা পুলিশের সাবেক ওসি নজরুল ইসলামসহ ৮৫ জনের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার মামলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ৫ নম্বর আমলি আদালতে মামলাটি করা হয়। মামলাটি আমলে নিয়ে থানা পুলিশকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক আবু বকর সিদ্দিক। শুক্রবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মামলার বাদী অ্যাডভোকেট একরামুল হক মজুমদার। তিনি নাঙ্গলকোট উপজেলার আশারকোট এলাকার খিদর আলীর ছেলে। মামলায় অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন- নাঙ্গলকোট থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো. আব্দুল হামিদ, তার ছেলে যুবলীগ নেতা মো. মঈন উদ্দিন, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম রুবেল প্রমুখ। মামলায় ৩৫ জনের নাম উল্লেখ এবং আরও ৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। মামলায় ২০১৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর নাঙ্গলকোটের আশারকোটা এলাকায় বিএনপির প্রতিবাদ সভায় সাবেক অর্থমন্ত্রীর নির্দেশে হামলার অভিযোগ করা হয়েছে।
কাপাসিয়া (গাজীপুর): দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের কন্যা সাবেক মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী সিমিন হোসেন রিমির নামে কাপাসিয়া থানায় মামলা হয়েছে। মিছিলে হামলা, গুলি ও মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগের অভিযোগে এ মামলায় রিমিকে হুকুমের আসামি করা হয়েছে। এ মামলায় আরও ৩১ জনের নাম উলেখসহ অজ্ঞাতনামা আসামি রয়েছে আরও ৬০ জন। গাজীপুরের কাপাসিয়া থানায় বুধবার এ মামলা করা হয়। মামলার বাদী সাজিদুল ইসলাম বলেন, ৪ আগস্ট সকাল সাড়ে ১০টায় আমিসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৭০ থেকে ৮০ জন মিছিল নিয়ে খিরাটি স্কুল মাঠ হতে চালার বাজারে যাওয়ার সময় বিপরীত দিক থেকে উল্লিখিত মামলার আসামিরা আমাদের ওপর হামলা চালায়। আমার ছেলে সাগরের মাথায় চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে এবং ১৫ থেকে ১৬ জন গুরুতর আহত হয়। মামলায় অন্য আসামিরা হলেন- মো. শহিদুল্লাহ, মো. হারুন অর রশিদ (হিরণ মোল্লা) মাহবুব, মাজহারুল প্রমুখ।
তানোর (রাজশাহী): রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী, তানোর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এবং যুবলীগের সভাপতি লুৎফর হায়দার রশিদ ময়না ও বেশ কয়েকটি ইউপি চেয়ারম্যানসহ বিপুলসংখ্যক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে পৃথক ৪টি মামলা হয়েছে। বিএনপির নির্যাতিত নেতাকর্মীরা বাদী হয়ে ১ থেকে ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তানোর থানা ও সংশ্লিষ্ট আদালতে এসব মামলা করেন। প্রথম মামলাটির বাদী তানোর উপজেলার কামারগাঁ ইউপির কাদেরপুর গ্রামের আবুল কালাম আজাদ। তিনি অত্র ইউপির ৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি। এ মামলায় আওয়ামী লীগের ১০৭ জন নেতাকর্মী ছাড়াও ২০০ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি আসামি। ২০১৮ সালের ২৭ ডিসেম্বর কামারগাঁ বাজারে অবস্থিত জিয়া পরিষদ কার্যালয়ে অনধিকার প্রবেশ করে ভাঙচুর ও ১০ লাখ টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগে এ মামলা করা হয়। দ্বিতীয় মামলার বাদী উপজেলার চাঁন্দুড়িয়া ইউপির দেওতলা গ্রামের আব্দুল করিম সরকার। তিনি রাজশাহী জেলা কৃষক দলের সদস্য। মামলায় আওয়ামী লীগের ১৫৬ জন নেতাকর্মীসহ আর ২৫০ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। ২০২৩ সালের ৪ এপ্রিল বিকালে চাঁন্দুড়িয়া বাজারে অবস্থিত আওয়ামী লীগের অফিস থেকে বেরিয়ে বাদীকে ঘেরাও করে বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র দ্বারা মারধর করে ৫ লাখ টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগ আনা হয়েছে এ মামলায়। তৃতীয় মামলার বাদী তানোর পৌর সদরের আমশো মথুরাপুর গ্রামের বাসিন্দা মাহবুব আলম। তিনি তানোর পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক। এ মামলার প্রধান আসামি তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক আবুল কালাম আজাদ প্রদীপ সরকার। মামলায় ১১ জন নামধারী আসামি এবং অজ্ঞাত আরও ৫০-৬০ জন। মামলায় অভিযোগ করা হয়, ৪ আগস্ট বেলা ১১টার দিকে বাদীকে আসামিরা বিএনপি সমর্থক বলে ৩ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে পার্টি অফিসে নিয়ে মারধর করে ৩ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করে। চতুর্থ মামলাটি করেন তানোর উপজেলার চাঁন্দুড়িয়া ইউপির কৃষক দলের সভাপতি হাসান মেম্বার। এ মামলায় আওয়ামী লীগের ২৩ জন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখসহ শতাধিক অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
তিতাস (কুমিল্লা): কুমিল্লার তিতাসে সাবেক সংসদ-সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মো. আবদুস সবুর ও জাতীয় পাটির সাবেক সংসদ-সদস্য আমির হোসেন ভূঁইয়াসহ ১৪২ জনের নামে ও ১৫০-২০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি দেখিয়ে তিতাস থানায় মামলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে কড়িকান্দি গ্রামের আ. রহিমের ছেলে মো. জামির হোসেন বাদী হয়ে তিতাস থানায় এ মামলা করেন। মামলায় অভিযোগ করা হয়, ৫ আগস্ট মিছিল নিয়ে ঢাকা-হোমনা সড়কে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কাছে গেলে সাবেক সংসদ-সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মো. আবদুস সবুর ও আমির হোসেন ভূঁইয়ার নির্দেশে কয়েকশ লোক দেশীয় অস্ত্র, লোহার পাইপ নিয়ে তাদের মিছিলে হামলা করে। এতে বাদীসহ কয়েকজন আহত হন। মামলার অন্য আসামিরা হলেন- দাউদকান্দির সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মেজর (অব.) মোহাম্মদ আলী সুমন, তিতাস উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান পারভেজ হোসেন সরকার প্রমুখ।
ধুনট (বগুড়া): বগুড়ার ধুনটে বিএনপি নেতার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও নেতাকর্মীদের মারধরের অভিযোগে আওয়ামী লীগের ২৯ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ধুনট সদর ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য বথুয়াবাড়ি গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম বৃহস্পতিবার থানায় এ মামলা করেন। এজাহারে অন্যতম আসামিরা হলেন- ধুনট সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গোলজার হোসেন, সদস্য আব্দুর রাজ্জাক, শামীম হোসেন ও উপজেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক চালাপাড়া গ্রামের আসাদুজ্জামান নুর। মামলার অভিযোগে বলা হয়, ধুনট উপজেলার বথুয়াবাড়ি গ্রামের আবুল ফকিরের ছেলে বিএনপি নেতা জাহাঙ্গীর আলমের বাঙালি নদীর বথুয়াবাড়ি সেতুর পূর্ব পাশে মুদি দোকান ও চা স্টল আছে। ২১ আগস্ট বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে বিএনপির কয়েকজন নেতাকর্মী ওই চায়ের দোকানে বসে আলাপ-আলোচনা করছিলেন। এ সময় রাজনৈতিক পূর্ব বিরোধের জের ধরে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা সংঘবদ্ধ হয়ে হামলা চালিয়ে চা স্টল ও মুদি দোকান ভাঙচুর করেন। হামলায় ব্যবসায়ী বিএনপি নেতা জাহাঙ্গীর আলম, ফিরোজ আহম্মেদ ও ভোলা ফকির আহত হন। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।
বাংলাদেশ সময়: ২:৪১:২২ ৫৩ বার পঠিত