বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার মিছিলে নির্বিচারে গুলির অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৮০ জনের নামে পৃথক তিনটি হত্যা মামলা করা হয়েছে। বুধবার ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেনের আদালত অভিযোগগুলো খিলগাঁও থানাকে এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন।
এছাড়া ঢাকার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাফিজুর রহমানের আদালত একটি অভিযোগ আশুলিয়া থানাকে এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন। এই তিন মামলার প্রধান আসামি শেখ হাসিনা।
মুদি দোকানি হত্যা: হাসিনা-রেহানা-জয়-পুতুলসহ আসামি ৩১ জন
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রাজধানীর বনশ্রীতে মুদি দোকানি মিজানুর রহমান গুলিতে নিহত হওয়ার মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বোন শেখ রেহানা, ছেলে সজিব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ ৩১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন নিহতের বাবা কামাল হোসেন।
মামলার অপর আসামিদের মধ্যে রয়েছেন- ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান কামাল, জুনায়েদ আহমেদ পলক, শেখ ফজলে নূর তাপস, হাসানুল হক ইনু, রাশেদ খান মেনন, আমির হোসেন আমু, ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন, বিজিবির মহাপরিচালক, চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, হাবিবুর রহমান, র্যাবের মহাপরিচালক, সৈয়দ নুরুল ইসলাম, হারুন-অর-রশিদ, বিপ্লব কুমার সরকার, সাদ্দাম হোসেন, ব্যারিস্টার সাজ্জাদ হোসেন।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে গত ১৯ জুলাই বিকাল ৩টার দিকে খিলগাঁও থানাধীন বনশ্রী এলাকায় পায়ে গুলিবিদ্ধ হন মিজানুর রহমান। পরে তাকে পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ৫টা ৪০ মিনিটের দিকে মারা যান তিনি।
কিশোর আশিকুল হত্যা
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ১৪ বছরের কিশোর আশিকুল ইসলাম গুলিতে নিহতের ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ ২৭ জনের বিরুদ্ধে আরেকটা হত্যা মামলা করেছেন নিহতের মা আরিশা আফরোজ। গত ১৯ জুলাই বনশ্রী এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান আশিক।
মামলার অপর আসামিদের মধ্যে রয়েছেন- আসাদুজ্জামান খান কামাল, আব্দুল্লাহ আল মামুন, হারুন-অর-রশীদ, বিপ্লব বিশ্বাস।
সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী হত্যা
আশুলিয়া থানার সামনে সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী মো. সাজ্জাদ হোসেন সজলকে (১৯) গুলি করে হত্যার পর লাশ আগুন দিয়ে পোড়ানোর অভিযোগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন ভাই মিজানুর রহমান।
মামলার অপর আসামিদের মধ্যে রয়েছেন- ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান কামাল, আব্দুল্লাহ আল-মামুন, হারুন অর রশীদ, বিপ্লব কুমার, হাবিবুর রহমান।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, আন্দোলনের সময় ৫ আগস্ট আশুলিয়া থানাধীন বাইপাইলে হাজার হাজার ছাত্র-জনতা কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমর্থনে মিছিল করছিলেন। সেই আন্দোলন দমনের জন্য পুলিশ নির্বিচারে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালায় এবং গ্রেফতার করে। ওই সময় সিটি ইউনিভার্সিটির বিএসসি (টেক্সটাইল) দ্বিতীয় সেমিস্টারের ছাত্র মো. সাজ্জাদ হোসেন সজলকে (১৯) আটক করে থানায় নিয়ে অমানবিক নির্যাতনের পর পুলিশ গুলি করে মেরে ফেলে।
পরে তার লাশ ধ্বংস, গুম, নিশ্চিহ্ন করার উদ্দেশ্যে আরও অজ্ঞাতনামা ৭-৮ জন আশুলিয়া থানার সামনে রাস্তার ওপর রাখা পুলিশের ব্যবহৃত লেগুনায় থাকা সজলের লাশসহ অন্য ছাত্রদের লাশ পেট্রল ঢেলে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেয়।
বাংলাদেশ সময়: ২৩:১৩:০১ ৫০ বার পঠিত