নিউ ইয়র্ক টাইমসের নিবন্ধ: ক্র্যাকডাউনের পর গর্জে উঠেছে বাংলাদেশ

প্রথম পাতা » আন্তর্জাতিক » নিউ ইয়র্ক টাইমসের নিবন্ধ: ক্র্যাকডাউনের পর গর্জে উঠেছে বাংলাদেশ
রবিবার, ৪ আগস্ট ২০২৪



নিউ ইয়র্ক টাইমসের নিবন্ধ: ক্র্যাকডাউনের পর গর্জে উঠেছে বাংলাদেশ

একটি মারাত্মক সরকারি দমন-পীড়নের মাত্র কয়েক সপ্তাহ পর শনিবার থেকে নতুন করে বিক্ষোভ মাথাচাড়া দিয়েছে বাংলাদেশের মাটিতে। বিক্ষোভকারীরা আবারো রাস্তায় নেমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে গলা চড়িয়েছেন। গত মাসে শান্তিপূর্ণভাবে শুরু হওয়া ছাত্র আন্দোলন ছত্রভঙ্গ করার প্রচেষ্টায় বিক্ষোভকারীদের ওপর নিরাপত্তা বাহিনী হামলা চালালে তা সহিংস রূপ নেয়। সরকার ছাত্র সংগঠকদের আটক করে, প্রায় ১০,০০০ লোককে গ্রেপ্তার করে। সেইসঙ্গে আরও কয়েক হাজার ছাত্রের বিরুদ্ধে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের অভিযোগ তোলা হয়। কারফিউ এবং যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে পরিস্থিতিকে তখন শান্ত করে সরকার । সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতির অবসানের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আদালত থেকে উল্লেখযোগ্য জয় পেয়েছে, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরাপত্তা বাহিনীর ক্র্যাকডাউন - যার ফলে ২০০ জনেরও বেশি লোকের মৃত্যু হয়েছে - তা অনেক বাংলাদেশিকে আরও ক্ষুব্ধ করে তুলেছে এবং আন্দোলনের পরিধিকে প্রসারিত করেছে।

কারফিউ উঠে যাবার কয়েকদিন পরেই রাস্তায় বিক্ষোভকারীদের পুনঃউত্থান, ১৭০ মিলিয়নের দেশের নেত্রী হিসাবে শেখ হাসিনাকে সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। নিজের ১৫ বছরের শাসনামলে এতো কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাননি ‘আয়রন লেডি’ । এর আগে ছাত্ররা শেখ হাসিনাকে ক্ষমা চাওয়ার এবং কিছু কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করার আহ্বান জানিয়েছিল।এখন, তারা শত শত বিক্ষোভকারীর মৃত্যুর জন্য জবাবদিহি হিসাবে তার এবং তার সরকারের পদত্যাগ দাবি করছে। শেখ হাসিনা পদত্যাগ না করা পর্যন্ত বিক্ষোভকারীরা “সম্পূর্ণ অসহযোগ আন্দোলন” চালিয়ে যাবার আহ্বান জানিয়েছে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলিতে হেফাজতে নির্যাতনের শিকার ছাত্রনেতাদের একজন নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘তার ( শেখ হাসিনা ) যাওয়ার সময় এসেছে। শুধু শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করাই যথেষ্ট নয়। এদেশে যে খুন, লুটপাট ও দুর্নীতি হয়েছে তার বিচার প্রয়োজন। সামনের দিনগুলিতে সহিংসতা বাড়তে পারে , এই আশঙ্কায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ রবিবার এবং সোমবার সারা দেশে দলীয় সমাবেশের আহ্বান জানিয়েছে।

স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তা এবং দলের নেতাদের মতে, শনিবার সন্ধ্যার মধ্যে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর চট্টগ্রামে শেখ হাসিনার দলের বেশ কয়েকজন নেতার বাসায় হামলা হয়েছে।

প্রতিশোধ নিতে এর কয়েক ঘন্টা পরে, শহরে বেশ কয়েকটি বিরোধী নেতার বাড়িতেও হামলা করা হয়। ঢাকার একটি আদালত সব ধরনের সরকারি চাকরিতে অর্ধেকেরও বেশি কোটা পুনর্বহাল করার পর জুলাইয়ের শুরুতে শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ শুরু হয়। ২০১৮সালে বিক্ষোভের চাপে, মুক্তিযুদ্ধের বংশধরদের জন্য চলে আসা কয়েক দশকের পুরোনো ব্যবস্থার অবসান করেন শেখ হাসিনা। কোটাকে বৈষম্যমূলক বলে অভিহিত করেছেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্লেষকরা বলছেন , ইস্যুটির উপর ক্ষোভ সাম্প্রতিক বছরগুলিতে দেশের স্থবির অর্থনীতি এবং একটি ক্রমবর্ধমান কর্তৃত্ববাদী শাসক দলের প্রতি বৃহত্তর অসন্তুষ্টির বহিঃপ্রকাশ। প্রথমদিকে এই ছাত্র বিক্ষোভকে সেভাবে গুরুত্ব দেননি শেখ হাসিনা ।

যখন বিক্ষোভের আগুন জ্বলে ওঠে এবং সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে, তখন সমঝোতার জন্য এগিয়ে আসেন প্রধানমন্ত্রী । তারপরে সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়ে কোটা-সংরক্ষিত চাকরির অনুপাত ৫৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৭ শতাংশ করা হয় । কিন্তু ততক্ষণে ক্র্যাকডাউনের ফলে একের পর এক ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার শেখ হাসিনা আবারও সমঝোতার কথা বলে জানিয়েছেন - ” আলোচনার জন্য গণভবনের দরজা খোলা । আমি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বসে তাদের কথা শুনতে চাই। আমি কোনো সংঘর্ষ চাই না।”হাসিনার সরকার গত মাসের সহিংসতার জন্য তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামিকে দায়ী করেছে। তাদের নেতাদের গ্রেপ্তার করেছে। তিনি জামায়াতে ইসলামী এবং এর ছাত্র সংগঠনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করার একটি ডিক্রিও জারি করেছেন । গোয়েন্দারা কয়েকজন আটক ছাত্র নেতাকে ক্যামেরার সামনে উপস্থিত করেন , যেখানে তারা তাদের আন্দোলনের সমাপ্তি ঘোষণা করে একটি বিবৃতি দেন ।

কিন্তু যে মুহুর্তে সরকার নিষেধাজ্ঞাগুলি শিথিল করেছে, বিক্ষোভকারীরা তাদের সহকর্মী যারা নিহত, আহত বা আটক রয়েছে তাদের ন্যায় বিচারের দাবি জানাতে শুরু করেছে । ছাত্রনেতারা মুক্ত হয়ে যাবার পর বলেছিল যে তাদের বিবৃতি দিতে বাধ্য করা হয়েছিল। তারা গণসমাবেশের আহ্বানের পুনরাবৃত্তি করে ।নাহিদ ইসলাম, যে ছাত্রনেতা শনিবার শেখ হাসিনার পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছিলেন, তাকে ১৬ জুলাইয়ের ক্র্যাকডাউন শুরু হওয়ার পরপরই নিরাপত্তা বাহিনী তুলে নিয়ে গিয়েছিলো । কয়েকদিন পরে যখন ছাত্রনেতা ইসলামকে মুক্তি দেওয়া হয়, তখন তার বোন ফাতেমা তাসনিম বলেছিলেন যে ভাইকে নির্যাতন করা হয়েছিল। তার হাতে ক্ষত ছিল এবং মারধরের কারণে তার উরু কালো হয়ে গিয়েছিল। কয়েকদিন পর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাকে আবার তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। তাসনিম বলেন, ‘জনগণ বাংলাদেশে চলমান কর্তৃত্ববাদকে ভেঙে ফেলার জন্য তার ভাইয়ের মতো ছাত্র নেতাদের দিকে তাকিয়ে আছে।তিনি একজন বাঙালি কবির উদ্ধৃতি তুলে বলেন : “আমরা যদি না জাগি মা, কেমনে সকাল হবে ?”

বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি দীর্ঘদিন ধরে সহিংস। কিন্তু বর্তমান ক্র্যাকডাউনের পর অনেকেই শেখ হাসিনার সরকার কর্তৃক ছাত্র এবং অন্যান্য তরুণদের টার্গেট করাকে সব সীমা অতিক্রম করা হিসেবে দেখছেন।বাংলাদেশের সংবাদপত্র ‘প্রথম আলো’ ২০০ জনের বেশি মৃত্যুর মধ্যে ১৭৫ টি পরীক্ষা করে দেখেছে । তারা দেখেছে ১৩৭ জনের শরীরে বুলেটের ক্ষত রয়েছে এবং মৃতদের মধ্যে ১০০ জনেরও বেশি লোক ৩০ বছরের কম বয়সী। ইউনিসেফ জানিয়েছে যে এই ক্র্যাকডাউনে কমপক্ষে ৩২ টি শিশু নিহত হয়েছে। শুক্রবার দুপুরের নামাজের পর বিক্ষোভকারীরা আবারো রাস্তায় নেমে আসে। শুক্রবার বিকেলের দিকে সারাদেশে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। এতে এক পুলিশ কর্মকর্তাসহ অন্তত দুইজন নিহত হয়েছেন।

শনিবার সেই সংখ্যা আরো বেড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। ঢাকার পাশাপাশি দেশের অন্যান্য কয়েকটি জেলা জুড়েও বড় সমাবেশের খবর পাওয়া গেছে। শনিবার ঢাকায় নিরাপত্তা বাহিনীকে আরও সংযত দেখা গেলেও অন্যান্য জেলায় কয়েক ডজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ঢাকা কলেজের কাছে জড়ো হওয়া একদল বিক্ষোভকারীকে স্লোগান দিতে দেখা যায় , ‘আমার বুকের ভেতর ঝড় উঠেছে। আমি আমার বুক পেতে দিয়েছি।এগিয়ে আসুন এবং গুলি করুন।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান, যিনি বিক্ষোভে সামিল হয়েছেন তিনি বলছেন - ‘যে কর্তৃপক্ষ এই ক্র্যাকডাউন পরিচালনা করেছিল সেই কর্তৃপক্ষই ন্যায়বিচার করবে বলে আমার বিশ্বাস হয় না ।আপনি কীভাবে একজন খুনিকে একটি হত্যার বিচার করতে বলবেন?এই হত্যাকাণ্ডগুলো সংঘটিত হয়েছিল রাষ্ট্রের সহযোগিতায় । ‘

বাংলাদেশ সময়: ১৭:০৫:৩২   ৪৫ বার পঠিত  




আন্তর্জাতিক’র আরও খবর


কুয়েতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ জাবের আর নেই
গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে বৃটিশ ৬ কূটনীতিককে বহিষ্কার করলো রাশিয়া
হাসিনার প্রত্যর্পণ প্রসঙ্গে প্রশ্ন, কৌশলে উত্তর দিলেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী
ভারতের হুমকি: পররাষ্ট্রনীতির নতুন বিন্যাস
ইসরাইলকে থামাতে ইসলামিক জোট গঠনের আহ্বান এরদোগানের
ভারতের সশস্ত্রবাহিনীকে প্রস্তুত থাকতে বললেন রাজনাথ
পণবন্দি নিয়ে ইসরাইলে বিক্ষোভ তুঙ্গে, চাপে নেতানিয়াহু
হিন্দুস্তান টাইমসের নিবন্ধ বাংলাদেশের জনগণ কী চায় তা দিল্লির বোঝা উচিত
দ্য ডিপ্লোম্যাটের নিবন্ধ বাংলাদেশ পুলিশ কি জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার করতে পারবে?
বাংলাদেশে ক্ষমতার পালাবদল দিল্লির জন্য উদ্বেগের নয়: শশী থারুর

Law News24.com News Archive

আর্কাইভ