ফেসবুক খুলবে কবে?

প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » ফেসবুক খুলবে কবে?
শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪



এখন পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয়েছে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ আরও কয়েকটি মাধ্যম।পরিস্থিতি মোকাবিলায় ৫ দিন পর সীমিত পরিসরে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা চালু করে সরকার। কিন্তু মোবাইল ইন্টারনেট সেবা এখনো বন্ধ রয়েছে। চলতি সপ্তাহে মোবাইল ইন্টারনেট সেবা চালুর ঘোষণা দেয়া হয়েছে। তবে কবে নাগাদ খোলা হবে তা স্পষ্ট করা হয়নি। মোবাইল অপারেটররা জানিয়েছেন, তারা সরকারের নির্দেশনার অপেক্ষায় রয়েছেন। সরকারের নির্দেশনা পেলে সঙ্গে সঙ্গে মোবাইল ইন্টারনেট চালু করা হবে। অন্যদিকে গুগলের সব সেবা খোলা হলেও এখন পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয়েছে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ আরও কয়েকটি মাধ্যম। ফেসবুক কবে সবার জন্য উন্মুক্ত করা হবে তা নিয়ে আপাতত কেউ মন্তব্য করতে রাজি নন। তবে টেলিকম ও তথ্য যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এখনো ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম খুলে দেয়ার ক্ষেত্রে ঝুঁকি দেখছেন।

তিনি বলেছেন, তারা (ফেসবুক) এসে যদি সেই প্রতিশ্রুতি দেয় যে তারা দায়িত্বশীল আচরণ করবে, তখন আমরা বিবেচনা করে দেখবো। এদিকে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় ফেসবুক বন্ধ থাকলেও এখন বিকল্প উপায়ে অনেকেই জনপ্রিয় এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করছেন।

মিরপুর শেওড়াপাড়ার বাসিন্দা কবির হোসেন বলেন, প্রযুক্তি এখন অনেক এগিয়ে। সরকার ফেসবুক বন্ধ রাখলে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু থাকায় আমরা ভিপিএন এর মাধ্যমে ফেসবুক ব্যবহার করতে পারছি। আমার মতো আরও অনেকেই ফেসবুক ব্যবহার করছেন। এদিকে বন্ধের সময় প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক নিয়মিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ব্যবহার করছেন বলে জানান বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, প্রতিমন্ত্রী ফেসবুক, ইউটিউব বন্ধ করতে এত যুদ্ধ ঘোষণা করলেন অথচ তিনি এই দুই মাধ্যমেই দু’দিন ধরে পোস্ট করেছেন। আর বিপাকে পড়েছেন দেশের সব মানুষ। এ কেমন আচরণ? একইসঙ্গে ব্রডব্র্যান্ড ইন্টারনেট সেবা প্রসঙ্গে তিনি জানান, সারা দেশে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা চালু হয়েছে এই তথ্যটি সঠিক নয়। যাও পাওয়া গেছে তা ন্যারো ব্র্যান্ড এটিকে কোনো ভাবেই ব্রডব্যান্ড বলা যাবে না। তিনি দাবি করেন, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা চালু হওয়ায় অনেক প্রতিষ্ঠানের তথ্য হাতিয়ে নিয়েছে হ্যাকার গ্রুপ। কবে নাগাদ ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো খুলে দেয়া হবে এমন প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা খেয়াল করছি যে এই মুহূর্তে কিছু সামাজিক মাধ্যম, বিশেষ করে ফেসবুক, ইউটিউব তারা যেহেতু আমাদের বাংলাদেশের আইনকে কোনো ভাবে মানছে না, আমাদের ধর্মীয় মূল্যবোধ, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা, শৃঙ্খলা কোনো কিছুকেই তারা সম্মান দেখাচ্ছে না এবং তারা তাদের নিজেদের পলিসি গাইডলাইন, প্রাইভেসি সেটিংস নিজেরাই ভঙ্গ করছে, তো এই মুহূর্তে আমরা এই ঝুঁকিটা কীভাবে নেবো? ইন্টারনেট ব্যবহারে সবাইকে ‘সহনশীল’ হওয়ার পরামর্শ দিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সত্য-মিথ্যা যাচাই আগে, ইন্টারনেটে শেয়ার পরে। তা না হলে ব্যক্তি, পরিবার ও দেশ সবাই ক্ষতির শিকার হবেন।

এক তথ্যমতে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ৪ কোটি ৬৫ লাখ ৪৮ হাজার ৩০০ জন। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ কোটি ৩৯ লাখ ৫৫ হাজার ১০০ জনে। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েছে এক কোটি ৭৪ লাখ ৬ হাজার ৮০০ জন। বর্তমানে এ সংখ্যা আরও বেড়েছে বলে জানান টেলিকম সেক্টরের সংশ্লিষ্টরা। কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফরম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচিতে দেশ জুড়ে সংঘাত-সহিংসতা ছড়িয়ে পড়লে গত ১৭ই জুলাই রাতে মোবাইল ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর পরিস্থিতির আরও অবনতি হলে বৃহস্পতিবার রাতে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পরিষেবাও বন্ধ হয়ে যায়। পাঁচদিন পর মঙ্গলবার রাতে সীমিত পরিসরে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পরিষেবা ফিরে। পরদিন বুধবার রাতে সারা দেশে বাসাবাড়িতে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পরিষেবা পাওয়া গেলেও এখন পর্যন্ত মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ফিরলেও আগের মতো গতি না পাওয়ার কথা বলছেন গ্রাহকরা। এ বিষয়ে বিটিআরসি চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, চেষ্টা চলছে গতিটা পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার। ইন্টারনেট না থাকায় স্থবির হয়ে পড়েছিল ই-কমার্স, পোশাক খাতসহ বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্য, বন্ধ থাকে বন্দরের কার্যক্রম। ইন্টারনেটভিত্তিক সব ধরনের সংবাদ সেবাও অচল হয়ে পড়ে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ১৮ই জুলাই মহাখালীর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবনে আগুন দেয়া হলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সড়কের ওপর থাকা ইন্টারনেট সেবাদাতা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তার। ক্ষতিগ্রস্থ হয় কয়েকটি ডেটা সেন্টারও। সে কারণেই সারা দেশে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ হয়ে যায়।

এর আগে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি ইমদাদুল হক সাংবাদিকদের প্রশ্নে ইন্টারনেট সেবা বন্ধের ঘোষণা দেন। এ নিয়ে টেলিযোগাযোগ খাত সংশ্লিষ্টরা ব্যাপক সমালোচনা করেন তার। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশে ব্রডব্যান্ড এবং মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়েছে এই সংবাদটি সর্বপ্রথম প্রচার করা হয় আইএসপিএবি’র সভাপতির পক্ষ থেকে। তিনি প্রথম দেশবাসীকে জানান, খাজা টাওয়ারে সন্ত্রাসীদের হামলার কারণে অগ্নিকাণ্ডে ডাটা সেন্টার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাই ইন্টারনেট বন্ধ রয়েছে। পরবর্তীতে প্রতিমন্ত্রীর পক্ষ থেকে বলা হয়- গুজব প্রতিরোধে ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার আবার টেলিভিশনের স্ক্রলে দেখছি আইএসপিএবির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে- ফেসবুক, মেসেঞ্জার হোয়াটসঅ্যাপ ও টিকটক বন্ধ করা হয়েছে, তবে ইউটিউব চলবে। আমরা মনে করি, এ ধরনের সিদ্ধান্ত অবশ্যই সরকারের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে। তাই আমাদের প্রশ্ন টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হিসেবে আইএসপিএবিকে নিয়োগ করা হয়েছে কিনা? যদি নিয়োগ করা হয়ে থাকে তাহলে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু যদি নিয়োগ করা না হয়ে থাকে তাহলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সরকারি এবং রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত জানাতে পারে কিনা? আমরা মনে করি, তাদের পক্ষ থেকে জনগণকে জানাতে পারতো এক দেশ এক রেট গাইডলাইন অনুযায়ী তারা জুলাই মাসের কোনো বিল গ্রাহকের কাছ থেকে নেবে না। এর একটি বিজ্ঞপ্তি দেশবাসীকে জানাতে পারতো এবং তাদের অপারেটরদের বিল না নেয়ার জন্য বলতে পারতো। কিন্তু তারা সেদিকে না গিয়ে সরকারি সিদ্ধান্ত মুখপাত্রের মতো দেশবাসীকে জানাচ্ছে। এ ব্যাপারে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। সেই সঙ্গে জুলাই ২০২৪ মাসের বিল যাতে আদায় করা না হয় সে ব্যাপারে সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে অনুরোধ করছি। এ প্রসঙ্গে আইএসপিএবির সভাপতি ইমদাদুল হক বলেন, বিষয়টি আসলে এরকম নয়।

আমাদের সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গণমাধ্যম আমার কাছে এসে জানতে চেয়েছে তাই মন্তব্য করেছি। আগ বাড়িয়ে আমি কোথাও গিয়ে ঘোষণা দেইনি। এক প্রশ্নে তিনি জানান, সারা দেশে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবার উন্নয়নে তারা কাজ করছেন। সারা বাংলাদেশে আইএসপিএবি’র ৩ হাজার সদস্য রয়েছেন। এর মধ্যে শুধু রাজধানীতেই রয়েছেন ৭ থেকে ৮’শর মতো। পাশাপাশি মোবাইল ইন্টারনেট গ্রাহকরাও এখন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। কারণ মোবাইল ইন্টারনেট এখন বন্ধ রয়েছে। সেক্ষেত্রে বাড়তি ১০ কোটি মোবাইল ইন্টারনেট গ্রাহকদেরও আমাদের সেবা দিতে হচ্ছে। আশা করি দু’একদিনের মধ্যে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবার মান ও গতি আরও বাড়বে। সকলের জন্য সারা দেশে দ্রুত ইন্টারনেট সেবা চালুর দাবি জানিয়েছেন গ্রাহক অধিকার নিয়ে সোচ্চার সংগঠন বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশন। গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংগঠনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ১৩ কোটি ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সঙ্গে ইন্টারনেট সুবিধাভোগী আরও ৫ কোটি গ্রাহক ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এ ছাড়া ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্পকারখানা, চিকিৎসা, শিক্ষা, ব্যাংক-বীমা, সফটওয়্যার শিল্পে ধস নেমেছে। একইভাবে টেলিযোগাযোগ শিল্পে ৩০ শতাংশ ব্যবসা কমেছে। সরকারি সকল ইউটিলিটি গ্রাহকদের বিশেষ করে গ্যাস, বিদ্যুৎ, সুপেয় পানি, এটিএম বুথে টাকা উত্তোলন, মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় ব্যাপক বিপর্যয় নেমে এসেছে। সবমিলিয়ে দৈনিক গ্রাহকদের ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। সেই সঙ্গে ইন্টারনেটের সকল এক্সেস ব্যবহার করা যায় সেই ব্যবস্থা সরকারকে করতে হবে। মনে রাখতে হবে ইন্টারনেট এখন শুধু কথা বলার জন্য না। এই মাধ্যম এখন আন্তর্জাতিকভাবে জাতিসংঘ ঘোষিত মৌলিক মানবাধিকার।

বাংলাদেশ সময়: ৭:০২:০৩   ৬৩ বার পঠিত  




প্রধান সংবাদ’র আরও খবর


আয়নাঘরের আদ্যোপান্ত: পর্ব: ৪
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ১ মাস চ্যালেঞ্জ-ষড়যন্ত্র সামলে সংস্কারের সূচনা
সাবেক ভূমিমন্ত্রীসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা
সাবেক ভূমিমন্ত্রীসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর হলেন তাজুল ইসলাম
নিম্ন আদালত মনিটরিংয়ের দায়িত্বে হাইকোর্টের ১৩ বিচারপতি
ভারতের সশস্ত্রবাহিনীকে প্রস্তুত থাকতে বললেন রাজনাথ
আয়নাঘরের আদ্যোপান্ত: পর্ব: ৩
এস আলম ও তার জামাতা বেলালসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা
দুদকের অভিযান শিগগির রিসোর্টে শতকোটি টাকার বিনিয়োগ আজিজের

Law News24.com News Archive

আর্কাইভ