বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) পরীক্ষাসহ গত ১২ বছরে ৩০টি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) তিন কর্মকর্তা ও সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলীসহ ১৭ জন। তাদের বিরুদ্ধে পিএসসির ২০২৩-আইনের ১১ ও ১৫ ধারায় মামলা হয়েছে। এই আইনে অভিযোগ প্রমাণিত হলে আসামিদের ১০ বছর পর্যন্ত সর্বোচ্চ শাস্তি হতে পারে।
মঙ্গলবার (৯ জুলাই) বিকেলে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সাংবাদিকদের এ কথা জানান রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মো. হেমায়েত উদ্দিন খান হিরণ।
তিনি বলেন, ‘আদালত সাত আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করছেন। বাকিদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। মামলার সঠিক তদন্ত হলে এর সঙ্গে জড়িত আরও অনেকে গ্রেপ্তার হবেন।’
এদিকে, আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহাম্মদের দাবি, গেল রোববার ১৭ জনকে আটক করা হলেও আজ কেন আদালতে হাজির করা হল? আটকের ৪৮ ঘণ্টা পর আদালতে হাজির করা সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘন।
তিনি অভিযোগ করেন, আসামিদের হেফাজতে রেখে মারধর করে জবানবন্দি দিতে আনা হয়েছে। আমরা আদালতকে এসব বিষয়ে জানিয়েছি।
তবে আসামিদের ৪৮ ঘণ্টার পর আদালতে তোলার দাবি সত্য নয় বলে জানিয়েছেন হেমায়েত উদ্দিন খান হিরণ। তিনি বলেন, ‘আসামিদের গতকাল গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এতে আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি।’
এর আগে দুপুরে প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে রাজধানীর পল্টন থানায় করা মামলায় গ্রেপ্তার ১৭ আসামিকে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। এদের মধ্যে পিএসসির সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলীসহ সাত আসামি স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে সম্মত হন। পরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সাইবার ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড অপারেশনের অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার জুয়েল চাকমা তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করার আবেদন করেন।
এছাড়া অপর ১০ আসামিকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন তিনি। পরে ১০ আসামির জামিন চেয়ে আবেদন করেন আইনজীবীরা। আলাদা সাত ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তাদের জবানবন্দি রেকর্ড হচ্ছে।
অন্যদিকে, রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত ১০ আসামির জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিতে সম্মত হওয়া সাত আসামি হলেন: পিএসসির সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী, অফিস সহায়ক খলিলুর রহমান, অফিস সহায়ক (ডিসপাস) সাজেদুল ইসলাম, ব্যবসায়ী আবু সোলায়মান মো. সোহেল, ব্যবসায়ী সহোদর সাখাওয়াত হোসেন ও সায়েম হোসেন এবং বেকার যুবক লিটন সরকার।
কারাগারে পাঠানো ১০ আসামি হলেন: পিএসসির উপপরিচালক মো. আবু জাফর ও মো. জাহাঙ্গীর আলম, সহকারী পরিচালক মো. আলমগীর কবির, নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের নিরাপত্তা প্রহরী শাহাদাত হোসেন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিকেল টেকনিশিয়ান মো. নিয়ামুন হাসান, নোমান সিদ্দিকী, প্রিয়নাথ রায়, মো. জাহিদুল ইসলাম, মো. মামুনুর রশীদ এবং সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়াম।
বিসিএসের প্রশ্নফাঁস নিয়ে পিএসসির বিরুদ্ধে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল টুয়েন্টিফোরের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের পর ফেসবুকে সৈয়দ আবেদ আলীর পোস্টগুলো ভাইরাল হতে থাকে। এ ঘটনায় সোমবার (৮ জুলাই) রাতে পুলিশ বাদী হয়ে পল্টন মডেল থানায় বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন আইনে মামলা করে। মামলায় ১৭ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ৩:৫৩:০০ ৫৭ বার পঠিত