কলকাতায় খুন হওয়া ঝিনাইদহের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার একটি হত্যা মামলায় রাজনৈতিক বিবেচনায় অব্যাহতি পেয়েছেন। ২০০৭ সালে সহযোগীদের নিয়ে ভারতে বসে চুয়াডাঙ্গার দর্শনার স্বর্ণ চোরাকারবারি সাইফুল ইসলামকে খুনের পরিকল্পনা করেছিলেন তিনি। পরে ২০১২ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে আজীমকে ওই মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
আজীম নিহতের পর সাইফুল খুনের মামলায় তাঁর আসামি থাকার বিষয় নিয়ে চুয়াডাঙ্গায় নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। সূত্র জানায়, ভারতে করা পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০০৭ সালের ১ মে দর্শনার নিজ গ্রাম শ্যামপুরে সাইফুলকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তিনি সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসার আড়ালে স্বর্ণ চোরাকারবার করতেন।
পুলিশের তদন্তে উঠে আসে, চোরাকারবারে সাইফুলের সহযোগী ছিলেন শ্যামপুরের ইউসুফ আলী, মোবারক পাড়ার বর্তমানে দামুড়হুদা উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মান্নান, দর্শনা পৌর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আসলাম আলী তোতা, বাংলা ও ইসলাম বাজারের সন্টু। তারা ঝিনাইদহের পরিতোষ চক্রবর্তী, আনোয়ারুল আজীম, জীবননগরের নজরুল ইসলাম, কুষ্টিয়ার ফারুকুজ্জামান ও ভারতের বিজন হালদারের স্বর্ণ পাচার করতেন।
তাদের মধ্যে আজীম তখন কালীগঞ্জ পৌরসভার কমিশনার ছিলেন। চোরাচালানের টাকার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে মান্নান ও সাইফুলের দ্বন্দ্ব হলে আজীম, পরিতোষ ও বিজন হালদার দর্শনায় সাইফুলের অফিসে বসে মিটিয়ে দেন। কিন্তু পরে মান্নানকে বাদ দিয়ে কারবার করতে থাকেন সাইফুল। অবশ্য মান্নানও বসে থাকেননি। নিজে প্রতিষ্ঠান খুলে সহযোগীদের নিয়ে স্বর্ণ চোরাচালানে নামেন।
২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারি হলে সাইফুল কারবারের মূল সিন্ডিকেটকে জানিয়ে দেন– তিনি আর এসবে নেই। তখন আজীমসহ ওই সিন্ডিকেটের সদস্যরা মান্নানের সঙ্গে যুক্ত হন। ২০০৭ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি তাদের প্রায় ১৩ কেজি স্বর্ণের একটি চালান লোকনাথপুর থেকে জব্দ করে তৎকালীন বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি)। পরে স্বর্ণের মূল মালিকরা খোঁজ করে নিশ্চিত হন– চালানটি ধরিয়ে দেন সাইফুল। এর পরই কলকাতার রাজা গেস্ট হাউসে আজীমসহ কয়েকজন বৈঠক করে সাইফুলকে চিরতরে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
তদন্তসংশ্লিষ্টরা জানান, খুনের দায়িত্ব দেওয়া হয় কুষ্টিয়ার তৎকালীন চরমপন্থি নেতা আমিনুর রহমান ওরফে আমিনুল ইসলাম ওরফে মুকুল ও শাহীন রুমিকে। সাইফুলকে চিনতে খুনিদের সহায়তা করেন মান্নান। হত্যার কাজে ঢাকার নিউ ইস্কাটন থেকে একটি নতুন মোটরসাইকেল কিনে দর্শনা আনা হয়। ২০০৭ সালের ১ মে সন্ধ্যায় ওই মোটরসাইকেলে গিয়েই সাইফুলকে হত্যা করে ভাড়াটে খুনিরা।
নিহতের ভাই ইমদাদুল ইসলাম দামুড়হুদা থানায় মামলা করেন। পুলিশ আজীমসহ ১৯ জনকে অভিযুক্ত করে ২০০৮ সালের অক্টোবরে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। এর পর ২০১২ সালে রাজনৈতিক মামলা বিবেচনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে আজীমসহ ছয় আসামি অব্যাহতি পান।
গত ১২ মে কলকাতায় গিয়ে ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আজীম খুন হলেও, জানাজানি হয় প্রায় ১০ দিন পর। এ ঘটনায় কলকাতায় হত্যা এবং ঢাকার শেরেবাংলা নগরে অপহরণ মামলা হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতা সাইদুল করিম মিন্টু ও কামাল গিয়াস বাবুসহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি।
তদন্তের শুরুতে এমপি আজীম হত্যা ধীরে ধীরে রাজনীতির দিকে মোড় নিয়েছে। নিহতের পরিবারেরও দাবি, রাজনৈতিক বিরোধে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।
বাংলাদেশ সময়: ০:১৮:১১ ৭৮ বার পঠিত #আনোয়ারুল আজীম আনার #চোরাচালান #সংসদ সদস্য