তদন্ত পর্যায়ে পাওয়া যায় না স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির কপি। এখন এ বিষয়ের উপর চলা একটি মামলা হাইকোর্টে নিষ্পত্তির জন্য বৃহত্তর বেঞ্চ গঠন করে দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। বেঞ্চের প্রধান করা হয়েছে বিচারপতি নাইমা হায়দারকে।
বেঞ্চের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিন। বৃহত্তর বেঞ্চ গঠনের বিষয়টি জানিয়েছেন আসামির আইনজীবী মো. শিশির মনির। তিনি বলেন, বেঞ্চ সুবিধাজনক সময়ে শুনানির দিন ধার্য করবেন।
প্রসঙ্গত ফৌজদারি মামলায় গ্রেপ্তারকৃত অনেক আসামি জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে থাকেন। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় এই জবানবন্দি রেকর্ড করা হলেও মামলার তদন্ত পর্যায়ের সত্যায়িত অনুলিপি দেওয়া হয় না আসামি পক্ষকে। তবে আসামির জামিন শুনানির সময় এই জবানবন্দির কপির প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। তদন্তকালীন সময়ে আসামি পক্ষ জবানবন্দির অনুলিপি পাবে কিনা তা নিয়ে উত্থাপিত আইনগত প্রশ্ন নিষ্পত্তিতে বৃহত্তর বেঞ্চ গঠনের জন্য প্রধান বিচারপতিকে অনুরোধ জানান। বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি একেএম রবিউল হাসানের দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চ
গত এপ্রিল মাসে এই অনুরোধ জানান। একইসঙ্গে এ সংক্রান্ত হত্যা মামলার নথি প্রধান বিচারপতির দপ্তরে পাঠানো হয়।
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অন্তবর্তীকালীন জামিন শুনানির সময় প্রায়শই রাষ্ট্রপক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয় যে, আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রয়েছে। তদন্তের এই পর্যায়ে জামিন দেওয়া ঠিক হবে না। তখন আসামি পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, জবানবন্দিতে কি আছে সেটা আমরা দেখতে চাই। জবানবন্দির কপি আদালতে দাখিল করা হোক। কিন্তু তদন্তের স্বার্থে এই জবানবন্দির কপি কখনো আনুষ্ঠানিকভাবে আসামি পক্ষকে দেওয়া হয় না। তবে আদালত চাইলে তখন রাষ্ট্রপক্ষ থেকে কপি বিচারকের সামনে পেশ করা হয়।
প্রসঙ্গত, জমিতে সীমানা পিলার স্থাপন নিয়ে হামলায় একজনের মারা যাওয়ার ঘটনায় ২০২০ সালের ৮ জুলাই কুমিল্লার লাকসাম থানায় মামলা করেন পারুল বেগম। মামলার এজাহারে ৬ জনের নাম উল্লেখসহ ৪ থেকে ৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। ওই মামলার আসামি লিংকন ও লিপন পাটোয়ারীকে ওই বছরের ১৫ অক্টোবর গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওইদিনই আসামি লিপনকে আদালতে হাজির করলে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এই জবানবন্দির সত্যায়িত অনুলিপি চেয়ে কুমিল্লার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৬ নম্বর আমলি আদালতে আবেদন করে আসামি পক্ষ। বিচারক বেগম শারমিন রীমা আবেদনটি খারিজ করে দেন। খারিজ আদেশে বলা হয়, মামলাটি তদন্তাধীন। দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গোপনীয় বিষয়। এ পর্যায়ে ওই জবানবন্দির নকল সরবরাহ করা হলে তদন্ত ব্যহত হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
এই আদেশের বিরুদ্ধে কুমিল্লার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে রিভিশন মামলা করেন আসামি। ২০২১ সালের ১২ জানুয়ারি আবেদন খারিজ করে দেন জেলা ও দায়রা জজ মো. আতাবুল্লাহ। ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের আদেশ বহাল রেখে খারিজ আদেশে তিনি বলেন, মামলারটির তদন্ত প্রতিবেদন এখনও দাখিল হয়নি। সাক্ষ্য আইন অনুযায়ী এটা পাবলিক ডকুমেন্টস। যেহেতু তদন্ত চলমান। এখন দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির অনুলিপি দেওয়া হলে তদন্ত কাজ ব্যহত হতে পারে।
নিম্ন আদালতের এই আদেশ বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন আসামি লিপন। ওই বছরের ৯ মার্চ ওই আদেশ কেন বাতিল করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চ।
সম্প্রতি ওই রুল শুনানির জন্য বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুসের নেতৃত্বাধীন দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চের কার্যতালিকায় আসে। রুলের উপর আসামি ও রাষ্ট্রপক্ষ থেকে শুনানি করা হয়। শুনানিতে উঠে আসে যে, হাইকোর্টের রায় রয়েছে তদন্ত পর্যায়ে আসামির জবানবন্দি দেওয়া যাবে না। তখন রুলটি হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চে নিষ্পত্তির জন্য প্রধান বিচারপতিকে অনুরোধ জানানো হয়।
এ সম্পর্কে আসামি পক্ষের কৌসুলি আইনজীবী মো. শিশির মনির বলেন, আমার আসামি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। ওই জবানবন্দির কপি ছাড়া তো জামিন শুনানি করা যায় না। তিনি বলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে জবানবন্দির কপি আদালত থেকে দেওয়া হয় না। তবে আন অফিসিয়ালি পাওয়া যায়। তবে সেটা ব্যবহারের সুযোগ নাই। এজন্য আইনগতভাবে যাতে এই কপি আসামি পক্ষ পেতে পারে সেজন্য মামলাটি করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩:০৮:২৩ ৬৭ বার পঠিত