মাদক মামলায় যুবলীগ নেতা নাজমুল হাসানের পরিবর্তে মিরাজুল ইসলামের সাজা খাটার ঘটনায় সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে শাহবাগ থানায় মামলা করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। রায়ে যুবলীগ নেতা নাজমুল হাসান, সাজা খাটা মিরাজুল ইসলাম ও এফিডেভিটকারী ফরিদের নামে মামলা করতে নির্দেশ দেয়া হয়।
একই সঙ্গে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডিকে এ বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এধরনের ঘটনা যেন আর না ঘটে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
আদালতে আসামি উপস্থাপন করা হলে তাদের পরিচয় যাচাই-বাছাইয়ের জন্য দেশের সব অধস্তন আদালতের বিচারকদের প্রতি নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট।
রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, আসামি গ্রহণের সময় উন্নত বিশ্বের মত চোখের আইরিশ, ফিঙ্গার প্রিন্টসহ বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করতে হবে। মামলা গ্রহণ বা আসামিদের জামিন আবেদন করার ক্ষেত্রে মক্কেলের পরিচয় ভাল করে সনাক্ত করতে আইনজীবীদের প্রতি নির্দেশনা দেয়া হয়।
এ সংক্রান্ত বিষয়ে শুনানি নিয়ে সোমবার (২০ মে) বিচারপতি আশরাফুল কামালের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন ।
সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী মনজিল মোরশেদ এ কথা জানিয়েছেন।
২০২০ সালের আগস্ট মাসে উত্তরার একটি বাসায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ ফেনসিডিল ও গাঁজাসহ আনোয়ার হোসেন নামে একজনকে আটক করে। তবে পালিয়ে যান চক্রের মূলহোতা যুবলীগ নেতা নাজমুল হাসান।
এ ঘটনায় দুজনকে আসামি করে মামলা করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। বিচারে অপরাধ প্রমাণ হওয়ায় পলাতক নাজমুল হাসানকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত।
নাজমুল ঢাকার উত্তরার ৫৪ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের নেতা। কিন্তু এ পরিচয়ে আদালতে আত্মসমর্পণ করে যিনি জেল খেটেছেন, তার প্রকৃত নাম মিরাজুল ইসলাম। গণমাধ্যমে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত সংবাদ হাইকোর্টের নজরে আনেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট মনজিল মোরশেদ।
এ বিষয়ে অ্যাডভোকেট মনজিল মোরশেদ বলেন, আসামি টাকা দিয়ে অন্যকে দিয়ে জেল খাটায় এবং আইনি সব প্রক্রিয়ায় তাকে দিয়ে ফেস করায় যাতে তার কোনো সমস্যা না হয়। এ রকম একটা ঘটনা ঘটেছে নাজমুল নামের এক আসামির ক্ষেত্রে। তার সাত বছর সাজা হওয়ার পর সে মিরাজুলের সঙ্গে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে চুক্তি করেন। তাকে সেখানে আত্মসমর্পণ করান। এরপর তিনি জামিন নেন, জামিন শুনানি আপিলে আসে।
মনজিল মোরশেদ বলেন, আজ রায় ছিল। ঘটনাটি পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার পর বিষয়টি নজরে আসে। পরে তা আদালতে বলা হয়। আদালত তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। সেই সঙ্গে আগামী ২৫ তারিখ তদন্তের রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে।
এ ধরনের ঘটনা কীভাবে রোধ করা যায়? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ ধরনের ঘটনা আগেও ঘটেছে। আদালত যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছেন। তবে এটি চূড়ান্তভাবে যদি বন্ধ করতে হয় সেক্ষেত্রে আমি বলবো এটার একমাত্র উপায় হলো প্রত্যেক জেলখানা ডিজিটালাইজড করা। প্রত্যেক আসামি ঢোকার সময় ফিঙ্গার দিয়ে ঢুকবে যাতে তার এনআইডির সঙ্গে তথ্য যাচাই করা যায়।
বাংলাদেশ সময়: ১৭:৫২:৫৪ ১৮০ বার পঠিত