২০০৬ সালে হবিগঞ্জের এক ধর্ষণ মামলার আসামিকে বিচারিক আদালতে দেওয়া খালাসের রায় বাতিল করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এছাড়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১৩ ধারা অনুসারে ধর্ষণের পর জন্ম নেওয়া শিশুর ভরণ-পোষণের ব্যয়ভার বহনের নির্দেশ দেওয়া হয়।
মঙ্গলবার বিচারিক আদালতের রায় বাতিল চেয়ে বাদীর (ভিকটিম) করা আবেদনের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি মো. রেজাউল হাসান ও বিচারপতি ফাহমিদা কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দি
ন মানিক ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল শরীফুজ্জামান মজুমদার। আবেদনকারী ভিকটিমের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. আমিনুল ইসলাম। আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. আক্তারুজ্জামান।
এজাহারসূত্রে জানা যায়, বিয়ের কথা বলে ভিকটিমকে হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের টিলাগাঁও এলাকার ছিদ্দিক আলীর ছেলে কাছুম আলী ধর্ষণ করেন। ২০০৫ সালের ৫ ডিসেম্বর হবিগঞ্জ সেন্ট্রাল হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে টেস্ট করান তিনি। টেস্টে গর্ভে সন্তান থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হন। গর্ভধারণের পর কাছুম আলী তাকে বিয়ে করতে অস্বীকার করে। এরপর ২০০৬ সালের ২১ জুলাই কাছেম আলীর বিরুদ্ধে মামলা করেন তিনি। এর মধ্যে ভিকটিম একটি সন্তানের জন্ম দেন।
ওই মামলার চূড়ান্ত শুনানি শেষে হবিগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক জিয়া উদ্দিন মাহমুদ আসামিকে খালাস দেন। এ রায় বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন ভিকটিম। ওই আবেদনের পর হাইকোর্ট রুল জারি করেন। মঙ্গলবার সেই রুল মঞ্জুর করেন হাইকোর্ট।
একেএম আমিন উদ্দিন মানিক জানান, আসামিপক্ষ স্থানীয়ভাবে আপোষের কথা বলে। এরপর অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ না হওয়ার কথা বলে হবিগঞ্জে নারী ও শিশু দমন ট্রাইবুনাল- ২ আসামিকে খালাস দেন। সেই রায়ের বিরুদ্ধে ভিকটিম হাইকোর্টে ফৌজদারি কার্যবিধি ৫৬১-এ ধারায় আবেদন করে। হাইকোর্ট ২০২১ সালের ৩০মে রুল জারি করেন এবং নিম্ন আদালতের নথি তলব করেন। হাইকোর্ট রুল শুনানি শেষে বিচারিক আদালতের রায় বাতিল এবং আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। পাশাপাশি একলাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৬ মাসের কারাদণ্ড দেন। আর ভিকটিমের সন্তানের লালনপালন করার বিষয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ১৩ ধারা মোতাবেক নির্দেশনা দিয়েছেন।
আইনের ১৩ (১) ধারায় বলা হয়েছে, অন্য কোনো আইনে ভিন্নতর যাহা কিছুই থাকুক না কেন, ধর্ষণের কারণে কোন সন্তান জন্মলাভ করিলে-(ক) উক্ত সন্তানকে তাহার মাতা কিংবা তাহার মাতৃকুলীয় আত্মীয় স্বজনের তত্ত্বাবধানে রাখা যাইবে; (খ) উক্ত সন্তান তাহার পিতা বা মাতা, কিংবা উভয়ের পরিচয়ে পরিচিত হইবার অধিকারী হইবে; (গ) উক্ত সন্তানের ভরণপোষণের ব্যয় রাষ্ট্র বহন করিবে; (ঘ) উক্ত সন্তানের ভরণপোষণের ব্যয় তাহার বয়স একুশ বৎসর পূর্তি না হওয়া পর্যন্ত প্রদেয় হইবে, তবে একুশ বৎসরের অধিক বয়স্ক কন্যা সন্তানের ক্ষেত্রে তাহার বিবাহ না হওয়া পর্যন্ত এবং পঙ্গু সন্তানের ক্ষেত্রে তিনি স্বীয় ভরণপোষণের যোগ্যতা অর্জন না করা পর্যন্ত প্রদেয় হইবে। (২) সরকার বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে উপধারা (১) এ উল্লিখিত সন্তানের ভরণপোষণ বাবদ প্রদেয় অর্থের পরিমাণ নির্ধারণ করিবে।
(৩) এই ধারার অধীন কোন সন্তানকে ভরণপোষণের জন্য প্রদেয় অর্থ সরকার ধর্ষকের নিকট হইতে আদায় করিতে পারিবে এবং ধর্ষকের বিদ্যমান সম্পদ হইতে উক্ত অর্থ আদায় করা সম্ভব না হইলে, ভবিষ্যতে তিনি যে সম্পদের মালিক বা অধিকারী হইবেন সেই সম্পদ হইতে উহা আদায়যোগ্য হইবে।
বাংলাদেশ সময়: ২১:৪৪:০৮ ১৪৭ বার পঠিত