শরিফুল ইসলাম নাটোরের সিংড়ার বাসিন্দা। ২২ বছর বয়সের এই যুবক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের একজন নারী শিক্ষক সেজে ভুয়া ফেসবুক আইডি খোলেন। সেই আইডি থেকে ৫৯ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খুলনার বাসিন্দা মোমিনুল ইসলামকে বন্ধুত্বের অনুরোধ পাঠান। বন্ধুত্বের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আসামি তার মায়ের চিকিৎসা ও দাফন এবং ব্যবসায়িক অংশীদার করার প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন সময়ে ছয় লাখ টাকা হাতিয়ে নেন।
পরে ওই কর্মকর্তা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন ডা. ফতিমাতুজ জোহরা (সনি) নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের কোনো শিক্ষক নেই। এরপরই খুলনার সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন ওই ব্যক্তি। এই মামলায় আগাম জামিন নিতে হাইকোর্টে আসেন আসামি শরিফুল। আদালত তাকে জামিন না দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেন।
মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি মো. বশির উল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
আদালত বলেন, এ ধরনের প্রতারক চক্র সারা দেশেই সক্রিয়। এরা কোনোভাবেই যেন আইনের ফাঁক ফোকর দিয়ে বেরিয়ে যেতে না পারে সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। যখনই এ ধরনের প্রতারক চক্র আদালতের আওতায় আসবে তখনই তাদেরকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সোপর্দ করা হবে।
উচ্চ আদালতের এই আদেশের পরই প্রতারক চক্রের অন্যতম হোতা শরিফুলকে নিজেদের হেফাজতে নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এ প্রসঙ্গে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কেএম মাসুদ রুমি বলেন, নানা প্রলোভন ও মিথ্যা কথা বলে বাদীর কাছ থেকে ছয় লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে আসামি। এই পুরো টাকাটাই নগদ ও বিকাশ ছাড়াও আসামির ইসলামী ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে গেছে। আদালতে আসামি এটাও স্বীকার করেছেন, ওই ব্যাংক অ্যাকাউন্টটি তার নিজের। আসামি পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন আইনজীবী হীরামতি খানম।
মামলার বিবরণে জানা যায়, প্রতারক চক্রের ফাঁদে পড়ে ছয় লাখ টাকা খুইয়ে ২০২২ সালের ২০ জুন খুলনার সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন মোমিনুল ইসলাম।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০২২ সালের ২৬ মে ড. ফতিমাতুজ জোহরা নামে ভুয়া ফেসবুক আইডি খুলে তা থেকে মোমিনুল ইসলামের আইডিতে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠান শরিফুল ইসলাম। ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট গ্রহণ করার পর ওই বছরের ৩১ মে আসামি ভুয়া ফেসবুক মেসেঞ্জারে জানান, তার মা গুরুতর অসুস্থ। চিকিৎসার জন্য ৫ হাজার টাকা প্রয়োজন। এজন্য একটি বিকাশ নম্বরও দেওয়া হয়। বলা হয়, এই নম্বরটির ব্যক্তি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবনে চাকরি করেন।
পরে আসামির অনুরোধে ওই নম্বরে তিনি টাকা পাঠান। ওইদিন রাতে আসামি মোবাইলে বাদীকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। বলেন, তার স্বামী সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। গুলশানে তার বাবার দুইতলা বাড়ি ও তিন কাঠার প্লট রয়েছে। ধানমন্ডিতে নিজের একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। এছাড়া একটি কোম্পানিতে পরিচালকের পদসহ অর্থ বিনিয়োগের প্রস্তাব করেন ভুক্তভোগীকে। ওই প্রস্তাবে বাদী রাজি হন। একই বছরের ১ জুন আসামি জানান তার মা মারা গেছেন। দাফনের জন্য ৮০ হাজার টাকা দরকার। বাদী রাজি হয়ে নগদ ও বিকাশের দুটি নম্বরে টাকা পাঠান। পরদিন ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানির পরিচালকের পদ পেতে হলে বাদীকে সাড়ে ৫ লাখ টাকা দিতে হবে বলেও প্রস্তাব দেন আসামি। বাদী আসামি শরিফুলের রাজশাহীর ইসলামী ব্যাংকের শাখায় ওই টাকা পাঠিয়ে দেন।
এরপর ওই কোম্পানির চুক্তিপত্রে স্বাক্ষরের জন্য তাকে ঢাকায় আসতে বলা হয়। ৬ জুন ঢাকায় গিয়ে আসামিকে উল্লিখিত ঠিকানায় না পেয়ে মোবাইলে কল করেন। কিন্তু মোবাইল নম্বরগুলো বন্ধ পাওয়া যায়। দ্বিতীয় বার কল করলে একজন লোক বলেন, আমরা ড. জোহরাকে অপহরণ করেছি। ২০ লাখ টাকা দিলে ছেড়ে দেব। বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করেন বাদী।
ঘটনাটি নিয়ে সন্দেহ হলে ৭ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগে গিয়ে ওই নামের নারী শিক্ষকের খোঁজ করেন। কিন্তু বিভাগ থেকে জানতে পারেন, ওই নামে এবং ওই পদবির কোনো নারী শিক্ষক সেখানে নেই। এরপরই তিনি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন। মামলায় তিনি বলেন, এই প্রতারক চক্রে নারী ও পুরুষসহ ৭জন জড়িত রয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১:১১:৩৬ ১৭২ বার পঠিত