ঢাকা মহানগরীর বিদ্যমান সব মাঠ ও পার্কের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রস্তুত এবং সর্বসাধারণের প্রবেশাধিকার নিশ্চিতের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে অনতিবিলম্বে পার্ক ও খেলার মাঠে বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ এবং বিদ্যমান পার্ক ও খেলার মাঠে সর্বসাধারণের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এবং গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীকে এ আদেশ পালন করে ছয় মাসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
আদালতে রিটকারী বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মিনহাজুল হক চৌধুরী, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী এস. হাসানুল বান্না।
রুলে জনসাধারণের ব্যবহার্য পার্ক ও খেলার মাঠে বাণিজ্যিকীকরণ, অননুমোদিত স্থাপনা নির্মাণ, পার্ক ও খেলার মাঠ বিরুদ্ধ ব্যবহার, শ্রেণি পরিবর্তন এবং দখল সংবিধান ও প্রচলিত আইনের পরিপন্থি হওয়ায় কেন তা বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনার (ড্যাপ) প্রস্তাবনা অনুযায়ী পর্যাপ্ত পার্ক ও খেলার মাঠের ব্যবস্থা করার নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না সে বিষয়েও ব্যাখ্যা চেয়েছেন।
এছাড়াও রুলে মহানগরীর পার্ক ও খেলার মাঠে বাণিজ্যিকীকরণ বন্ধ, শ্রেণি পরিবর্তন ও বিরুদ্ধ ব্যবহাররোধ এবং বিদ্যমান সব স্থাপনা উচ্ছেদ করে পার্ক ও খেলার মাঠ পুনরুদ্ধারের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না তাও জানতে চেয়েছেন আদালত। চার সপ্তাহের মধ্যে গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন সচিব, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার, গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী এবং প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদকে রুলের জবাব দিতে নির্দেশ বলা হয়েছে।
বেলার পক্ষ থেকে জানানো হয়, ১৫২৮ বর্গকিলোমিটার (৫৯০ বর্গমাইল) আয়তন বিশিষ্ট দেশের ঢাকা মহানগরী ১৬ মিলিয়ন লোকের আবাসভূমি। প্রাচ্যের ভেনিস হিসেবে খ্যাত এ মহানগরী বর্তমানে বিশ্বের বসবাস অযোগ্য নগরীর পরিচয় গ্রহণ করেছে। অপরিকল্পিতভাবে দ্রুত প্রসারিত মেগাসিটিগুলোর মধ্যে বর্তমানে ঢাকা অন্যতম। অপরিকল্পিত নগরায়ণ গ্রাস করছে এ নগরীর পার্ক ও খেলার মাঠের মতো নাগরিক সুবিধাদি। নগর-পরিকল্পনাবিদদের মতে, একটি আধুনিক শহরে প্রতি আধা বর্গকিলোমিটার এলাকার জন্য একটি করে খেলার মাঠ প্রয়োজন।
ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের আয়তন ৩০৫ দশমিক ৪৭ বর্গকিলোমিটার। আয়তন বিবেচনায় দুই করপোরেশনে খেলার মাঠ দরকার অন্তত ৬১০টি, রয়েছে মাত্র ২৩৫টি যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় ১২৯টি ওয়ার্ড থাকলেও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় (ড্যাপ) উল্লেখ রয়েছে যে ৪১টি ওয়ার্ডে কোনো খেলার মাঠ নেই। ফলশ্রুতিতে ঢাকার মোট জনসংখ্যার ২৭ দশমিক ৮২ শতাংশ তরুণ খেলার মাঠের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
বিভিন্ন সময় প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৭৫টি ওয়ার্ডে পার্ক বা উদ্যান রয়েছে মাত্র ২৭টি। এর মধ্যে ৬টি পার্ক বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ইজারা দেওয়া হয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৫৪টি ওয়ার্ডে পার্ক রয়েছে মাত্র ২৩টি। বিদ্যমান এসব পার্ক ও খেলার মাঠের অধিকাংশেই নেই সর্বসাধারণের প্রবেশাধিকার। ফলশ্রুতিতে নাগরিকরা বঞ্চিত হচ্ছে নির্মল বায়ু সেবন, ব্যায়াম ও হাঁটা চলার অধিকার থেকে ও সর্বোপরি গাছপালা-প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সংযোগ স্থাপনের জরুরি সুযোগ থেকে। এ কারণে ঢাকা শহরের সব খেলার মাঠ ও পার্কগুলো রক্ষায় বেলা এ রিট আবেদন দায়ের করে।
বাংলাদেশ সময়: ২১:২৯:২৪ ১৬৫ বার পঠিত